শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ঈদের ছুটি শেষ গ্রাম থেকে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ

গ্রামে বিষাদের সুর

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৭ পিএম

কোরবানি ঈদের ছুটি কাটিয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ একা। আসার সময় পথের দু:সহ বিড়ন্বনার কথা ভেবে অনেকে পরিবারের অন্য সদস্যদের গ্রামের স্বজনদের কাছে রেখে যাচ্ছেন আরো কটা দিনের জন্য। বাস ট্রেনে ভীড়ের চাপ কমলে তারা ফিরবে। 

ঈদের আনন্দে কটাদিনের জন্য রাজশাহী অঞ্চলের গাঁও গেরাম যেন মেতে উঠেছিল। শহরে যান্ত্রিক জীবনে হাফিয়ে ওঠা আর ময়লাধরা ফুসফুসটাকে গ্রামের নির্মল বাতাস আর বিস্তৃত ফসলের সবুজের শ্যামলিমায় বুকভরে শ্বাস নিয়ে রিচার্জ করেছে। কটাদিন সব দু:চিন্তা ভুলে কথার ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছে। টাটকা শাসস্বব্জির স্বাদ নিয়েছে। কিভাবে কটাদিন পার হয়ে গেল টেরই পাওয়া যায়নি। এ প্রজম্মের তরুন তরুনীরা বেশীরভাগ সময় কাটিয়েছে সেলফি তুলে আর ফেসবুকে। কোরবানী পশু থেকে লাউ কুমড়ো পটল করল্লার মাচার ঝুলন্ত ফল। লাল শাকের ক্ষেতের লাল জমিন আর আমনের সবুজ ক্ষেত কিছুই বাদ যায়নি। খাল বিলের মাছ ধরা আর নৌকায় ঘোরার দৃশ্য। শহরে যান্ত্রিকতায় ভরা জীবনের চেয়ে গ্রামের এ এক অন্য জীবন।

ঈদের ছুটি শেষ ক’দিনের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠা গ্রামে গ্রামে এখন বিষাদের সুর। অশ্রু সজল নয়নে স্বজনদের বিদায় দিচ্ছে। বলছে সাবধানে যাস। ভাল থাকিস। আর ডেঙ্গু থেকে সাবধান।

স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এলেও বাস ট্রেনে ফিরতি পথের সেই বিরক্তিকর বিড়ন্বনা। পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলো এখন সময়মত যাওয়া আসা করতে পারছেনা। সড়ক পথেও চাপ বাড়ছে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ফিরতি চাপ শনিবার আরো বেড়েছে। রেলস্টেশন আর বাস টার্মিনালে দেখাযায় প্রচন্ড ভীড়।

রাজশাহী রেলস্টেশন চত্ত¡র পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় যাত্রীরা যেমন যাচ্ছেন তেমন আসছেনও। তবে যাবার সংখ্যা বেশী। যারা আগে ভাগে টিকেট জোগাড় করতে পেরেছেন তারা মোটামুটি স্বস্তিতে রয়েছেন। টিকেট কাউন্টারে ‘‘টিকেট নেই’’ সম্বলিত বোর্ড। তারপরও মানুষ টিকেট খুঁজছে। যদি কেউ যাত্রা বাতিল করে। তার টিকেটটা পাওয়া যায় কিনা এ আশায়। আশেপাশেই টিকেট কালোবাজারিদের ছায়া দেখা যায়। দ্বিগুন তিনগুন দামে টিকেট বিক্রি করছে। ফেসবুকেও রেলের টিকেট মিলছে বেশী দামে। আমিরুল নামে একজন যাত্রী জানালেন বিশেষ কারনে যাত্রা বাতিল করতে হচ্ছে সে কারনে চারটি টিকেট বিক্রি হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন। ফেসবুকে এমন প্রচারনা দেখে যোগাযোগ করা হলে দ্বিগুনের বেশী দাম দিয়ে টিকেট কিনেছেন। এসব ব্যাপারে রেলকর্তৃপক্ষের বক্তব্য টিকেট কালোবাজারী নিয়ে তাদের কিছু জানানেই। কেউ লাইন ধরে টিকেট কিনে পরে বিক্রি করলে আমাদের কি করার আছে। ট্রেনের ভেতর ও ছাদ যাত্রীতে ঠাসা। বাস টার্মিনাল বিশেষ করে ঢাকাগামী বাস কাউন্টারে আগামী চারদিনের কোন টিকেট নেই। তবে বাড়তি দিলে দু’একটা করে টিকেট মিলছে। এমনিতে সাধারনত বাসে টিকেট পাঁচশো হলেও নেয়া হয়েছে আটশো থেকে হাজার টাকা। আবার এসি বাসের হাজার টাকার টিকেট দেড় থেকে দু’হাজার টাকায় মিলছে। টাকা দিয়ে হলেও টিকেট মিলছে নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে ফেরা হচ্ছে এটাই সান্তনা। বাস ভাড়া বেশী নেবার বিষয়টা মালিকরা অস্বীকার করেন। তবে সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলেন ঈদের আগে পরে কটাদিন সব সময় একটু বেশী নেয়া হয়। যুক্তি হিসাবে বলেন ঢাকা থেকে ফেরার সময় যাত্রী খুব একটা পাওয়া যায়না। তাছাড়া যানজটের কারনে টিপ মিস হচ্ছে ফলে লোকসান পোষাতে একটু বেশী নেয়া। মাত্র কটাদিন। তারপর সবঠিক হয়ে যাবে।

গ্রাম থেকে কর্মস্থলে ফেরা মানুষদের পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় কাপড় চোপড়ের ব্যাগের পাশাপাশি সাথে আলাদা ব্যাগ রয়েছে। সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন সংরক্ষন করা কোরবানীর মাংশ আর গ্রামের টাটকা শাকস্বব্জী। এনিয়ে ট্রেনে ঝামেলা না করলেও বাস হেলপাররা একটু ঝামেলা করছে। একজন যাত্রী দশকেজির বেশী মালামাল নিতে পারবেনা বলে কাউন্টারে পোস্টার ঝুলিয়েছে। অবশ্য তাদের বলে কয়ে কিংবা হেলপারের হাতে চা পান খাবার জন্য বিশ পঞ্চাশ টাকা ধরিয়ে দিলে বক্সের মধ্যে সযত্নে রাখার দৃশ্য নজর এড়ায়না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন