স্টাফ রিপোর্টার : প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল সকাল সোয়া ৮টায় উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। ১৯৫৭ সালে বরিশালের ইমামকাঠির বোয়ালিয়া গ্রামে তার জন্ম। তিনি স্ত্রী জয়সহ তিন ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন এবং বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পরিচালক সমিতি সূত্রে জানা যায়, গতকাল বাদ আসর বিএফডিসিতে নামাজে জানাজা শেষে তাকে রাজধানীর উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পার্কিন্সন রোগে ভুগছিলেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মুখগহŸরে মটর নিউরো ডিজিসে ভুগছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি তার কণ্ঠনালিতে একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হয়। সেখানকার বেলভিউ হাসপাতালের চিকিৎসকরা এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই বলে জানান। এরপর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। চলচ্চিত্রে খোকনের যাত্রা শুরু হয়েছিল অভিনেতা ও প্রযোজক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার সহকারী হিসেবে। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি সোহেল রানার সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। ‘রক্তের বন্দী’ চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্যদিয়ে পরিচালক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। তার চলচ্চিত্রের কুংফু অ্যাকশন, গল্পে নতুনত্ব, গান আর টানটান উত্তেজনা দর্শকের কাছে তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। আশির দশকের শুরুর দিকে নবাগত নায়ক রুবেলকে নিয়ে তার নির্মিত ‘লড়াকু’ সিনেমাটি ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। এরপর খোকন রুবেলকে নিয়েই নির্মাণ করেন ‘বীরপুরুষ’, ‘বজ্রমুষ্টি’, ‘বিপ্লব’, ‘উত্থান পতন’, ‘সন্ত্রাস’, ‘টপ রংবাজ’, ‘শত্রæ ভয়ংকর’, ‘অপহরণ’, ‘সতর্ক শয়তান’, ‘দুঃসাহস’, ‘লম্পট’, ‘রাক্ষস’, ‘যোদ্ধা’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘ঘাতক’, ‘ভÐ’, ‘নরপিশাচ’, ‘পাগলা ঘণ্টা’ ইত্যাদি। তার নির্মিত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল ‘চেহারা’। এতে অভিনয় করেছিলেন শাকিব ও রেসি। প্রয়াত বরেণ্য অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদিকে তিনিই বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে সফলভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছিলেন। নব্বই দশকের শেষদিকে কমেডি ঘরানার চলচ্চিত্র ‘ভÐ’ নির্মাণ করেও তিনি গতানুগতিক ধারাকে ভেঙে দিয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে সোহেল রানা বলেন, ‘খোকনের মৃত্যুর খবর শোনার পর আমার সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। কোথায় যাব, কী করব, না করব কিছুই ভাবতে পারছি না। আমার পা চলছে না। কারণ চোখের সামনে ভেসে উঠছে কলেজ পড়–য়া সেই যুবক ছেলেটির চেহারা। ওই বয়সে সে আমার কাছে এসেছিল। আমার সঙ্গে কাজ শুরু করেছিল। ১০টি বছর আমার সহকারী হিসেবে কাজ করেছিল এবং একজন পরিচালক হিসেবে নিজের মেধার পরিচয় দিয়ে আলোচনায় আসতে পেরেছিল। কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে এসে এতটা কষ্ট ভোগ করে তাকে মরতে হবে ভাবিনি কখনো। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাই তিনি যেন কাউকে এত কষ্ট না দেন। এটা সহ্য করা যায় না। আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন খোকনকে বেহেস্ত নসিব করেন।’ অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘আমাকে পুনরায় চলচ্চিত্রে নিয়ে এসেছিলেন খোকন ভাই। তার নির্দেশনায় অপহরণ, রাক্ষস, কমান্ডার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি আমি এবং প্রতিটি চলচ্চিত্রই বেশ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। তার কারণেই পরে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু এমন একটি রোগে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন যে, যার কোনো চিকিৎসা ছিল না। খোকন ভাই হয়তো শারীরিকভাবে জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে কিছু দিন বেঁচে ছিলেন, তবে সত্যিকারের খোকন ভাইকে আমরা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসিব করেন। তার পরিবারের সদস্যদের এই শোক সহ্য করার ক্ষমতা দিন।’ খোকনের নির্দেশনায় ‘ম্যাডাম ফুলি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই নায়িকা হিসেবে যাত্রা শুরু হয় সিমলার। প্রথম চলচ্চিত্রেই সিমলা অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সিমলা বলেন, ‘চলচ্চিত্রে অনেকেরই নিজের নামটি পরিবর্তিত হয়ে নতুন নামে যাত্রা শুরু হয়। মনে পড়ে পত্রিকায় নতুন নাম চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিলো এক মাস। কিন্তু তারপরও খোকন ভাই আমার নামটি পরিবর্তন করেননি। তিনি আমাকে সিমলা নামেই সবার সামনে তুলে ধরেন। খোকন ভাইকে আমার কষ্টের কথাগুলো বলতে পারলাম না। তার মতো এত আপনজন আর কেউই নেই আমার।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন