যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। আগাম বন্যার শব্দ ধ্বনি হচ্ছে। পানি বৃদ্ধিও পাশাপাশি প্রবল ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। নদীকুলের ভাগ্যহত মানুষের বুকফাটা কান্না নিয়ে চাপ চাপ মাটি নদীর স্রোতে-ভাঙ্গনে মিশে যাচ্ছে বিলীন হচ্ছে যমুনা নদী বক্ষে । যমুনা নদীর পাবনা জেলা এই অংশে ভাঙ্গন প্রায় সব সময়ই থাকে। পানি বৃদ্ধি ও কমার সাথে ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ভাঙ্গন রোধে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ না নেওয়ায় জমি-জিরাত, হালের বলদ, গাছ-পালা সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কার্যত নদীকূলের মানুষ বন্যা-ভাঙ্গনে সব হারিয়ে পথের ফকির হয়ে গেছেন অনেকেই । এমন অনেকের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা এক সময় জোত-জমির মালিক ছিলেন, নদীর ভাঙ্গনে সব হারিয়ে রাজধানী ঢাকায় রিকশা চালায়, মুটে মজুরের কাজ করছেন। যারা লেখা পড়া জানে তারা কোন কোন কাজ করে জীবন নির্বাহ করছেন। এক সময় যাদের জমি-জিরাত সবই ছিল ,এখন তারা প্রান্তিক মানুষ । পাবনার বেড়ার উপজেলাধীন আমিনপুর থানা এলাকায় নগরবাড়ী ঘাট, কাজীরহাট রঘুনাথপুর, বেড়া থানাধীন নাকালিয়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন সংকুচিত পড়েছে। বেড়ার ভারেঙ্গা মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে বহু বছর আগেই। গত কয়েক বছর ধরে নগরবাড়ী ঘাটসহ আশপাশের এলাকার ব্যাপক ভাঙ্গন চলছে। ভাঙ্গনে নগরবাড়ী ফেরিঘাটসহ রঘুনাথপুর, প্রতাপপুর, মধুপুর, মুন্সিগঞ্জ, যদুপুর, শ্রীনিবাসদিয়া, খানপুরা, ঘোপসিলিন্দা, গনপতদিয়া, নটাখোলাসহ আশপাশের এলাকার প্রায় হাজার হাজার মানুষ গৃহহারা এখন। অপর দিকে , জেলার
সুজানগরের ৬টি ইউনিয়ন পদ্মা ও যমুনার সংযোগস্থলে দুই নদী ভাঙ্গনে মানুষজন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিনই ফসলী জমি,বাড়ী-ঘর, মসজিদ নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা-যমুনার সংযোগ স্থল পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া, মানিকহাট ও নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের শতশত ঘরবাড়ি, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলী জমি পদ্মার ইতোমধ্যেই
নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের হরিরামপুর, সিংহনগর, বিলমাদিয়া, মাহমুদপুর, রামকান্তপুর, কেশবপুর, শামিলপুর, ফকিতপুর, ইন্দ্রজিতপুর, সিন্দুরপুর, কন্দর্পপুর, চররাজপুর কাদিরপুর ও গ্রামসহ হাজার হাজার বিঘা ফসলী জমি ও গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কোন মতে মানচিত্রে টিকে আছে এই ৩ ইউনিয়ন। এই তিনটি ইউনিয়নও মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে আর বেশী দেরি নেই। পাবনার বেড়া উপজেলার পেঁচাকোলা, নগরবাড়ী, রঘুনাথপুর, কাজীরহাটে ভাঙ্গন অব্যাহত আছে। এই সব এলাকায় নদী ভাঙ্গন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে । যমুনা ও পদ্মা নদীর প্রবল ভয়াবহ ভাঙ্গনে নদী স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়ে ফেলেছে। নদ-নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, নদী স্বাভাবিক গতি পথ হারালে আগের চলার পথ খুঁজতে ভাঙ্গছে নদীর পার। এ ছাড়াও নদ-নদীর পানি হ্রাস- বৃদ্ধির ফলে নদী ভাঙ্গন তীব্র হয়ে উঠে। পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি ও অনিয়ম দুর্নীতির কারণে ভাঙ্গনরোধ স্থায়ী করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ শোনা যায়। জিও ব্যাগ ফেলাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বেড়া থানাধীন এলাকার মধ্যে যমুনা নদীর ভাঙ্গন রোধ করতে। কার্যত জিও পদ্ধতিতে নদী ভাঙ্গন রোধ সাময়িক ব্যবস্থা বলে অনেকে মনে করেন । আমিনপুর থানাধীন যমুনা নদীর অংশে এবং সুজানগরে পদ্মা-যমুনা মিলন এলাকা নিকটবর্তী এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধে কোন পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। অভিযোগ জিও ব্যাগ পদ্ধতিতে সাময়িক এই ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে ব্যাপক ফাঁকি-বাজি ও চুরি । কত ব্যাগ নদীতে ডাম্পিং করা হয়েছে; বালু ও সিমেন্ট মেশানোর পরিমাণ কত তা জানা যায় না। সিমেন্টের পরিমাণ কম এবং বালু বেশী হলে ওই ব্যাগ জমাট বাঁধবে না। উপরন্তু এক সময় ব্যাগ ফেটে বালু নদীতে মিশে যাবে। নদী গর্ভে সিমেন্ট বালুর বস্তা ফেলার পর তার গণনা করা অসম্ভব । দুর্নীতির মারপ্যাঁচ এখানেই বলে অনেকের অভিযোগ ।দেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্বেতহস্তী নামে পরিচিত লাভ করেছে বহুকাল আগেই। এই অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি বলে জানা গেছে। এই সব অভিযোগ অবশ্য কর্মকর্তারা আমলে নেন না এবং স্বীকার করেন না । সূত্র মতে, এখানে চাকুরী করা বিভিন্ন সময়ের প্রকৌশলীদের নামে-বেনামে সম্পদের হিসাব নিলে বেড়িয়ে পড়বে আসল চিত্র। অনেকের আয়ের সাথে ব্যয়ের কোন সঙ্গতি নেই । এই দপ্তরে চাকুরী করেন এমন অনেকের সম্পদের পরিমাণ নাকি হিমালয় পাহাড়ের চেয়েও উঁচু । অভিজ্ঞজনদের মতে, নদ-নদীর ভাঙ্গন রোধে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। নদী পয়স্তি ও সিকস্তি আইনেরও পরিবর্তন করার কথা বলছেন, অনেকে। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন আমলের এই আইন স্বাধীন বাংলা দেশের আইনের অনুকূলে আনা প্রয়োজন। যুক্তরাজ্যের নদী আমাদের দেশের মত ভাঙ্গে না। আমাদের নদ-নদীর ভাঙ্গন অব্যাহত । নদ-নদী পাড়ের জমি ভাঙ্গনে নদী গর্ভে গেলে সেটি সরকারি আবার জেগে উঠলেও সেই জমি খাস জমি হয়ে যায়। এর পরিবর্তন করে কল্যাণকর আইন প্রণীত হলে জমি হারা মানুষ তাদের মালিকানা ফিরে পেতে পারেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন