জুয়েল মাহমুদ, মাহবুব আলম ও হাসান মাহমুদ
বৈশাখ এলো বুঝি ঝড়ো হাওয়ার সুখ নিয়ে/সুবুজ ক্যাম্পাসকে উৎসবে রাঙিয়ে/বেদনার যত স্মৃতি হয়ে যাক নষ্ট/নতুন বছর এসে ধুয়ে দিক কষ্ট। হ্যাঁ পয়েলা বৈশাখের সকালের সূর্যটা যেন কষ্টগুলোকে ধুয়ে দিয়ে অন্যরকম রোদ্রোজ্জল হাসিতে হাস্যজ্জল। ক্যাম্পাস অঙ্গিনায় যুক্ত করেছে নতুন এক আবহাওয়া। চারদিকে সাজ সাজ রব। লাল-সাদা পোশাকের সমাহার। বাজছে ঢোল, ডুগডুগি। পথে পথে ভেঁপু। গ্রামীণ সংস্কৃতিকে ধারণ করে পুরো শিক্ষাঙ্গন ভেসেছে বিপুল উচ্ছ্বাসে। শিকড়ের টানে ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণী-পেশা, বয়স নির্বিশেষে সব মানুষ শামিল হয়েছে বৈশাখীর এ উৎসবে। ভেদাভেদ ভুলে উৎসবের রঙে ১৪২৩ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিয়েছে শিক্ষাঙ্গনের সারথিরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিন নব উল্লাসে মেতে উঠবে কোটি বাঙালির হৃদয়। এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপন ১৪২৩ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখে ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ বছর ‘মা ও শিশু’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শোভাযাত্রাটি চারুকলা থেকে বের হয়ে রূপসী বাংলা হোটেল চত্বর ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হয়। থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের উদ্যোগে নাট-ম-ল প্রাঙ্গণে বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে পট-গান ও দেশের গান। এছাড়া বাংলা বিভাগ, সংগীত বিভাগসহ বিভিন্ন সংগঠন বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
জবি ক্যাম্পাসে মহাসমারোহে বাংলা বর্ষবরণ পালিত
বিশাল মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদির মধ্যদিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয় বাংলা নববর্ষ-১৪২৩। বৈশাখের প্রথম দিনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকাল নয়টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এবং সভাপতিত্ব করেন ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। মঙ্গলশোভা যাত্রাটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে রায়সাহেব বাজার, তাঁতী বাজার মোড়, বংশাল হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিকৃতি হচ্ছে কচ্ছপ। এছাড়াও শোভাযাত্রায় খরগোশ, পুতুল, পাখি, বাঘের মুখোশ, পেঁচার মুখোশ, পাখির মুখোশ, রাজা-রানীর মুখোশ, ঘোড়া, সিকা, সরা, অন্যান্য লোকজ ঐতিহ্য, অলংকৃতপাত্রসহ গ্রামবাংলার নৈসার্গিক দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভায় অংশগ্রহণকারীরা নানা রঙ-বেরঙের মুখোশ ও নকশা, ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে অংশগ্রহণ করে।
জাবিতে উৎসবের রঙে পয়েলা বৈশাখ
অন্যদিনের ছেয়ে নববর্ষের সকালের ক্যাম্পাসটা যেন অন্যরকম চিত্র ধারণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ডেইরী গেট থেকে শুরু করে প্রতিটি সড়কে রঙ-বেরঙের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুুন দিয়ে সজ্জিত। সড়ক আর দেয়ালগুলোতে ফুটে উঠেছে বাহারি রকমের আল্পনা। সবুজ এ আঙ্গিনায় তরুণীরা লাল-সাদা শাড়ি, মাথায় ফুল দিয়ে হাঁটছে। ছেলেরা পাঞ্জাবি, ফুতুয়া আর মাথায় গামছা দিয়ে ঘুরছে। তাই চির চেনা এ সবুজ লালমৃত্তিকার ক্যাম্পাসটিকে আজকে যেন চিনতে হচ্ছে অন্য রূপে। এ যেন এক জানবিবির সৌন্দর্যকে কয়েকগুণে বৃদ্ধি করেছে। বৈশাখের এ আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ক্যাম্পাসের প্রতিটি স্থানে প্রতিটি চত্ব¡রে। বিশেষ করে শহীদ মিনারের পাশটা ছিল বেশ সরগরম। প্রাচীন খেলাগুলো যেন আরেকবার মনে করছে সবাই। এ যেমন মোরগ লড়াই, বিস্কুট দৌড়, হাঁড়িভাঙ্গা ইত্যাদি। সাথে মহুয়া চত্বরকে নববর্ষের গানে মুখরিত করে রেখেছে বাংলাবিভাগের শিক্ষার্থীরা। আনন্দের এ মাত্রাটা একটু বেশিই লক্ষ্য করা গেছে ৪৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের মাঝে। কারণ ভার্সিটি জীবনে এটাই তাদের প্রথম বৈশাখ বরণ। তাইতো ৪৫তম ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নাদিয়া বলছিলেন, সারা জীবন পরিবারের সাথে বৈশাখ পালন করতাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়ের হাতের পান্তা আর ইলিশ খেতাম। এদিকে মহাসমারোহে এ পয়েলা বৈশাখকে বরণ করে নিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৩ দিনব্যাপী মেলা। মেলায় গ্রাম বাংলার সংস্কৃতিক ঐতিহ্য লোকজ খেলনা মাটির তৈরি হরেক রকমের পতুল, গয়না, আসবাপত্র পাওয়া যাচ্ছে। সজিয়ে রাখা হয়েছে কারুপণ্যের বিভিন্ন পসরা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্র সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে থাকছে নৃত্য, নাটক আর মনোরম সাংস্কৃতিক আয়োজন।
পহেলা বৈশাখে চবিতে নানা কর্মসূচি
পহেলা বৈশাখ ১৪২৩ বঙ্গাব্দ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানা আয়োজন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বর থেকে শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুল তলায় বসবে মূল অনুষ্ঠান। এরপর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পীদের পরিবেশনা, বলি খেলা, পুতুল নাচ, কাবাডি, বউচি, লাখি খেলা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা তো আর্কশনের কেন্দ্রবিন্দু। সবশেষে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বরেণ্য শিল্পী আবদুল জব্বার ও মনোরঞ্জন ঘোষাল এবং বাউল শিল্পী রণেশ ঠাকুর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
নানা আয়োজন ও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ বরণ করা হয়েছে। দিনটিকে বরণ করার জন্য এই দিন ক্যাম্পাসে আগমন ঘটে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর। এই দিন শিক্ষার্থীরা মেতে উঠেন ঢাক-ঢোলের বাজনার তালে তালে । বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নতুন বর্ষকে বরণ করার জন্য ভোর থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ক্যাম্পাস তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠে। রঙ-বেরঙের শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরে ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়ায় শিক্ষার্থীরা। চলে বন্ধু-বান্ধবীর আড্ডা আর প্রেমিক-প্রেমিকার খুনসুটি। এভাবে বৈশাখের রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে উঠে রাবি ক্যাম্পাস। এদিকে পহেলা বৈশাখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ক্যাম্পাসের মূল আয়োজনে ছিল চারুকলা অনুষদ। চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে পরিবেশিত হয় বিভিন্ন লোকজ সঙ্গীত, নৃত্য, নাটকসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবার অনুষদ প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছিল।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটে আবহমান বাংলার চির ঐতিহ্যবাহী ১লা বৈশাখ উৎসব সাড়ম্বরে পালিত হয়। বাংলা নববর্ষ উদযাপন কমিটি-১৪২৩-এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত দিনব্যাপী কর্মসূচির শুরুতেই ঢোল, খোল, করতাল আর বাঁশির বাজনার তালে বহু বর্ণিল ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, মুখোশ শোভিত বৈশাখী শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয়। চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যমন্ডিত ষাঁড়, রাজহাঁস, প্রজাপতি ইত্যাদির বিরাট প্রতিকৃতি শোভিত বিশাল শোভাযাত্রার পুরোভাগে থেকে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আমিনুল হক ভূইয়া নেতৃত্ব দেন। শোভাযাত্রা পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে মুক্তমঞ্চে এসে সমাপ্ত হয়। প্রত্যেক বিভাগ নিজ নিজ কর্মসূচি নিয়ে এবার কেন্দ্রীয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
নানা আয়োজন ও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ বরণ করা হয়েছে। দিনটিকে বরণ করার জন্য এই দিন ক্যাম্পাসে আগমন ঘটে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর। এই দিন শিক্ষার্থীরা মেতে উঠেন ঢাক-ঢোলের বাজনার তালে তালে। সকাল ৯টায় কলেজের প্রিন্সিপাল গোলাম ওয়াদুদের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সকাল ১০টায় আবার ফিরে আসে ক্যাম্পাসে। এরপর শুরু হয় আনিসুল হকের প্রযোজনায় শাহরিয়ার আল মামুনের উপস্থাপনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন