সাধারণ স্বাস্থ্য রক্ষায় যেমন সুষম খাদ্যের প্রয়োজন তেমনি ডায়বেটিসের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয় না। তবে এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে খাদ্যের ব্যাপারে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলা জরুরি। তিনটি বিষয় মনে রাখতে পারলে এই রোগটি আয়ত্তে আনা কোনো ব্যাপার নয়। প্রথমত, নিষিদ্ধ খাবার বর্জন; দ্বিতীয়ত, পরিমাণ মতো খাবার গ্রহণ; তৃতীয়ত, প্রতি ৩-৪ ঘণ্টা পর পর খাবার গ্রহণ।
নিষিদ্ধ খাবারগুলো হল: চিনি, গুড়, মধু, গøুকোজ, খেজুরের রস, কেক, পেস্ট্রি, জ্যাম, জেলি, সিরাপ, মিষ্টি বিস্কুট, হালুয়া, কোল্ড ড্রিংকস, আইসক্রিম, মিষ্টি দই, ইত্যাদি।
পরিমাণ মতো খাবার গ্রহণ: প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের পরিমাণ পৃথক হয়ে থাকে। পরিবারে এক জনের ডায়াবেটিস হলে তাকে যে পরিমাণ খাবার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, সেই পরিমাণ খাবার অন্যদের জন্য নয়। কারণ যদি খাবারের পরিমাণ বেশি হয় তবে রক্তে গøুকোজের মাত্রা বেড়ে যাবে। আর যদি কম হয় তাহলে গøুকোজের মাত্রা কমে যাবে। এই কারণে যার জন্য যে পরিমাণের খাবার নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় তাই খেতে হবে।
সময়মতো খাবার খেতে হবে: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সময় ঠিক রাখা খুবই জরুরি। একেক দিন একেক সময়ে খাবার খাওয়া একেবারে উচিত নয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হবে এবং প্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা পর পর খেতে হবে। অনেকক্ষণ না-খেয়ে থাকা ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য খুবই বিপজ্জনক। এতে বিপাক ক্রিয়ার বিঘœ ঘটে এবং জটিলতা দেখা যায়। আবার দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পরপর খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমানো যায় না।
কেমন খাবার খেতে হবে: চিনি, মিষ্টি, মধু, বাদ দিতে হবে, ভাত-রুটি-আলু পরিমাণ মতো, পাতা জাতীয় ও পানসে সবজি ইচ্ছামতো। টক জাতীয় ফল ইচ্ছামতে। তবে ডায়াবেটিস বা রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণে না-থাকলে মিষ্টি ফল না খাওয়াই উত্তম।
শর্করা জাতীয় খাদ্য: অন্যান্য স্বভাবিক লোকের মতোই শর্করা জাতীয় খাবার দৈহিক ৫০-৬০ ভাগ খেতে হবে। এ ধরনের খাবার শরীরে শক্তি জোগায়। শর্করা প্রধানত দুই প্রকার। চিনিযুক্ত শর্করা ও শ্বেতসারযুক্ত শর্করা। সকল শর্করাই শোষিত হয়ে দেহে গøুকোজে রূপান্তরিত হয়। তবে সহজ শর্করা যেমনÑচিনি, গুড়, গøুকোজ এগুলো খাওয়া মাত্র সরাসরি রক্তে গøুকোজের মাত্রা বাড়ায় আবার শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য ধীরে ধীরে বাড়ায়। এ কারণেই চিনি-গুড় একবোরেই নিষেধ করা হয় এবং শ্বেতসার অর্থাৎ ভাত-রুটি শস্য জাতীয় খাবার সীমিত পরিমাণে খেতে বলা হয়।
শর্করা জাতীয় খাবার : রুটি, ভাত, আলু, বিস্কুট, নুডুলস, চালের গুড়া, পরিকা, ভুট্টা, সাগু, বার্লি, সুজি, চিড়ি, মুড়ি, খই, চিনি, গুড়, গøুকোজ, মধু, সেমাই ইত্যাদি।
আমিষ জাতীয় খাদ্য : আমিষ প্রধানত দু’ধরনের হয়ে থাকে। প্রাণীজ আমিষ ও উদ্ভিদ আমিষ। সাধারণত প্রাণীজ আমিষের চাইতে উদ্ভিদ আমিষের গুণগত মান কম। তবে উভয় প্রকার আমিষই পরিপাক হয়ে অ্যামাইনো অ্যাসিডরূপে রক্তে শোষিত হয়। খাদ্যের মোট ক্যালরির ২০-৩০ ভাগ আমিষ জাতীয় খাবার থেকে আসা উচিত। আমিষ শর্করার মতো রক্তে গøুকোজের মাত্রা বাড়ায় না এবং চর্বির মতো অধিক ক্যালরি উৎপন্ন করে না। তবে এটা শরীর গঠন,বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ করে দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীদেরও আমিষ জাতীয় খাদ্য স্বাভাবিক লোকের মতোই গ্রহণ করতে হবে। আমিষ জাতীয় খাবার হল ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ডাল, বাদাম, সীমের বিচি, সয়াবিন ইত্যাদি।
চর্বি জাতীয় খাদ্য: সারাদিনের খাবারের মোট ক্যালরির ২০-৩০ ভাগ আসা উচিত চর্বি জাতীয় খাদ্য থেকে। তবে সম্পৃক্ত চর্বি যেমন ঘি, ডালডা এবং মাংসের চর্বি যতটা সম্ভব পরিহার করা উচিত। কারণ সম্পৃক্ত চর্বি রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগিøসারাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের সম্পৃক্ত চর্বি যতটা কম সম্ভব খাওয়া উচিত। কারণ তারা অন্যদের তুলনায় সহজেই হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। রান্নায় সয়াবিন তেল, জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করাই উত্তম।
আঁশজাতীয় খাদ্য: খাদ্যের আঁশ দেরিতে হজম হয় বলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। আবার পরিমাণের অতিরিক্ত আঁশ পেটে গ্যাসের সৃষ্টি করে। পেটে ব্যথা হয়, পেট ফেঁপে যায় ও পাতলা পায়খানা হয়। সেজন্য যাদের গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা আছে এবং যাদের আলসার আছে তাদের এই জাতীয় খাবার বাদ দেওয়া উচিত বা পরিমিত পরিমানে খাওয়া উচিত।
আঁশ জাতীয় খাবার হল ভুষিযুক্ত রুটি, লাল চাল, আঁশযুক্ত সবজি ও খোসাসহ ফল। সব শেষে বলা যায়,যেহেতু ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ সেজন্য প্রতিটি রোগীরই আত্মসচেতনতা প্রয়োজন।
ষ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন