মাস্টার্স পাস বা সমমানের ক্লাস ‘তাকমীল ফিল হাদিস’ (টাইটেল) সমাপ্তকারী গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে এক সমাবর্তন (দস্তারবন্দী) সম্মেলন সুনামগঞ্জে হওয়ায় শহরে দোলা লেগেছিল হাজারো প্রাণের। শহরের সাধারণ মানুষের কাছে এই সমাবর্তন ছিল এই প্রথম; তাও আবার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কওমী মাদরাসার। এ নিয়ে আয়োজকসহ দাতাগোষ্ঠী, সমর্থকদের মধ্যে ছিল উচ্ছ্বসিত মনোভাব; এই কাক্সিক্ষত দিনের জন্যই তারা অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে সেই কাক্সিক্ষত দিন ২২ ও ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ শুক্র ও শনিবার চলে এলো সবার সামনে। দুই দিনব্যাপী সমাবর্তনে বিশ্বের ইসলামি স্কলারগণ, বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশগ্রহণ করেন। যেই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে এই বিশাল আয়োজন, সেই ‘জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া সুনামগঞ্জ’-এর প্রিন্সিপাল শায়খ মাওলানা আব্দুল বছীর বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের আশা ও মেহনত আল্লাহ তায়ালা কবুল করেছেন, বড় ধরনের কোন ঝামেলা ছাড়াই প্রশাসনের সহযোগিতায় সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত করতে পেরেছি; এজন্য মহান আল্লাহর দরবারে অসংখ্য কোটি শুকরিয়া জানাই। এটি সফল করতে বিভিন্নভাবে যারা সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন বাদ জুহর হতে রাত ১২টা পর্যন্ত চলা দুই দিনব্যাপী এই সমাবর্তন ৮টি অধিবেশনে ভাগ করা হয়। শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে প্রতিটি অধিবেশনেই আলাদা করে সভাপতি, উপস্থাপক, কোরআনে কারীম থেকে তিলাওয়াত, সংগীত পরিবেশন ও বক্তার তালিকা তৈরি করা হয়। অনুষ্ঠানের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে স্থানীয় প্রশাসনের লোক থাকলেও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকগণও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। অনুষ্ঠানস্থল ঘুরে দেখা গেছে প্রশাসনের লোকজন ঠিকই অবস্থান করছে, তবে কোন মানসিক চাপে নেই। কারণ, একটি ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই সমাবর্তন হওয়ায় এখানে আগত সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে কোন ধরনের নেতিবাচক চিন্তা যে নেই, তা দুই দিনের অনুষ্ঠান সমাপ্তির পরই বুঝা গেছে। সুতরাং স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনও মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারবেন না।
‘১৯৬৬ থেকে ২০১৬’ কেটে গেছে দীর্ঘ ৫০টি বছর; এ উপলক্ষে ‘জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া সুনামগঞ্জ’ কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেন ৫০ বছর পূর্তিতে দস্তারবন্দী বা সমাবর্তনের। জামেয়ার দক্ষিণের বিজিবির মাঠে নির্মিত হয় বিশাল প্যান্ডেল, এ প্যান্ডেলেই জমায়েত হন প্রাক্তন ছাত্র-শিক্ষক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষের পদচারণায় ভরে ওঠে সুনামগঞ্জ শহর; দোলা দেয় নারী-পুরুষ ও আবালবৃদ্ধবনিতার মনে, এ যেন এক স্বর্গীয় সুখ ও সমাবেশ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে খলিফায়ে মাদানী শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ি, জামেয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের মুহতামিম আল্লামা শায়খ যিয়াউদ্দিন, জামেয়া ক্বাসিমুল উলূম দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ) সিলেট-এর শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহিবুল হক, হাফিজ মাওলানা মুহসিন আহমদ সাহেবজাদায়ে শায়খে কৌড়িয়া, দারুল হাদিস জাউয়াবাজার মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুস সোবহান, কামরূপদলং মাদরাসার মুহতামিম শায়খ মাওলানা আকবর আলী, সিলেটস্থ ভার্থখলা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মউজদুদ্দীন, সৈয়দপুরের মাওলনা আব্দুন নূর, আমবাড়ি মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সাজিদুর রহমান। দুই দিনব্যাপী এই মহাসম্মেলনের উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন শায়খুল হাদিস শায়খ মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা জুনাইদ আহমদ কিয়ামপুরী, মাওলানা বদরুদ্দিন আল মাদানী, মাওলানা হারুনুর রশিদ, মাওলানা আবু সাঈদ, মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা দিলোয়ার হোসাইন, মাওলানা মিজানুর রহমান, মাওলানা আবুল কাসেম ও মাওলানা ত্বাহা হোসাইন।
‘জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া সুনামগঞ্জ’-এর ঐতিহাসিক দস্তারবন্দী মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওলাদে রাসূল (সা), শায়খুল ইসলাম আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ)-এর সুযোগ্য সাহেবজাদা বিশ্ববরেণ্য ইসলামি চিন্তাবিদ আল্লামা আসজাদ আল মাদানী।
যতদিন এসব মাদরাসা ও মাকাতিবগুলো অক্ষত থাকবে; ততদিন ইসলাম জীবিত থাকবে। তাই জীবনের সকল ত্যাগ-তিতিক্ষা বিসর্জন দিয়ে হলেও কওমী মাদরাসাগুলোকে ঠিকিয়ে রাখতে হবে। উল্লেখ্য, জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া সুনামগঞ্জ-এর সমাবর্তন উপলক্ষে সমসাময়িক বিষয়সহ একটি দৃষ্টিনন্দন ‘স্মারক’ প্রকাশ করা হয়েছে।
ষ মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন