মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে গত ২০ মার্চ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সারাদেশ। দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীর প্রতি সমবেদনা জানাতে খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশ, প্রতিবাদ সভা প্রভৃতি কর্মসূচি পালন করেছে এবং কর্মসূচি মূলত অব্যাহত আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন, মধুর ক্যান্টিন ও টিএসসির সামনে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। উত্তাল শাহবাগ এলাকাও। এছাড়া রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তনুর মৃত্যুতে নেমে আসে শোকের ছায়া। পিছিয়ে নেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। রাস্তায় নেমে আসে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে সবচেয়ে বেশি সমব্যথী তনু যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতো সেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা তনুর প্রতি ভালবাসা দেখিয়েছে নজিরবিহীন। বিচারের দাবিতে তনুর বাসা যেখানে সেখানকার অর্থাৎ কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন উষার নেতেৃত্বে লাগাতার কর্মসূচি চলতে থাকে। তনু নিজে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ বিতর্ক সোসাইটির (ভিসিডিএস) সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় ভিসিডিএস নানা কর্মসূচি পালন করে। নাটক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তনুর সংশ্লিষ্টতার কারণে দেশের নাট্যজগতেও প্রতিবাদের ঢেউ লাগে। দেশে-বিদেশে তনুর হত্যাকা- নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে তনুর সহপাঠীদের মধ্যে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে তা প্রশমিত করতে এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার খুবই জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল ওয়েলফেয়ার এন্ড রিসার্চের শিক্ষার্থীরা গত বৃহস্পতিবার এক মানববন্ধনে উচ্চারণ করেন রাষ্ট্রের উচিত তনুর খুনি-ধর্ষকদের বিচারের আওতায় এনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সামগ্রিকভাবে নিশ্চিত করা। রাজীব হায়দার নামে এক ঢাবি শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমরা আমাদের এই সহপাঠীর এই লোমহর্ষক হত্যাকা- মেনে নিতে পারছি না। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তারা আরও কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানান।’
সহপাঠীর হত্যার বিচারের দাবিতে ফেসবুকে নানা ছবি ও স্ট্যাটাস দেখে মনে হচ্ছে ব্যাপক নাড়া পড়েছে এই নারকীয় হত্যাকা-ে। ‘আমরা সবাই তনুর ভাই। তনু হত্যার বিচার চাই’সহ নানা শ্লোগানে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে ভার্চুয়াল জগতেও। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন ১৯৭১ সালের ধর্ষণের বিচার করতে পারলে, ক’দিন আগের ধর্ষকদের চিহ্নিত করা যাবে না। কেন?
এদিকে মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা তনু হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্দন করেছেন। উক্ত মানববন্দন থেকে তারা এই নারকীয় হত্যাকা-ের বিচার যাতে খুব দ্রুত হয় এবং আর কোনো শিক্ষার্থী বোনকে যেন হারাতে না হয় বলে সরকারের প্রতি দাবি জানান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী, বর্তমানে পীরযাত্রাপুর জোবেদা খাতুন কলেজের প্রভাষক মো. ইকবাল হোসেন জানান, তনু হত্যায় বিচার না হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক অবনতি হবে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সরকারের ভাবমূর্তি অনেক ক্ষুণœ হবে। তাই আমরা তনু হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করছি। এদিকে গত বুধবার তনুর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর পারিবারিক কবরস্থান থেকে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য তনুর লাশ তোলা হয়। কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তনুকে হত্যায় আগে ধর্ষণ করা হয়। গ্রামের শিক্ষার্থীদের তাদের বোনের মর্মস্পর্শী ও লোমহর্ষক পৈশাচিক হত্যাকা-ের বিচার দাবি করেছে। সোহাগী জাহান তনু দুর্বৃত্তদের হাতে জীবন দিয়েছে। তার সহপাঠীরা তনু হত্যায় বিচার এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। ঢাবি শিক্ষার্থী পালোয়ান রনি জানান, বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলতে দেয়া যায় না। তিনি দ্রুত অপরাধীদের খুঁজে বের করার জন্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান। একই দাবি রাবির শিক্ষার্থী হামিম হোসাইন, চবির শিক্ষার্থীর মিজানুর রহমানসহ শত-সহ¯্র সচেতন শিক্ষার্থীর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন