রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

জলবায়ু পরিবর্তনে ২০৫০ সালে ভারতে মানুষের জীবন যাত্রার মান হ্রাস পাবে

টাইমস অব ইন্ডিয়া : | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৮, ১২:০১ এএম

প্রতিরোধহীন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ ভারতের জিডিপি ২.৮ শতাংশ কমে যাবে ও প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা অর্থাৎ ৬০ কোটি মানুষের জীবন যাত্রার মান হ্রাস পাবে। বিশেষ করে বিদর্ভসহ মধ্য ভারতের মারাত্মক উষ্ণতাকবলিত জেলাগুলোর মানুষ এর শিকার হবে। এর ফলে অর্থনৈতিক ব্যয় ১০ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ^ব্যাংকের এ ধরনের প্রথম এক গবেষণায় বৈশি^ক উষ্ণতার কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনের ফলে অর্থনীতির উপর তার প্রভাবের কথা বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত দক্ষিণ এশিয়ার হটস্পট নামক এ গবেষণায় বলা হয়েছে, প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ২ ডিগ্রি বৈশি^ক উষ্ণতা হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও ভারতের জিডিপি ২ শতাংশ হ্রাস পাবে। জিডিপি ২.৮ শতাংশ হ্রাস পেলে ২০৫০ সাল নাগাদ ভারতের ক্ষতি হবে ১.১ ট্রিলিয়ন ডলার। গবেষণায় বলা হয়, মারাত্মক উষ্ণতা কবলিত জেলাগুলোতে অর্থনৈতিক ব্যয় গড়ে ৯.৮ শতাংশ হ্রাসের আর্থিক পরিমাণ হবে ৪শ’ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
জলবায়ু হটস্পট কী?
এটি এমন একটি স্থান যেখানে গড় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ভবিষ্যতে জীবন মানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রিপোর্টে বলা হয় যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলো উপকূলীয় বা পাহাড়ি এলাকাগুলোর চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মধ্য ও উত্তর ভারতে এর সর্বোচ্চ প্রভাব পড়তে পারে। রাজ্যগুলোর মধ্যে ছত্তিশগড় ও মধ্য প্রদেশে কার্বণ প্রচন্ডতা বা স্বাভাবিক দৃশ্যপটে ২০৫০ সাল নাগাদ জীবন যাত্রার মান ৯ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
গবেষণায় ভারতের সর্বোচ্চ কৃষি বিপর্যয়ের স্থান বিদর্ভ অঞ্চলকে জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্দশার কেন্দ্রস্থল হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে। রিপোর্টে যে দশটি প্রধান ‘হটস্পট’ জেলার কথা বলা হয়েছে, তার সাতটিই বিদর্ভে। এ সব জেলার প্রত্যেকটিতে বাধাহীন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ জীবন যাত্রার মান ১১ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পাবে।
এ গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক অর্থনীতিবিদ মুথুকুমারা মনি বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি হচ্ছে এক ধীরগতির বিপর্যয় যা নিয়ে কেউ কথা বলে না। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের গবেষণায় প্রধান গুরুত্ব আরোপ করা হয় চরম পরিস্থিতির উপর গত ৫০-৬০ বছর ধরে ঘটে চলা যে ক্রমপরিবর্তনকে মানুষ উপেক্ষা করে আসছে।
এ রিপোর্টে বলা হয়,তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যেমন কৃষি উৎপাদন, স্বাস্থ্য, অভিবাসন ও অন্যান্য ক্ষেত্র। জলবায়ু সংবেদনশীল দৃশ্যপটের (যেখানে নিঃসরণ রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে) আওতায় ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতে গড় তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং কার্বণ-নিবিড় দৃশ্যপটে ১.৫-৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আবহাওয়ার গড় পরিবর্তন কিভাবে জীন যাত্রার মান প্রভাবিত করে সে বিষয়ে জানতে জলবায়ু তথ্য-উপাত্তের সাথে বাসস্থান ভিত্তিক জরিপের সমন্বিত বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায় যে ভারতে বর্তমানে প্রায় ৬০ কোটি মানুষ এমন স্থানগুলোতে বাস করে যেগুলো বাধাহীন জলবায়ু পরিবর্তন দৃশ্যপটের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ মাঝারি বা মারাত্মক হটস্পট হয়ে উঠবে।
মনি বলেন, আমাদের পদ্ধতি বিজ্ঞান বিশ^ব্যাংকের বাইরে ভিতরে ও বাইরে ব্যাপকভাবে সমদৃষ্টিপূর্ণ রয়েছে। আমরা এ বিশ্লেষণের বলিষ্ঠতার ব্যাপারে প্রত্যয়ী।
গবেষণায় কার্বণ নিবিড়তা ও জলবায়ু-সংবেদনশীল দৃশ্যপট উভয়ের ভিত্তিতে ২০৫০ সালে ভারতের হটস্পট মানচিত্র প্রণয়ন করেছে। কার্বণ-নিবিড় দৃশ্যপট আরো মারাত্মক হটস্পট প্রদর্শন করেছে যেখানে সকল স্থানে জীবন যাত্রার মান ৮ শতাংশ হ্রাস হতে পারে। বিশ^ যদি সিএইচজি বিষয়ে ব্যবস্থা নেয় তাহলে ভারত বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি পরিহার করতে পারে।
মনি ব্যাখ্যা করেন যে, আমাদের যুক্তি নীতিপ্রণেতাদের জন্য পথনির্দেশ করবে। তারা উষ্ণতা কবলিত এলাকাগুলোকে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিতে এবং তাদের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন