শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সেবাতেই কাটে ঈদের ছুটি!

তারিক ইমন | প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০১৮, ৭:১৫ পিএম | আপডেট : ৭:৩৩ পিএম, ১৮ জুন, ২০১৮

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি! সবাই যখন ঈদ আনন্দে মত্ত থাকে তখন সেই আনন্দঘন মহুর্তগুলোকে ত্যাগ করে জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন কিছু সংখ্যক শ্রেণি পেশার মানুষ। উৎসব আনন্দে শামিল হতে পারেন না তারা। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই যখন ঈদের খুশি ভাগাভাগিতে ব্যস্ত, পেশাগত কারণে দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে কিছু মানুষ থাকে উৎসব-আনন্দের ঊর্ধ্বে। কর্মস্থলে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয় ঈদের দিনও। আর তারা হলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নিরাপত্তা কর্মী, চিকিৎসক, মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জেম ও গণমাধ্যম কর্মীসহ কিছু শ্রেণীপেশার মানুষ।
ঈদের দিনটিকে সামনে রেখে কতজনের কত পরিকল্পনা থাকে। নতুন পোশাক পরা, খাওয়া-দাওয়া আর বেড়াতে যাওয়ার ভাবনা তো আছেই। আছে উপহার নেয়া-দেয়ার বাসনাও। এসব নিয়ে পরিবারের মাসব্যাপী চলে ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা। কিন্তু এই ঈদের আন্দঘন মহুর্তগুলিও অধিকাংশ সময় ত্যাগ করেই চলতে হচ্ছে তাদেরকে। ইচ্ছে করলেই তারা মনমতো সময় কাটানোর প্রোগ্রাম সাজাতে পারে না। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে হইচই করে সময় কাটানোর মতো সুযোগ এদের খুব কমই হয় শুধুমাত্র জনগণের সেবা সংক্রান্ত পেশাগত দায়িত্ব পালন করার জন্যে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী : আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীর ঈদ মানেই বিশাল এক দায়িত্ব। ছুটি খুব কম সদস্যেরই মেলে। মিললেও তা দুই-এক দিনের বেশি নয়। তাতে অবকাশের তেমন কোনো সুযোগ নেই। মজার ব্যাপার হলো সবাই এক কাতারে যখন ঈদের নামাজ আদায় করে তখনো তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সবচেয়ে কষ্টকর মনে হয় যখন কোনো ট্রাফিক পুলিশ ঈদের দিনেও বৃষ্টি, রোদ উপেক্ষা করে তার দায়িত্ব পালন করে। অথচ দেখলে মনেই হবে না তাদের কোনো কষ্ট আছে। রাস্তা বাস, ট্রাক, রিকশাই যেন তাদের পরিবারের সদস্য। রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায় ডিউটি পালনকরী মাসুদ নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, পরিবার পরিজন রেখে ঈদের দিনে অফিস করা একটু কষ্টকর। কিন্তু আমাদের উপর অনেক দায়িত্ব। তাই জনগণের সেবাকেই আমরা ঈদের আনন্দ মনে করি।

নিরাপত্তাকর্মী : ঈদের ছুটিতে আপনার ঘরের তালা পাহারা দেয়ার দায়িত্ব পালন করতে হয় পাহারাদার, দারোয়ান, নিরাপত্তাকর্মীর। সারা বছর হেলায় ফেলায় কাটালেও ঈদ এলে তাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। ঈদের সময় সবার ছুটি জুটলেও তাদের বেলায় খুব কম সময়ই ছুটি মঞ্জুর হয়। এ কারণে অফিস আদালত, ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মীদের সেই অর্থে কোনো ছুটি নেই।

চিকিৎসক : মানবতার সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের ঈদ আনন্দ বলে কিছু নেই। হাসপাতালগুলোর দিকে তাকালেই খুব সহজেই বোঝা যায়। এ সময় রোগীর সংখ্যা কিছু কম থাকলেও মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। তাই ডাক্তার, নার্স ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঈদের কোনো ছুটি মিলে না। এ ছাড়া রোগ বালাই তো আর ঈদের ছুটিতে বিরত থাকে না। কাজে বুঝতেই পারছেন ডাক্তারদের ঈদ চিকিৎসাকেন্দ্রেই হয়।
ইমাম, মুয়াজ্জিন ও ঈদগাহের দায়িত্বরত কর্মী : মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিনেরা খুব কম সময়ই ঈদের ছুটি পান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের পরিবার তাদের থেকে অনেক দূরে থাকে। ঈদে অনেক গুরু দায়িত্ব তাদের ওপর। ঈদের নামাজ পড়ানো, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি। কোনোভাবেই দায়িত্ব পালন না করার সুযোগ নেই। ঈদগাহের দায়িত্বে যারা থাকেন তাদের তো ঈদের আগে থেকেই কাজের মধ্যে থাকতে হয়। ঝড়-বৃষ্টি- রোদের কথা মাথায় রেখে মুসল্লিদের জন্য প্যান্ডেল নির্মাণ করা, নির্বিঘেœ নামাজ পড়ার সুব্যবস্থা করার গুরুদায়িত্ব থেকে ছুটি মেলার কোনো সুযোগ নেই।

গণমাধ্যমকর্মী : রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা বা বিভিন্ন গণমাধ্যমে যারা কাজ করে তাদের অনেকের ঈদের ছুটি পাওয়া খুব সৌভাগ্যের বিষয়। বড়জোর তিন দিন পত্রিকা অফিস বন্ধ থাকে। কিন্তু অন্যান্য মিডিয়ার অফডে ছাড়া কোনো বিরতি নেই। অবশ্য মিডিয়া হাউজগুলোকে ঈদ উৎসব নিয়ে অনেক নিউজ কাভার করতে হয় অথবা প্রোগ্রাম তৈরি করতে হয় এটাও হয়তো ঈদ আনন্দেরই একটা অংশ। কিন্তু পরিবারের সাথে সময় কাটানো, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনের বাসায় ঘুরে বেড়ানো এমন সৌভাগ্য খুব কম জনেরই হয়।

এছাড়াও, বিদ্যুত, পরিবহন, শ্রমিক ও সরকারি বিভিন্ন অফিসে জরুরি বিভাগে কর্মরত কিছু কর্মকর্তা জনকল্যানে বিলিয়ে দেন তাদের ঈদ আনন্দ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন