বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গন

ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বর্ষবরণ প্রস্তুতি

প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জুয়েল মাহমুদ

দরজায় কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা  বৈশাখ। এই উৎসবের বাকি আছে আর মাত্র কয়েক দিন। বৈশাখকে বরণ করে নিতে জোর প্রস্তুতি চলছে দেশ জুড়ে। তবে এর মূল আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল কাজ চলছে পুরোদমে। শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত যার যার ওপর অর্পিত কাজ নিয়ে। কেউ ছবি আঁকছেন, কেউ মুখোশ গড়ছেন, কেউ বা আবার হাঁড়ি-পাতিলের ওপর কারুকার্য তৈরি করছেন। সেগুলোই কিছুক্ষণ পর টাঙানো হচ্ছে দেয়ালে। চমৎকার এসব শিল্পকর্ম দেখেই মন ভরে যায়। চারুকলার শিক্ষার্থীরা এসব তৈরি করছেন মূলত বিক্রির জন্য। কেননা এসব বিক্রির টাকা দিয়েই তৈরি হচ্ছে পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার বিশাল বিশাল মোটিফ। পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ। বাঙালি জীবনে বৈশাখ আসে নব আনন্দের দ্যোতনা নিয়ে। তাইতো ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে চলছে প্রস্তুতি নতুন বছরকে নানা আয়োজনে বরণ করে নেয়ার। পুরাতনের গ্লানি, হতাশা, ব্যর্থতা, পঙ্কিলতা ধুয়ে মুছে বাঙালি পহেলা বৈশাখে স্বপ্ন দেখে নতুন দিনের, নতুন আগামীর। বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ পালিত হয় বাঙালির আবেগ ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির প্রণোদনায়। ঢাকার শিক্ষার্থীদের কাছে মূল আকর্ষণ ঢাবির চারুকলা। চৈত্রের খরতাপ কাটিয়ে বৈশাখী হাওয়ার সুরকে সঙ্গী করে মহাব্যস্ত দিন কাটাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলারসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। চলছে  মিলেমিশে বৈশাখী আয়োজন। ঢাবি’র চারুকলা অনুষদের বারান্দায় সারি সারি সরা সাজানো। কেউ সরাচিত্র, চিত্রকর্ম, ছোট কাগজের পাখি, পাখা বিক্রি করছেন, কেউ বা পাশে বসে মগ্ন হয়ে রং তুলির পরশে সরায় আঁকছেন। চারুকলার প্রধান গটে দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে তরুণ-তরুণীদের শিল্পকর্ম। চারুকলার শিক্ষকরাও পিছিয়ে নেই কোন দিক থেকে। তারাও নতুন বর্ষকে বরণ করতে করে যাচ্ছেন নানা সৃজনশীল শিল্পকর্ম। মূলত বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রহরে যে বিশাল শোভা যাত্রা বের করা হয় তা শুরু হয় ঢবির চারুকলা থেকেই। এখন চলছে তারই প্রস্তুতি। দিন নেই, রাত নেই আনন্দ আর আড্ডাকে সাথী করে শিক্ষার্থীরা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কাজ। প্রচ- গরম কিংবা খাওয়ার তাড়না কিছুই যেন কাবু করতে পারছে না তাদের। আপন মনে গড়তে ব্যস্ত নানা পশু পাখির প্রতিকৃতি, রাজা-রাণী ও কৃষক-কৃষাণী। এক দিকে আনন্দ আর গান অন্য দিকে বর্ষ বরণের কাজ সব মিলিয়ে মহাব্যস্ত এখন চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বাঙালির ঐতিহ্যের যেসব খেলনা বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেসব খেলনাকে নতুন করে তুলে ধরা হবে শোভাযাত্রায়। এ ছাড়া থাকছে সরাচিত্র, খেলনা, পুতুল, মা ও শিশু, বাঘ, হরিণ, মাছ, মাছের ঝাঁক, মুখোশ, হাতপাখা, শখের হাঁড়ি, বিড়াল, লক্ষ্মী পেঁচাসহ আরও নানা ধরনের শিল্পকর্ম। সরেজমিনে চারুকলায় গেলে দেখা যায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে চলছে গানের আসর। এখানে কাজ করছে সুমন নামে চারুকলার এক শিক্ষার্থী তিনি জানালেন, এই কাজগুলো অনেক কঠিন কিন্তু আমরা অনেক আনন্দ করে করি তাই কষ্ট মনে হয় না। ক্লান্তিটা আড্ডা আর গানে ভুলে যাই। মুখোশে রং তুলির পরশে রাঙ্গিয়ে তুলতে ব্যস্ত নামিয়া, সোহান, মৌ, তপু। তারা জানালেন, বাঙ্গালির সাংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব হলো পহেলা বৈশাখ, তাই এই কাজে অংশ নিতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছেন।
বাংলা নববর্ষ উদয্পান পূর্ণতা পায় না মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়া। চারুকলার শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ১৯৯০ সালে এটা চালু হয়। এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নববর্ষের আহ্বানকে করে তোলে নয়ন-মনোহর। এতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অংশ নেবে বরেণ্য শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক সহ সর্বস্তরের জনগণ। হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে এই শোভাযাত্রায়। এদিকে পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে সাজতে শুরু করেছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে ক্যাম্পাসময়। চারুকলার সামনে, মেয়েদের হল, কার্জন হল, শাহবাগ মোড়, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, সোহরাওয়াদ্দী উদ্যানসহ গোটা এলাকা বিস্তীর্ণ বাজারে রূপ নিয়েছে। এসব স্থানে কাঁচের চুড়ি, মাটির গহনা, টিপ, আলতা, লালফিতা কেনার ধুম চলছে। এদিকে বাংলা বছরের প্রথম দিনটাকে বরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের টিএসসিতে তাই চলছে নানা সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে গান, নাটক, যাত্রার মহড়া। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের আয়োজনে পান্তা-ইলিশতো থাকছেই। পহেলা বৈশাখকে আরও মহিমান্বিত করতে আয়োজন চলছে ফলাহার, হাডুডু খেলা, লাঠিখেলা, বৈশাখি আসর ও বাউল গানের। টিএসসি ও এর আসে-পাশে প্যান্ডেল করে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করবে বাধন, সন্ধানী ও কোয়ান্টাম।
এদিকে পুরান ঢাকায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে (জবি) ঘিরে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলার জোর প্রস্তুতি চলছে। সদরঘাট, পাটুয়াটুলী, বাংলাবাজার, শাঁখারীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, পাতলাখান লেন, নয়াবাজার, তাঁতীবাজার ও রায় সাহেব বাজারসহ আশপাশ এলাকায় বৈশাখের ঐতিহ্য-আনন্দ ছড়ানোর দায়িত্বভার নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি হিসেবে ছবি আঁকানো শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস বিভাগ। প্রধান ফটকেও তৈরি করা হবে দৃষ্টিনন্দন বৈশাখী গেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলা এবং কলা অনুষদ প্রাঙ্গণে বাউল সংগীত পরিবেশনের মঞ্চ তৈরি করা হবে।
পুরাতন বছরের লেনাদেনা চুকিয়ে নতুন বছর ১৪২৩ হোক নতুন প্রত্যাশার, নতুন স্বপ্নের। হাজার বছরের বাঙালি ঐতিহ্য-সাংস্কৃতি হৃদয়ে লালন করে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী প্রস্তুত নতুন বছর বরণ করে নেয়ার জন্য। বিশ্বায়নের যুগে লুপ্তপ্রায় প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকজ সাংস্কৃতির সাথে নতুনভাবে পরিচয় এবং নিজ সাংস্কৃতিকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে মুক্ত করার এক নতুন প্রেরণা সঞ্চয় করবে দেশের ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারক এই নতুন প্রজন্ম। দেশবাসির প্রত্যাশা  গতবছরের মতো এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যেন আর না ঘটে। ক্যাম্পাসের রঙিন দিনগুলোকে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে চায় এখানকার শিক্ষার্থীরা। স্বপ্নবাজ তারুণ্যদীপ্ত এই শিক্ষার্থীরা আশার ভেলা ভাসিয়ে নতুন বছরের সূর্যদয়ের আলোকে আপন করে পেতে উন্মুখ। আসছে সেই কাক্সিক্ষত নববর্ষ। আসছে রংধনুর রঙের মেলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিরায়িত উৎসব, বাঙ্গালির প্রাণোন্মাদনার উৎস পহেলা বৈশাখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন