একটানা ক্লাস-প্রাকটিক্যাল-অ্যাসাইনমেন্টের ব্যস্ততায় জীবন যখন হয়ে ওঠে একঘেয়ে বিষণœ, তখন আত্মার প্রশান্তি ও একটু সুখের খোঁজে কী যেন এক অজানা প্রাপ্তির আশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে মন। এমন সময়ে সপ্তাহব্যাপী শিক্ষা সফরের আয়োজন যেন মেঘ না চাইতেই জল! এটা মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য যতটা স্মরণীয়, যতটা আনন্দের, যতটা দীর্ঘ সফর ততটাই শিক্ষণীয় সফর। বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ের বাস্তব জ্ঞান ছাড়া পরিপূর্ণ শিক্ষালাভ সম্ভব নয়।
এসব চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের কোস্টাল অ্যাকুয়াকালচার অ্যান্ড মেরিকালচার কোর্সকে বাস্তবের সাথে পরিচিত করাতে মার্চের ২৪-৩০ তারিখ শিক্ষাসফরে নিয়ে যাওয়া হয় খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা জেলাসহ উপকূলীয় এলাকায়। অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এমএ সালাম স্যারের তত্ত্বাবধায়নে লেভেল-২ সেমিস্টার-১ এর ১১০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে এ শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়। শিক্ষা সফরকে আরো আনন্দময় করতে আমাদের সাথে ছিলেন ড. মো. মোহসীন আলী, ড. এসএম রহমতউল্লাহ, ড. মুহাম্মদ শহীদুল হক, ড. তানভীর রহমান ও কেএম শাকিল রানা স্যার।
আমরা তিনটি বাস ও বাবুর্চি নিয়ে ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যালিপ্যাড থেকে সন্ধ্যার সময় যাত্রা শুরু করি। সবার সাথে খাওয়ার জন্য পানি, প্লেট ও থাকার জন্য বালিশ-কাথা থাকা ছিল বাধ্যতামূলক। সারারাত বন্ধু-বান্ধবী একসাথে গান আর হৈ-হুল্লোর করতে করতে মাঝরাতে সিরাজগঞ্জ খাবার বিরতি দিয়ে সকালে গিয়ে পৌঁছে যাই খুলনার পাইকগাছার লোনাপানি কেন্দ্রে। চারিদিকে নয়াভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশ সবাইকে মুগ্ধ করে। এখানে আমরা তিনরাত অবস্থান করি। বিশ্রাম ও খাওয়া-দাওয়া সেড়েই আমরা সকাল বিকাল আশপাশের এলাকা ভ্রমণ করি। ওখানকার প্রতিটি পুকুরের পানি পান করতেই দেখি লবণাক্ত যা আমাদের জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা। কপোতাক্ষ ও শিবছা নদী বয়ে গেছে পাইকগাছা দিয়ে। আমরা জোয়ার-ভাটা, হ্যাচারি, চিংড়ি ও কাঁকড়ার ঘের ও বাজার ব্যবস্থাপনা, গোলপাতা ও নদীর শীতল হাওয়া উপভোগ করি। এখান থেকে যাওয়ার দিন আমাদের আয়োজনে ইসরাত জারিন ঊর্মি ও শিশিরের উপস্থাপনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। যা আমাদের ও স্থানীয়দের মন ছুঁয়ে যায়।
চলে আসি বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রে। এখানে দুইরাত আবস্থান করি। এখান থেকে আনন্দ ভ্রমণে ষাট গম্ভুজ মসজিদ, খান জাহান আলী মাজার ও সুন্দরবনে যাই। সাথে উপকূলে গড়ে ওঠা চিংড়ির সেমি-ইনটেনসিভ কালচারের সাথে পরিচিত হতে গাজী ফিস ফার্ম পরিদর্শন করি। প্রতি রাতে ভৈরভ নদীর উপর দঁড়াটানা ব্রিজে দাঁড়িয়ে শীতল হাওয়া উপভোগ আড্ডা আর গলা ছেড়ে গান তো আছেই। এবার শেষ দিনে চলে আসি যশোরের স্বাদু পানি উপকেন্দ্রে এখান হতে আফিল অ্যাকুয়া ফিস লিমিটেড পরিদর্শন করি। এভাবে ব্যস্তময় ছয়দিন কাটিয়ে রওয়ানা দেই ক্যাম্পাসে পানে। চলে আসছি বলে সবারই খারাপ লাগতে ছিল কারণ এভাবে সকল বন্ধু-বান্ধব একসাথে পড়ালেখার চিন্তাবিহীন আর কখনো এমন সুযোগ পাবো না।
ছয়দিনের প্রতিটি ক্ষণই ছিলই মনে রাখার মতো। সবাই উন্মুক্ত ময়দানে একসাথে বসে খাওয়া যেন এক একটি পিকনিক। সময় পেলেই গান আড্ডাই মেতে ওঠা। এমসয় সকলের বেসুড়া গলায় গানের প্রতিভাগুলোও ছিল উপভোগ করার। প্রকৃতির নিয়মে আমরা চলে যাবো ক্যাম্পাস ছেড়ে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন প্রকৃতির মাঝে স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই ছয়টি দিন।
ষ মো. শাহীন সরদার
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন