রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

প্রদেয় ক্ষতিপূরণে রোডম্যাপ ঘোষণায় উন্নত দেশগুলোকে রাজি করাতে হবে

জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে ১৬ দফা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

আসন্ন জলবায়ূ সম্মেলনকে সামনে রেখে সময়াবদ্ধ রোডম্যাপ, স্বাচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে ১৬ দফা দাবি পেশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংস্থার পক্ষে এসব দফা পেশ করা হয়। সংস্থাটি মনে করছে, আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর উচিৎ হবে উন্নত দেশের প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণবাবদ প্রদেয় অর্থ সময়াবদ্ধভাবে সরবরাহে একটি রোডম্যাপ ঘোষণায় উন্নত দেশগুলোকে রাজি করানো।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, প্যারিস চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহকে প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিল প্রদান ঐচ্ছিক রাখা, কোভিড-১৯-এর প্রভাব এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম এবং উন্নত দেশের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তহবিল সংকটের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ইতোমধ্যে প্রাক-শিল্প যুগ থেকে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বব্যাপী ঘনঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও দাবানলের ঘটনা প্রকটতর হয়েছে। অথচ কার্বন নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি, বিশেষ করে কয়লার ব্যবহার ও রপ্তানি বেড়েছে এবং কয়লাভিত্তিক জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়নও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ রকম একটি বৈশি^ক পরিস্থিতিকে সামনে রেখে মিশরের শার্ম আল শেখে আগামী ০৬ থেকে ১৮ নভেম্বর ২০২২ ইউনাইটেড ন্যাশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর ২৭তম সভা বা কনফারেন্স অব পার্টিজ (কপ২৭) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। টিআইবি মনে করছে, ইউক্রেন যুদ্ধপ্রসূত অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলার বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জসমূহের ওপর প্রাধান্য অব্যাহত রাখতে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানে উন্নত দেশসমূহ ব্যর্থ হয়েছে। যা বৈশি^ক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত। জলবায়ু তহবিল ‘উন্নয়ন সহায়তার বাড়তি’ এবং ‘নতুন ও অতিরিক্ত’ হলেও কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই উন্নয়ন সহায়তার সাথে জলবায়ু অর্থায়নকে মিলিয়ে গত দুই বছরে তারা মাত্র ৮৩.৩ বিলিয়ন প্রদান করেছে। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল। উন্নত দেশগুলোর বাধার কারণে ২০২১ সালের জলবায়ু সম্মেলনে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আলাদা তহবিল গঠন করা সম্ভব হয়নি। উপরন্তু ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহে খাদ্য-নিরাপত্তা, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসংক্রান্ত কার্যক্রমে তারা সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। তাই সার্বিক বিবেচনায় প্যারিস চুক্তির আলোকে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, প্রশমন ও অর্থায়নকে গুরুত্ব দিয়ে আসন্ন সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহকে তাদেরই স্বার্থে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।

টিআইবি’র পেশকৃত ১৬ দফার মধ্যে রয়েছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে উন্নত দেশগুলোকে ২০২০-২০২৫ মেয়াদে মোট ৬০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানে একটি সময়াবদ্ধ রোডম্যাপ প্রস্তুতের সমন্বিত দাবি উত্থাপন করতে হবে। জিসিএফসহ জলবায়ু তহবিলে ঋণ নয়, অভিযোজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে ক্ষতিপূরণের অর্থ অনুদান হিসেবে প্রদান করতে হবে, ক্ষয়-ক্ষতিবিষয়ক আলাদা তহবিল গঠন করতে হবে এবং ঝুঁকি বিনিময়ে বিমার পরিবর্তে অনুদানভিত্তিক অর্থ প্রদান করতে হবে। প্রস্তাবিত ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান আইইপিএমপিতে কৌশলগতভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ খাতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সংক্রান্ত সকল প্রকল্পে সুশাসন, শুদ্ধাচার ও বিশেষ করে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন