মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

সফল মুমিনের গুণাবলী

মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহসানুল হক মুজাদ্দেদি | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

যে ব্যক্তি মহান আল্লহ রাব্বুল আলামীনের একত্ববাদ ও রাসূল (সা.) এর রিসালাতে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁর প্রতিটি হুকুম-আহকাম মেনে চলে তাকেই মুমিন বলে। অন্যভাবে বলা যায়, মহান আল্লাহ তায়ালা, তাঁর প্রেরিত সকল নবী, রাসূল, ফিরিশতা, আসমানী কিতাব, পরকাল ও তকদীরের ওপর পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে বিশ্বাস স্থাপন করে আর ঈমান গ্রহণের পর যে ব্যক্তি ঈমান থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি তিনিই প্রকৃত মুমিন। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীম ও পবিত্র হাদীস শরীফে মুমিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে মুমিন বান্দার কিছু গুণাবলী ও বৈশিষ্ট জেনে নিই।
কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রকৃত ঈমানদার তো তারাই আল্লাহর জিকির হলে যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয়, তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সুরা আনফাল : আয়াত ২)। একজন মুমিন আল্লাহর উপর ঈমান আনার পর আর কখনো সন্দেহে পড়ে না। সে পূর্ণতার সাথে আল্লাহর উপর আস্থাশীল হয়। যেমন আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন, ‘মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর প্রতি ঈমান আনার পর আর সন্দেহে পড়ে না এবং নিজেদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, এরাই সত্যবাদী।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১৫)। ‘তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রভূকে ডাকে না।’ (সুরা ফুরকান : ৬৮)। মুমিনরা যে কোন সংবাদকে যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো স¤প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও। এরপর নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ (সুরা হুজুরাত : আয়াত ৬)।
অহতেুক ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে মুমিন বান্দাহরা এড়িয়ে চলেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না আর অহতেুক বিষয়ের পাশ দিয়ে যখন তারা গমন করে, তখন তারা ভদ্রভাবে পাশ কাটিয়ে যায়।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৭২) সফল মুমিন কারা? এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, ‘মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী-নম্র, যারা অর্নথক কথার্বাতা বলেনা, যারা জাকাত দান করে থাকে এবং যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে সংযত রাখে। (সুরা মুমিনুন : আয়াত : ১-৪)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অন্যের সহায়ক। তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদের ওপর আল্লাহ দয়া করবেন।’ (সুরা তাওবাহ : ৭১)
মুমিন জিন্দেগীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মহব্বত ও দয়া। এ জন্য মুমিনকে মহব্বত ও দয়ার প্রতীক বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই সৎকর্মশীল মুমিনদের জন্য দয়াময় আল্লাহ তাদের জন্য (মানুষের অন্তরেও) মহব্বত পয়দা করে দেন। (সূরা মরিয়ম : আয়াত ৯৬)। নূর নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন,‘মুমিন মহব্বত ও দয়ার প্রতীক। ঐ ব্যক্তির মধ্যে কোন কল্যাণ নেই , যে কারো সাথে মহব্বত রাখে না এবং মহব্বত প্রাপ্ত হয় না’ (মুসনাদে আহমাদ)। অবশ্যই এই ভালবাসা হবে নিতান্তই আল্লাহ তায়ালার জন্য। অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে ‘ওই ব্যক্তি তার ঈমানকে দৃঢ় করল যে কাউকে ভালবাসল আল্লাহর জন্য, কাউকে ঘৃণা করল আল্লাহর জন্য, কাউকে কোন কিছু দিল আল্লাহর জন্য আর কাউকে কোন কিছু দেয়া হতে বিরত থাকল কেবল আল্লাহর জন্য’ (তিরমিজি)।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সফল মুমিন হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।
সূরা আনফালের ২৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তোমাদের উপর ন্যস্ত আমানতের খিয়ানত করো না। অথচ তোমরা এর গুরুত্ব জান।’ আসলে মুমিন চরিত্রে খিয়ানতের কোন স্থান নেই, তিনি বরাবরই রক্ষক হবেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমার মধ্যে চারটি জিনিস থাকে তবে পার্থিব কোন জিনিস হাত ছাড়া হয়ে গেলেও তোমার ক্ষতি হবে না। ১. আমানতের হিফাজত; ২. সত্য ভাষণ; ৩. উত্তম চরিত্র; ৪. পবিত্র রিযিক।’ (আহমাদ।) অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি নবী করিম (সা.) হতে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি তোমার নিকট আমানত রেখেছে তার আমানত তাকে ফেরৎ দাও যে ব্যক্তি তোমার আমানত আত্মসাৎ করে তুমি তার আমানত আত্মসাৎ করো না।’ (তিরমিজী, আবুদাউদ।) মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট হল আমানতের রক্ষণাবেক্ষণকারী। মুমিন কখনো খেয়ানতকারী হতে পারে না। এটা মুমিনর চরিত্রের বিপরীত কাজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
soyedmdkabir ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৬:০৯ পিএম says : 0
ঈমান সম্পর্কে আমরা পূর্ব থেকে যা জেনে আসছি,আল্লাহর প্রতি ঈমান, ফেরেস্তাদের প্রতি ঈমান ইত্যাদি, সকল ঈমানের মুল ঈমান হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঈমান। আল্লাহর প্রতি ঈমান কি এটাই আমাদের সমাজের মানুষ সঠিক ভাবে জানেনা,অথচ আল্লাহর প্রতি ঈমানের সুনির্দিস্ট বিষয় রয়েছে সেই বিষয় হলো জীবনের সকল খেত্রে আল্লাহকে একমাত্র রব-সমাজ ও রাস্ট্র পরিচালনায় সার্বভৌমত্ব,আইন বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্ব গ্রহন করা।এটাই আল্লাহর প্রতি মূল ঈমান।সুরা আল ইমরানে -১৯৩ নাম্বার আয়াতে আল্লাহর প্রতি ঈমানের বিষয় আল্লাহ নিজেই নির্ধারন করে দিয়েছেন
Total Reply(0)
Chayon ২৪ জুলাই, ২০২০, ৮:০৫ পিএম says : 0
খুব ভাল
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন