বিশ^বিদ্যালয় যে কোনো শিক্ষার্থীর জন্যই আকাক্সিক্ষত বিষয়। তবে নবীনদের ক্ষেত্রে উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি বিরাজ করে ভয়ের শঙ্কা। একটি শিক্ষার্থী যখন বিশ^বিদ্যালয় জীবনে সবে পা রেখে, চারপাশের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার পাশাপাশি থাকে বিশ^বিদ্যালয়ের ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ নামক শব্দের আতঙ্ক। দক্ষিণ এশিয়ায় বিষয়টি আরো দূর এগিয়ে গেছে। শুধুমাত্র আমাদের পার্শ^বর্তী দেশ ভারতে প্রতিবছর অনেক নবীন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে এই ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ এর মানসিক ও শারীরিক চাপ সহ্য করতে না পেরে। যেটাকে এক কথায় বলে ‘র্যাগিং’।
তবে ধারা থেকে সরে এসে নিজেরাই নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখছে সিলেটের সবুজে ঘেরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ে যখন নবীনকে প্রথমদিকে সিনিয়রদের ভয়ে তঠস্থ থাকতে হয়, তখনি এই বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত নানাবিধ আয়োজনে নবীনদের বরণ করে নিতে। যাতে করে আসলে সিনিয়র-জুনিয়রের সম্পর্কের তিক্ততা বুঝতেই পারেনি নবীনরা। তবে এই আয়োজন থেমে নেই।
২০১৫/১৬ সেশনের (বিভাগের ১৮তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা প্রথম থেকেই যেন মুখরিত হয়ে আছে বিভাগের সবার আন্তরিকতায়। ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সময় করে এরই মাঝে অনানুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেয় এদের। ধারাবাহিকতায় মার্চের ১৫ তারিখে এদের বরণ করে নেয় বিভাগের ১৬তম ব্যাচ।
শাসন নয়, বরং ভালোবাসায় পরিবারের সদস্যদের আপন করে নেয়ার চেয়ে আনন্দের দ্বিতীয়টি কি আছে এমনটিই জানালেন ১৬তম ব্যাচের ছাত্র সাইফ।
ক্লাস-পরীক্ষার ফাঁকে সময় হয়ে উঠছিলো না ব্যবসায় প্রশাসন পরিবারের নতুন সদস্যদের সাথে বসার। অবশেষে সে মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৫ মার্চ বেলা ১২টা বাজতে না বাজতেই নবীন-প্রবীণের পদচারণায় মুখরিত শাবির সুউচ্চ শহীদ মিনার। মিনিট দশেকের মধ্যেই সংখ্যাটা হয়ে দাঁড়াল শ’য়ের কাছাকাছি। শহীদ মিনারের বিশালাকার স্থাপনার র্যালিতে গোল করে বসা। ‘একই বিভাগে পড়ি, তোমরা আমাদের ছোট ভাইবোন। অথচ মুখোমুখি হলে শুধুমাত্র না চেনার কারণে একে অপরকে এড়িয়ে যাওয়া হয়, যেটা ঠিক না’ বলেই শুরুটা ১৬তম ব্যাচের। একে একে নাম পরিচয় আদান-প্রদান। দেখা গেল, নিজের জেলা এমনকি স্কুল-কলেজেরও অনেক পরিচিত পাওয়া গেল। এরপর ক্যাম্পাসে নবীন হওয়ার অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে শেয়ার করলো কামাল, সূচনা। ‘নতুন ক্যাম্পাস, কিভাবে পড়বে, কিভাবে পড়লে ভালো রেজাল্ট করা যায়’ জুনিয়রদের সাথে এসব কৌশল শেয়ার করলো ব্যাচে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী সিনিয়র অনিন্দিতা দে। নতুন পর্যায়ে কি করা উচিত না করা উচিত, বিভাগে কি করা উচিত এসব নিয়ে কথা বলেন তানহার, হিমেল, মিটু ও প্রতিবেদক নিজে। কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের নবীন অবস্থায় যেসব সমস্যার সম্মুখীন সিনিয়ররা হয়েছিল সেসব সমস্যায় যাতে জুনিয়ররা না পড়ে সে দিকটাও বলা হলো।
একে একে সময় বয়ে যায়। দুপুরে বসা, তাই যদি খাবার না থাকে তাহলে পরিপূর্ণতা পায় না। তবে তার আগে সবাই মিলে তোলা হলো গ্রুপ ছবি। সাথে হালের নতুন ক্রেজ সেলফি তো আছেই।
ষ মেহেদী কবীর
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন