ডাক্তার আমাকে ফল খেতে বলেছেন। কিন্তু বিষাক্ত কেমিক্যালের ভয়ে আমি খাই না। পত্র-পত্রিকায় ফলফলাদিতে কেমিক্যালের অপব্যবহার নিয়ে যেসব খবর দেখি তাতে মনে হয়; ফল খাওয়া মানে বিষ খাওয়া।’ নিজের আতঙ্কের কথা এভাবেই প্রকাশ করছিলেন প্লাজমা ফিজিক্স বিষয়ে বাংলাদেশের একমাত্র গবেষক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থ বিজ্ঞানী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধ্যাপক ড. আব্দুল্লা আল মামুন (এ.এ. মামুন)।
শুধু ড. মামুন নয়, আতঙ্ক এখন দেশের প্রায় সব মানুষের। দেশের সর্বত্রই পণ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহারের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। যা জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত ভোক্তা অধিকারের চরম লঙ্ঘন। বিষয়টি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। কেউ কেউ এ অবস্থাকে ‘নীরব গণহত্যা ও নীরব মাহমারী’ বলেও উল্লেখ করেছেন।
খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ ও ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ (সিওয়াইবি) কাজ করে যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ সিওয়াইবি এর শাখা সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলেছে ভেজাল বিরোধী সংগঠন কনজুমার ইয়ুথ-জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (সিওয়াই-জেইউ)। সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে সার্বিক দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক (ডা:)) এম এ রহমান, পিএইডি, পদার্থ বিজ্ঞাপ বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.এ. মামুন এবং আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষক ড. তাপস কুমার দাস।
গত ১৭ ডিসেম্বর সিওয়াই-জেইউ এর পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘খাদ্যে ভেজাল ও ভোক্তা অধিকার’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করে। জহির রায়হান অডিটোরিয়ামের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় তিন’শ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এতে কনজুমার কেয়ার সোসাইটি (সিসিএস) এর সম্পাদক পলাশ মাহমুদ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কেন্দ্র (বিসিএসআইআর) এর ইনস্টিটিইউট অব ফুট সাইন্স এন্ড টেকনলোজি (আইএফএসটি) এর প্রিন্সিপ্যাল সাইন্টিফিক অফিসার ড. বরুন কান্তি সাহা ও সিওয়াই-জেইউ এর উপদেষ্টা ড. তাপস কুমার দাস প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
প্রশিক্ষণ কর্মশালার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্যে ভেজাল ও ভোক্তা অধিকার বিষয়ে অসাধারণ সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। কর্মশালার মাত্র চার দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল কর্তৃপক্ষ কয়েকটি খাবারের দোকানে অভিযান চালায়। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ৫টি দোকানিকে ২৩ হাজার টাকাও জরিমানা করা হয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হল কর্তৃপক্ষের এ অভিযান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক প্রসংশা কুড়িয়েছে।
এ বিষয়ে সংগঠনটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ফাতিমাতুজ জহুরা বলেন, মাঝে-মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অনেক সংস্থা অভিযান চালায়। কিন্তু তাতে ভেজাল ও বিষাক্ত দ্রব্যাদীর ব্যবহার কমছে না। সেকারণে আমরা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি গড়ে তুলেছি। আমরা সরকারের প্রচেষ্টায় সহযোগীতা করতে চাই। আমরা ক্যাম্পাসবাসীকে সচেতন করতে কাজ করছি।
অল্প দিনেই ক্যাম্পাসে সংগঠনটি ব্যাপক জনপ্রীয়তা অর্জন করেছে। ইতিমধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী সংগঠনের সদস্য হয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর ৮টি আবাসিক হলের কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। আগ্রহীদেরকে সদস্য করতে সিওয়াই-জেই ১ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি ‘সদস্য সংগ্রহ সপ্তাহ’ ঘোষণা করেছে। এ সপ্তাহে আরো প্রায় দুই’শ নতুন সদস্য হবেন বলে আশা করছেন সংগঠনটির সভাপতিসহ অন্যান্যরা। সদস্য সংগ্রহ শেষ হলে সবগুলো হলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে বলে জানালেন স্বেচ্ছাসেবীরা। প্রতিটি হলের
খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে এখন থেকে নিয়মিত সচেতনা বৃদ্ধি ও মনিটরিং হবে বলে আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টরা।
ষ নন্দিতা সরকার
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন