ইসরাইলকে প্রধানত ইহুদি রাষ্ট্র বলে চিত্রিত করে সে দেশের পার্লামেন্টে এক বিতর্কিত আইন পাসের পর সেখানকার আরব সংখ্যালঘুরা তীব্র সমালোচনা করেছেন। ওই আইনে হিব্রæ ভাষাকেও ইসরাইলের সরকারি ভাষা হিসেবে আরবির ওপরে স্থান দেয়া হয়েছে। নেসেটের আরব এমপিরা এর ক্রুদ্ধ প্রতিবাদ জানিয়ে বিলের কপি ছিঁড়েছেন, কালো পতাকা উড়িয়েছেন। পিএলও-র মুখপাত্র হানান আশরাভি এর তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, এই আইন ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে বর্ণবিভেদ, বৈষম্য, জাতিগত শুদ্ধি অভিযান এবং গোষ্ঠীগত দ্ব›দ্বকে লাইসেন্স দিয়েছে। ইসরাইলের জনসংখ্যার ২০ শতাংশই হচ্ছে আরব সংখ্যালঘু। তারা মনে করছে, ইসরাইল যে তাদেরকে দ্বিতীয় নাগরিকে পরিণত করছে -এটি তার আরেকটি প্রমাণ। ইসরাইলের জনসংখ্যা ৯০ লাখ, এর মধ্যে ২০ শতাংশ হচ্ছে আরব- যাদের অনেকেই নিজেদের ফিলিস্তিনি বলে পরিচয় দেন। ইসরাইল রাষ্ট্রের আইনে তারা সমান অধিকার ভোগ করেন, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তাদের অভিযোগ যে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আবাসনের ক্ষেত্রে তারা ইহুদি ইসরাইলিদের চেয়ে কম সুবিধা পেয়ে থাকে। ইসরাইলি পার্লামেন্টের আরব এমপিসহ কিছু সমালোচক একে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের সময়কার বর্ণবৈষম্যমূলক শাসন বা অ্যাপার্থাইড-এর সাথে তুলনা করেছেন। ইসরাইলকে ইহুদি রাষ্ট্র ঘোষণা রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত। এর আগে কখনো আইনে পরিণত করা হয়নি। কিছু ইসরাইলি রাজনীতিবিদ মনে করেন, ইহুদিদের রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলের প্রতিষ্ঠার যে আদি মূলনীতি- সেগুলো এখন হুমকির মুখে পড়েছে এবং ভবিষ্যতে এ ব্যাপারটা অপ্রাসঙ্গিক বা অচল হয়ে পড়তে পারে। অনেকে ইসরাইলি আরবদের উচ্চ জন্মহার নিয়ে ভীত। অনেকে মনে করেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যার যদি শেষ পর্যন্ত দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ছাড়া অন্য কোনো রকম মডেলে সমাধান হয়- তখন ইসরাইলের ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। একারণেই এরা দাবি করছিলেন, ইসরাইল রাষ্ট্রের ইহুদি চরিত্র আইন করে সুরক্ষিত করা হোক। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু একাধিকার বলেছেন যে, ফিলিস্তিনিদের সাথে শান্তি চুক্তি হতে হলে তাদেরকে ইসরাইলকে একটি ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং ফিলিস্তিনিরা যে এ স্বীকৃতি দিচ্ছে না- এটাই শান্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা। কিন্তু ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি কখনোই ইসরাইলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন না। তার যুক্তি ফিলিস্তিনিরা অনেক আগেই ইসরাইল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে, এর চেয়ে বেশি কিছু তাদের কাছ থেকে আশা করা উচিত নয়। স¤প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী বলে স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে মার্কিন দূতাবাস নিয়ে যাবার ঘোষণার তীব্র সমালোচনা হয়েছে। সমালোচকরা বলেছেন, এর মাধ্যমে ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়াকে গুরুতর সংকটে ফেলে দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কোনো আলোচনাই হচ্ছে না এবং শান্তি প্রক্রিয়া এখন কার্যত মৃত বলে অনেকে বলে থাকেন। এ অবস্থায় ইসরাইল যখন নিজেকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে বসলো - তার কী প্রভাব শান্তি প্রক্রিয়ার ওপর পড়ে, তা দেখার বিষয়। ইসরাইলে-ফিলিস্তিন শান্তি-আলোচনার এক প্রধান বাধা জেরুজালেম শহরের মর্যাদা এবং ইহুদি বসতি স্থাপনের প্রশ্নগুলো। কিন্তু নতুন আইনে ‘সম্পূর্ণ এবং একত্রিত’ জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এটা আন্তর্জাতিক আইনেরও বিরোধী - যাতে পূর্ব জেরুজালেমকে অধিকৃত এলাকা হিসেবে দেখা হয়। এ আইনের এক পূর্বতন খসড়ায় একটি ধারায় এমন সব বসতি তৈরির কথা ছিল - যাতে শুধু ইহুদিরাই থাকতে পারবে। এমন কিছু ইহুদি জনগোষ্ঠী আছে- যারা তাদের পাড়ায় ফিলিস্তিনিরা জমি কিনলে তাতে আপত্তি করে। নেশন স্টেট বিলের চূড়ান্ত খসড়ায় তাদের দাবি মানা না হলেও ইহুদি বসতি গড়ে তোলাকে উৎসাহিত করার কথা বলা হয়। ফলে এটা স্পষ্ট যে আগামী দিনের শান্তি আলোচনায় এ বিষয়গুলো নতুন বিতর্ক তৈরি করবে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইল যে ধরনের শাসনব্যবস্থা চালু করেছে - তাকে সমালোচকরা প্রায়ই অ্যাপার্থেইড-এর সাথে তুলনা করেন। ইসরাইল অবশ্য জোর দিয়ে তা অস্বীকার করে থাকে। ২০১১ সাল থেকেই এ আইনের খসড়া নিয়ে আলোচনা চলছে এবং এতে বহু সংশোধনীও এসেছে। বৈষম্যমূলক বলে সমালোচিত অংশগুলো বাদ দেয়া হয়েছে বা এর ভাষাগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন