ভোলার শহরের চকবাজার, মনিহারী পট্টি ও খালপাড় সড়কে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টায় শতাধিক দোকান ঘর সম্পূর্ণ এবং অর্ধ শতাধিক আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। দমকল বিভাগের ৮টি ইউনিট প্রায় ৪ ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে গিয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যসহ ১৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সংবাদকর্মী বিল্লাল ও সংস্কৃতিককর্মী বাঁধন জানান, রাত পোনে ১টায় দিকে মহাজনপট্টি কৃষি ব্যাংক ভবনের ৪র্থ তলায় ডিশ কণ্টোল রুমে থাকা অবস্থায় তারা প্রথমে মনিহারী পট্টির একটি দোকানের সামনের অংশ ধুয়া উড়তে দেখে তাৎক্ষণিক ভোলা সদর থানায় ফোন করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের দোকানগুলোতে। প্রথমে ভোলা দমকল বিভাগের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ভোলার খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় তাদের কাজ বাধাগ্রস্থ হয়। আগুনের লেলিহান শিখা দ্রæত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মনিহারী পট্টির বিভিন্ন দোকানে রং, স্প্রীড বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পর্যায়ক্রমে ভোলার অন্যান্য উপজেলার সদরের দমকল বিভাগের আরো ৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভাতে চেষ্টা করে। খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দমকল বাহিনীর লোকজন ভোলা কোর্ট মসজিদ পুকুরের পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। দমকল বাহিনীর সাথে ভোলার জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মোকতার হোসেনের নেৃতত্বে পুলিশ বাহিনীর সদস্য, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সাধারণ জনগন আগুন নেভানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। তাদের প্রায় ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এরই মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখায় মনিহারীপট্টি, চকবাজার, খালপাড়ার সড়কের শতাধিক দোকান ভস্মিভূত হয়। এসময় আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয় অর্ধশতাধিক দোকানঘর। এতে প্রায় শত কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থদের সূত্রে জানা গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে গিয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যসহ ১৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। অনেকের ধারণা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আসনে ভোলা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগের সম্পাদক আলহাজ আবদুল মমিন টুলু, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হালিম, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ মোহাম্মদ ইউনুছসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মোকতার হোসেন বলেন, আমরা অগ্নিকান্ডের সংবাদ পেয়ে আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক বলেন, অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম তদারকি করছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করে সাধ্যমত সহায়তা করা হবে।
অক্ষত পবিত্র আল কোরআন : এসব স্থানে মাঝে মাঝে কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে । গত শুক্রবার গভীর রাতে এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সব পুড়ে কয়লা হয়ে গেলেও রহমতের আলো ছড়াচ্ছে আল্লাহ পাকের পবিত্র কোরআন। আল্লাহ তায়ালার কোরআন এর নিরাপত্তারক্ষী আল্লাহ নিজেই। এ ঘটনাই তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বেশ আলোচিত হয়েছে। আগুন নেভানোর শেষে সকাল বেলা যখন উদ্ধার কাজের তৎপরতা চলে ঠিক তখনই সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হওয়া মনিহারী পট্টির একটি দোকানে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কুরআন। অগ্নিকান্ডের লেলিহান শিখা পোড়াতে পারেনি মহাপবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন। ভস্মিভূত ছাইয়ের স্তূপ সরানোর সময় সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় এ পবিত্র গ্রন্থটি উদ্ধার করা হয়েছে। অনেকে ছবিটিকে ফেইসবুক পেইজে সংরক্ষণ করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন