গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি জনগণের সঙ্গে যে প্রতারণা করেছেন সে জন্য তাকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি।
শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে নির্বাচন ও ভোটকে জাদুঘরে পাঠানোর সব বন্দোবস্ত করে সিইসি জনগণের সঙ্গে যে প্রতারণা করেছেন সে জন্য তাকে চরম মূল্য দিতে হবে।
রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন গাজীপুরের নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হওয়ার ‘সার্টিফিকেট’ দিয়ে ভোট ডাকাতিকেই প্রশ্রয় দিল।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে গাজীপুর ও খুলনাতে যে নাটক মঞ্চস্থ করা হল তাতে ভোটাররা ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে করেন বিএনপির এ নেতা।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহায়তায় সরকার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আরেকটি প্রতারণার নির্বাচন উপহার দিল। এই নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ তৃপ্তির ঢেকুর তুললেও দেশে-বিদেশে এটি কলঙ্কিত নির্বাচনের আরেকটি ইতিহাস হয়ে রয়ে গেল।
‘ভোটকেন্দ্র দখল করে সিল মারার দৃশ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শত শত কেন্দ্রের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে’, যোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ইতোমধ্যে গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতির আনন্দ-উল্লাসে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উন্নয়ন সহযোগী দেশসহ দাতা সংস্থা ও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম।
তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমকে সরকারের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। দেশের অন্যান্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেন্দ্র দখল করে সিল মারার যেসব দৃশ্য প্রকাশ হয়েছে, ন্যূনতম লজ্জাবোধ থাকলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করত।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ তো আন্তর্জাতিকভাবে স্বৈরাচারের স্বীকৃতি আগেই পেয়েছে, তাই ভোট ডাকাতির নির্বাচন নিয়ে ওবায়দুল কাদেরদের গলাবাজি থামবে না এটিই স্বাভাবিক। তারা সব লজ্জার ভূষণ খুলে ফেলেছে।
ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, আপনারা বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে জনগণের সঙ্গে যে উপহাস ও তামাশা করছেন, তার জবাব জনগণের কাছে দিতেই হবে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার অপরাধে আপনাদের বিচার আর বেশি দিন বিলম্ব হবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পর পরই চ্যালেঞ্জ দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন- ‘গাজীপুরে ৯টির বেশি কেন্দ্রে অনিয়ম কেউ দেখাতে পারবে না’।
‘কাদের সাহেবকে বলতে চাই- গতকাল ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, গাজীপুরে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। আর আমরা বলতে চাই- আমাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ আছে, গাজীপুরে প্রায় সব কেন্দ্র দখল করে জালভোটের মহোৎসব চলেছে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে গাজীপুরে ভোটের দিনেও বিএনপি নেতাকর্মী, ভোটার ও সমর্থকদের গণগ্রেফতার চলেছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। তাদের মারধর করে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেসব এজেন্ট জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেছে, তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে।
অনেককে ভোট শেষ হওয়ার পর দূরে কোথাও অথবা আশপাশের জেলায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অনেকের হদিস মিলছে কারাগারে। আবার বেশ কিছু বিএনপি নেতাকর্মীর এখনও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের বাসভবনে হামলা চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাসার সব সিসি ক্যামেরা খুলে ফেলা হয়েছে।
বাসার ভাড়াটিয়াদের বাসা ছেড়ে দেয়ার হুমকিসহ তাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন