মাহে রমযানের একটি বিশেষ আকর্ষণ নামাজে তারাবীহ্। বলা যায়, এটি এ মাসের আধ্যাত্মিক অলঙ্কার ও সৌন্দর্য। রমযানের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরই শুরু হয় এ নামাজ। মুসল্লিদের ঢল নামে মসজিদে মসজিদে। যারা অবহেলায় এতদিন ঠিকমতো নামাজ আদায় করেনি, তারাও সারিবদ্ধ হন নামাজের কাতারে। এশার নামাজেই উপচে পড়ে মসজিদ। এশার পর শুরু হয় তারাবীহ্। দু’রাকাত করে দীর্ঘ ২০ রাকাত। দু’রাকাতে এক নিয়ত এবং চার রাকাত পর একটু বিশ্রাম ও বিরতি। এই ফাঁকে ইমাম সাহেব ও মুসল্লিরা তারাবীহ্র বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহ্র দরবারে আর্তি জানায় তার মহিমা-গুণগান প্রকাশের মাধ্যমে, বেহেশতের সৌভাগ্য আর দোযখ হতে মুক্তি লাভের জন্য।
বছরের অন্য সময় নামাজ আদায় করা হয় কয়েকটি আয়াত বা নাতিদীর্ঘ সূরা পাঠের মাধ্যমে। তাও অনেক সময় মনে হয় ক্লান্তিকর। কিন্তু রমযানে তারাবীহ্ নামাজে পাঠ করা হয় পুরো কুরআন শরীফ। হাফেজ সাহেব প্রতিদিন দেড় পারা বা এক পারা করে পড়েন কিংবা দু’পারা করে খতম করেন ২০ রাকাতে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫ কিংবা ২৭ দিনে এক খতম কুরআন পাঠ শেষ হয়ে যায় ‘বা-ওযু’ আল্লাহ্র সামনে দাঁড়ানো অবস্থায়। মসজিদভর্তি মুসল্লিরা হৃদয়মন নিবিষ্ট করে শোনেন এই তেলাওয়াত।
এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে ক্লান্তি আসার কথা। অথবা রাতের বেলা ঘুমের কোলে ঢলে পড়ার আশঙ্কা। কিন্তু না। শ্রান্তি, ক্লান্তি নেই। এক অনাবিল পবিত্র আনন্দ যেন সবার অন্তরে ছোঁয়া দিয়ে যায়। ফলে ইফতারের পরপর তারাবীহ্র শুরুতে একটু ক্লান্তি মনে হলেও নামাজের শেষভাগে শরীর মনে হয় একেবারে হালকা। ক্লান্তি অবসাদের চিহ্ন নেই কারো চেহারায়। মনে হয় ঘুমে নয়, বিনিদ্রার মধ্যেই আনন্দ। এভাবে সারারাত বিনিদ্রায় কাটাতে পারলেই যেন ভালো লাগবে।
সারাদিন পরিশ্রম, তারপর উপস ও ক্ষুধা-তেষ্টায় প্রাণ ওষ্ঠাগত। সন্ধ্যায় ইফতার করার পর শরীর যেন ভেঙে পড়ে, বিছানার একটুখানি পরশ চায়। কিন্তু ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ডাক পড়ে তারাবীহর। মসজিদের মিনারে ধ্বনিত হয় এশার আযান। ক্ষুধা-তেষ্টায় শ্রম-ক্লান্ত রোজাদার সে ডাকে যেন এক অব্যক্ত শক্তির সন্ধান পায়। এক অনুপম আধ্যাত্মিক আকর্ষণ তাকে তাড়া করে নিয়ে যায় মসজিদে। এই আকর্ষণের স্বরূপ কি? রমযানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়ে যুবক, বৃদ্ধ, ছেলেমেয়েরা অনাবিল শক্তি ও আনন্দ পায় কোত্থেকে? হাদিসের ভাষ্য, মাহে রমযান আল্লাহ্র রহমতের মাস। রমযান এলে রহমতের দুয়ার খুলে দেয়া হয়। দোযখের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। আল্লাহ্র আরশ হতে বেহেশত অভিমুখে রহমতের সমীরণ প্রবাহিত হয়। তার দোলা এসে রোজাদারের অন্তর স্পর্শ করে যায় পৃথিবীতে। কই, সে রহমত তো আমরা দেখি না!
রহমত মানে দয়া, অনুগ্রহ, প্রশান্তি। এগুলো বস্তু নয়, অপার্থিব জিনিস। চর্মচক্ষে দর্শন করা সম্ভব নয়। তাহলে কিভাবে বুঝব এ রহমতের আগমন? বর্ষায় বৃষ্টি নামে। তাতে বুঝি প্রকৃতিতে পরিবর্তন এসেছে। গ্রীষ্মের দাবদাহে আল্লাহ্র দয়ার বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়েছে পৃথিবীর শুকনো মাটি। গাছপালা প্রাণবন্ত হয়েছে সে বৃষ্টিতে অবগাহন করে। এ বর্ষা চোখে দেখা যায়। কিন্তু রমযানের রহমত এভাবে দর্শনীয় নয়। এ রহমতকে দেখতে পারি ভিন্ন আঙ্গিকে।
রমযানে নিশ্চয়ই অঝোর ধারায় বর্ষিত হয় আল্লাহ্র রহমত। তাই ঈমানদারের মনে, জীবনে ও সমাজে জাগরণ, শিহরণ আসে। মসজিদসমূহ সম্পূর্ণ আবাদ। উপচে পড়া মুসল্লিদের দোয়া, তেলাওয়াত, নামাজ ও ইবাদত-বন্দেগীতে ব্যস্ততা। রমযানের চাঁদ দেখা দেয়ার পর মসজিদে মানুষ জোগাড়ের জন্য তো প্রচারের হট্টগোল নেই। বড় দলের মিটিং জমায়েত হলে কত প্রচার, কত অর্থ ও জনবল নিয়োগ করতে হয়। এরপরও লোক জমায়েত কতখানি হয় তার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। যতটুকু হয় তাও দিনের নির্দিষ্ট সময় কিংবা কয়েক ঘণ্টার জন্য, একবার মাত্র। কিন্তু রমযানে মসজিদের পক্ষে কই এত প্রচার কোথায়? এরপরও কেন নামাজীর সমাগমে উপচে পড়ে মসজিদ চত্বর। নতুন বর্ষায় পুকুরের মাছ পরম আনন্দে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে খালে, বিলে, চতুর্দিকে। প্রথম বর্ষা মানে মাছের জীবনে উৎসব। অনুরূপ রমযানে যখন আল্লাহ্র রহমতের বর্ষা নামে তখন ঈমানদার আকর্ষিত হয় মসজিদে। তার ভেতরের মানব সত্তাই লাব্বায়েক বলে আসমানে আল্লাহ্র গায়েবী ফেরেশতাদের আহŸানে। যারা অবিরাম ডাক দিয়ে যায়Ñ ‘ইয়া বাগিয়াল খাইরে আক্ববিল, ওয়া ইয়া বাগিয়াশ শাররে আকসীর।’ ‘হে কল্যাণের প্রত্যাশী! আগোয়ান হও, হে অকল্যাণের প্রত্যাশী! পেছনে হটে যাও।’
বস্তুত রমযানে ইবাদতের জাগরণ, মসজিদে উৎসবমুখর তারাবীহ্র জামাত আর রোজাদারের ক্লান্তিহীন আরাধনার মধ্যে আমরা প্রচ্ছন্নভাবে সাক্ষাৎ পাই আল্লাহ্র রহমতের। এ রহমত খাস রমযানের। তারাবীহ্র সাথে যেন এ রহমত অঝোর ধারায় নেমে আসে আমাদের সামগ্রিক জীবনে। তাই বুঝি, রোজা রেখে তারাবীহ্ না পড়লে এত খারাপ লাগে। তারাবীহ্ বড়জোর সুন্নত। ফরজ ওয়াজিব নয়। তবুও ফরজের মতো স্বাদ মিশে আছে তারাবীহ্ নামাজে। তাই রোজাদারের মন তারাবীহ্র জামাতে হাজির হওয়ার জন্য অস্থির, উদগ্রীব থাকে।
তারাবীহ্র আধ্যাত্মিক অলঙ্কারের রূপ ও সৌন্দর্য আরো ব্যাপক, আরো গভীর। পবিত্র কুরআনের স্মারণি এ তারাবীহ্। পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে মাহে রমযানে। তাই এ রমযানের এত ফযিলত ও মর্যাদা। কুরআন নাযিলের এই মহতি উপলক্ষকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়াই যুক্তির দাবি। যাতে কুরআন নাযিলের বার্ষিকী উদযাপিত হয় যথাযোগ্য মর্যাদায়। তবে, এ বার্ষিকী পালনের কর্মসূচি কী হবে? কিভাবে এ মহতি অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্ভব?
হাদিস শরীফে বর্ণিত, প্রতি রমযানে হযরত জিব্রাঈল (আ:) নবীজীকে পুরো কুরআন পাঠ করে শুনিয়ে যেতেন। এটি কুরআন নাযিলের বার্ষিকী পালনের কোনো আসমানী ব্যবস্থাপনা কি না জানি না। কিন্তু চিন্তা করলে আমরা একটি সত্যে উপনীত হতে পারি। তা হলো, কুরআন নাযিলের বার্ষিকী উদযাপন ও পবিত্র কুরআনকে বরণ করার সুন্দর ব্যবস্থাপনা নিহিত তারাবীহ্র মাঝে। প্রত্যেক মসজিদে কুরআন মজিদ বিশুদ্ধ পাঠে খতম করা হয়, তাও নামাজে। মুসল্লিরা নামাঝে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে পাঠ শোনেন আর সমান সওয়াবের ভাগী হন। আপন ধর্মগ্রন্থকে শিশু-কিশোর, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ মিলে সর্বজনীনভাবে পড়া ও শোনার এরূপ সুন্দর নিয়ম ও আয়োজন অন্য কোনো ধর্মে নিশ্চয়ই নেই। হিন্দু ধর্মে তো সাধারণ মানুষের পক্ষে ধর্মগ্রন্থ পড়া ও শোনা মহাপাপ। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের তো নির্ভেজাল অবিকৃত ধর্মগ্রন্থ বর্তমান নেই। ওসব ধর্মের অনুসারীরাও তার দাবি করে না। বাইবেলের বিভিন্ন সংস্করণের বৈপরীত্য ও ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার অভাব সর্বজনবিদিত। এসব ধর্মগ্রন্থ নির্ভেজাল নয়, তাই ওসব ধর্মগ্রন্থের হাফেজও নেই। তার মানে পুরো ধর্মগ্রন্থ কেউ বিশুদ্ধভাবে মুখস্থ করে না, মুখস্থ রাখেও না।
একজন বিজ্ঞ আলেম দাবি করে বলেছেন, কুরআন মজিদ ছাড়া অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থের হাফেজ বা মুখস্থকারী পৃথিবীর বুকে নেই। কুরআন ও ইসলামের সৌন্দর্যের আরেকটি দিক এ সত্য তথ্যটি। আপন জাতি বা সম্প্রদায়ের সব লোকের পক্ষে এভাবে নিজস্ব ধর্মগ্রন্থ পড়া ও শোনার সৌভাগ্য একমাত্র মুসলমানদেরই আছে। এই অনুপম সৌভাগ্যের বাহন নামাজে তারাবীহ্ তাই কুরআনের স্মারণি ও বর্ষ উদ্যাপনী হিসেবে স্বতন্ত্র মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।
তারাবীহ্র এ বৈশিষ্ট্যকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করলে আরো গভীর তাৎপর্যের সন্ধান পাওয়া সম্ভব। তখন দাবি করে বলা যাবে, তারাবীহ্ কুরআন হেফাজতের উৎকৃষ্ট মাধ্যম। আল্লাহ্ পাক কুরআন মজীদে ওয়াদা করেছেন : ‘আমি কুরআন নাযিল করেছি আর আমিই তার হেফাজত-সংরক্ষণ করব।’ আল্লাহ্র ওয়াদা সত্য, দীর্ঘ ১৪শ’ বছর এই মহাগ্রন্থের সংরক্ষণ তিনি করেছেন। বিন্দু বিসর্গ রদবদল বা হেরফের হয়নি কুরআন মজীদের কোনো শব্দ, অক্ষর বা যতিচিহ্নের। তবে এই হেফাজতের প্রক্রিয়া লক্ষ করুন। যদি কেবল কাগজে লিখে সংরক্ষণ করা হতো কালের বিবর্তনে, শত্রæর আক্রমণে ধূলিস্যাৎ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তিনি হেফাজত করেছেন হাফেজদের সিনার মাধ্যমে। কুরআনের হাফেজগণ বিশুদ্ধ তেলাওয়াতসহ পুরো কুরআন হেফজ করে এ দায়িত্ব পালন করেছেন। এ হাফেজের সংখ্যা অগুণতি। সারা বিশ্বে আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছেন তারা। পরিসংখ্যানের আওতার বাইরে তাদের অবস্থান। তাই শত্রæপক্ষ চাইলেও সকল হাফেজকে খুঁজে বের করতে পারবে না কোনোদিন। ইতিহাসের দীর্ঘ পরিক্রমায় পারেনি। এই হাফেজদের লালন-পরিচর্যার ভ‚মিকা কোনো সরকার বা সংস্থা করেনি।
একটু গভীরে গিয়ে চিন্তা করুন। দেখবেন, নামাজে তারাবীহ হাফেজ এবং তার হেফজকে সংরক্ষণ করে চলেছে বিস্ময়করভাবে। কুরআন মজিদ হেফজ করার পর প্রতি বছর রমযানে হাফেজকে পুরো কুরআন মুখস্থ তেলাওয়াত করতে হয় তারাবীহ্ নামাজে। সে জন্য সারা বছর সযতœ পরিচর্যা করতে হয় হেফজের। খোদা না করুন যদি ভুলে যায় বা পড়ায় ভুল হয় পেছনের হাফেজ লোকমা দেবেন। মসজিদে আল্লাহ্র সামনে ও সমাজের সামনে দাঁড়াতে পারবেন না। হাফেজ নামের কলঙ্ক হবে। সমাজ প্রত্যাখ্যান করবে। এ ভয় ও আতঙ্ক তাকে তাড়িত করে কুরআন মজিদকে মুখস্থ রাখার প্রেরণায়।
অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, যে হাফেজ দু-এক বছর তারাবীহ্ নামাজে খতম পড়েননি, তিনি গোল্লায় গেছেন। কুরআনের স্বর্গীয় পাখি উড়ে গেছে তার বক্ষের পিঞ্জর ছিঁড়ে। কুরআন মুখস্থ করার পর ভুলে যাওয়ার কবিরা গোনাহ্ তার অন্তরকে দংশন করে চলেছে। এ দংশন সারা জীবনব্যাপী। আর যারা যতেœর সাথে রমযানে খতমে তারাবীহ্ পড়েন তাদের হেফজ মুছতে পারেনি কলবের আয়না থেকে। আরো দেখা যায়, মুসলিম সমাজের যে অংশে বা সম্প্রদায়ে তারাবীহ্র রেওয়াজ নেই, তাদের মাঝে হাফেজে কুরআনের সংখ্যা নিতান্ত কম। তার মানে, খতমে তারাবীহ্ কুরআন হেফজের চাহিদা বাড়ায়। হেফজের পরিচর্যা করে। হাফেজদের সামাজিক মর্যাদা ও স্বীকৃতি উপহার দেয়। তাদের সমাজ ও আল্লাহ্র সামনে দাঁড় করিয়ে প্রতি বছর পরীক্ষা নেয় আল্লাহ্র আমানতের সঠিকভাবে হেফাজত করা হচ্ছে কি না।
তারাবীহ্ গোটা মুসলিম সমাজকে সমগ্র কুরআনের সামনে দÐায়মান করায়। সমাজের প্রতিটি মানুষ মেধা, যোগ্যতা ও প্রস্তুতি অনুসারে কুরআন মজিদ থেকে শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা নেয়। হয়তো সবাই তারাবীহ্তে কুরআন পড়ে বা শুনে, অর্থ বুঝে না। তবুও লাভ অপার। প্রতি রাতে দীর্ঘ দেড়-দুই ঘণ্টা কুরআন মজীদের তেলাওয়াত শোনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা, তাও ওজুসহ পবিত্র অবস্থায় আল্লাহ্র দরবারে হাজির হয়ে, চাট্টিখানি কথা নয়। না বুঝলেও এর প্রভাব, আবহ্ ও আমেজ আমাদের জীবন ও সমাজকে কুরআনের রঙে রঙিন হতে অনুপ্রেরণা জোগায়।
দীর্ঘক্ষণ আল্লাহ্র সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্র কালাম শোনা মানে মনের আলাপনিতে স্বয়ং আল্লাহ্র সাথে কথা বলা। গানের অর্থ ও আবেদন সব সময় সব শ্রোতা বুঝতে সক্ষম নয়। এরপরও ভাবের আবহ্, ছন্দের ঝঙ্কার আর সুরের মূর্ছনা শ্রোতার মনে নতুন ভাবের প্রেরণা আনে। গানের যদি এই অবস্থা হয় মহামহিম আল্লাহ্র বাণীর আবেদন, সুর, ঝঙ্কার আর তারতিলের আকর্ষণ প্রাণে প্রাণে নিশ্চয়ই শিহরণ আনে। নচেৎ শত, হাজার, লাখো মানুষ রাতের অন্ধকারে ক্ষুধার্ত, শ্রমক্লান্ত শরীর নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কুরআন তেলাওয়াত কেন শোনে? নিশ্চয়ই স্বাদ আছে, প্রেমের আমেজ আছে। যে স্বাদ ও আমেজ ভুক্তভোগী ছাড়া অনুভব করতে পারে না অন্য কেউ। হাদিস শরীফে এ সত্য তথ্যটিরই স্বীকৃতি দিয়ে বলা হয়েছে।
যে ব্যক্তি রমযান মাসে আত্মোপলব্ধিসহ সওয়াবের নিয়তে রাত জাগে (ভাষ্যকারদের মতে, রাত জাগে মানে তারাবীহ্র নামাজ পড়ে) তার অতীতের গোনাহ্ মাফ করে দেয়া হয়। (মিশকাত)
এ হাদীসের ভাষ্য অনুসারে তারাবীহ্ নামাজের মাধ্যমে অতীত জীবনের সকল সগীরা (ছোটখাটো) গোনাহ্ মাফ হয়ে যায়। আর যদি আত্মোপলব্ধির মাঝে কবিরা গোনাহ চিরতরে ত্যাগ করার সংকল্প ও আল্লাহর দরবারে পাপের ক্ষমার আকুতি-তওবা থাকে তাহলে কবিরা গোনাহও মাফ হয়ে যাবে। তারাবীহ্র মাঝে নিহিত এই সৌভাগ্য প্রকারান্তরে রমযান মাগফিরাতের মাস হওয়ার সত্যকেও সপ্রমাণিত করে। অপর এক হাদিসে এই মাগফিরাতের দৃশ্যপট অঙ্কন করা হয়েছে এভাবে :
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর হতে বর্ণিত : হযরত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রোজা এবং কুরআন (কেয়ামতে) আল্লাহ্র নিকট বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, আয় পরওয়ারদেগার! আমি তাকে দিনের বেলা পানাহার ও যৌনাচার থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন এবং কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি, সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে। (মিশকাত)
রাব্বুল আলামীন! আমাদের মনে, জীবনে ও সমাজে তারাবীহ্, কুরআন ও রমযানের অফুরন্ত রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সওগাত দিয়ে আমাদেরকে পাপ, সন্ত্রাস, অপসংস্কৃতি, অবিচারের অভিশাপ আর দোযখের আযাব হতে নাজাত দাও। আমীন \
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন