বর্ষার মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ঘনঘোর মেঘমালা বাংলাদেশের ওপর জেঁকে বসেছে। গত সপ্তাহে উত্তর বঙ্গোপসাগর হতে পরে ভারতে কেটে যাওয়া মৌসুমী নিম্নচাপটি বদলে দিয়েছে আবহাওয়া। শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়েই শুরু হওয়া দেশজুড়ে বৃষ্টিপাত আরও তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে এমনটি গতকাল (বুধবার) আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে। দেশের অনেক জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হচ্ছে। বর্ষার অসময়ে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে আসা অসহনীয় ভ্যাপসা গরম ও অনাবৃষ্টিতে অস্বাভাবিক খরার দহন কেটে গিয়ে প্রত্যাশিত বর্ষণে প্লাবিত হচ্ছে নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়, পুকুর-দীঘি, জলাশয় এমনকি গ্রাম জনপদ।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের অনেক জায়গায় ভারী বর্ষণের সতর্কতা রয়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪ হতে ৮৮ মিলিমিটার বর্ষণ) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের ঊর্ধ্বে) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভ‚মিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল দিনভর চট্টগ্রামের আকাশে মেঘ আর সূর্যের লুকোচুরি থাকলেও তিন দিন পর বৃষ্টিপাত হয়নি। মহানগরী ও জেলায় অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলে পানিবদ্ধ এলাকাগুলো থেকে পানি অনেকাংশে নেমে গেছে। তবে সকাল ও বিকেলে ভর জোয়ারের সময় নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর এলাকা পানিতে থৈ থৈ করে। লাখো মানুষের ভোগান্তি অব্যাহত থাকে।
এদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং দেশের উত্তর জনপদ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদ-নদীসমূহে পানি হ্রাস-বৃদ্ধির তারতম্য ঘটছে। উজানে অতিবৃষ্টির কারণে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে নামছে ঢল। সেই সাথে দেশের অভ্যন্তরেও হচ্ছে ভারী বর্ষণ। এতে করে উজানের পানি ভাটির দিকে নামতে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে আরিচা, গোয়ালন্দ, সুরেশ্বর, মুন্সীগঞ্জসহ ভাটির দিকে পানির চাপ বেড়েছে। এসব স্থানে নদীতে ঘূর্ণাবর্ত ও ঘূর্ণি স্রোতের কারণে ফেরি নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নদ-নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি নদী ভাঙনের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
গতকাল পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, দেশের উত্তর জনপদ, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পায়। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল দেশের ৯৪টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৫২টিতে পানি বৃদ্ধি পায়। তবে বিকেল নাগাদ উত্তর চট্টগ্রামের হালদা নদী বিপদসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়। চট্টগ্রাম ও ফেনী অঞ্চলের ফেনী, মুহুরী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ও এর সংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী, মুহুরী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীসমূহের পানি দ্রুত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, ফেনী, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর জনপদের তিস্তা, ধরলা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই নদ-নদীসমূহের পানির সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বিকেলের তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, সিলেটের নদ-নদীর পানি বাড়লেও উত্তর জনপদে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি তেমন বৃদ্ধি পায়নি। চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদীগুলোতে পানি বাড়লেও তা এখন কমতির দিকে রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন