খানাখন্দে বেহালদশায় গিয়ে ঠেকেছে চট্টগ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট। অনেকগুলো রাস্তা ও সড়কের ছাল বাকল ইটের খোয়া পর্যন্ত উপড়ে উঠে গেছে। যেদিকে চোখ যায় শুধুই কাদা-পানি ভর্তি গর্ত আর গর্ত। এরমধ্যে সবচেয়ে নাজুকদশায় রয়েছে বন্দরনগরীর পতেঙ্গা-কাটগড়, নিমতল-পোর্ট কানেকটিং রোড-হালিশহর-সাগরিকা-কর্নেলহাট, কাপ্তাই রাস্তার মোড়-চান্দগাঁও-মোহরা-বহদ্দারহাট-সিএন্ডবি-বাদুরতলা, শাহ আমানত সেতু সংযোগ রোড, অক্সিজেন থেকে বিবিরহাট-ষোলশহর-মুরাদপুর, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-রাজাখালী। চট্টগ্রাম নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্য ও বন্দরের ব্যস্ততা, কর্মকান্ডের সাথে এসব সড়ক রাস্তাঘাটের গুরুত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমানে রাস্তাঘাটের নাজুক অবস্থার ফলে প্রতিদিনই কর্মমুখী লাখ লাখ মানুষ বিশেষত শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। নষ্ট বা অপচয় ঘটছে সর্বস্তরের মানুষের অজস্র শ্রমঘণ্টার। ভাঙাচোরা রাস্তায়, সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়তই।
গত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে আষাঢ় মাসের শুরুতে এবং চলতি শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে অব্যাহত অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও সামুদ্রিক প্রবল জোয়ারের কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ সড়ক ও রাস্তাঘাট এমনকি অলিগলি ভেঙেচুরে খানাখন্দে অবর্ণনীয় অবস্থায় রয়েছে। তবে একশ্রেণির অসৎ ও অদক্ষ ঠিকাদারের সংস্কার কাজে কারচুপি, আনুপাতিক হারে ও মানসম্মত ইটের খোয়া, বালু, সিমেন্ট, বিটুমিন না দেয়া, তড়িঘড়ি জোড়াতালি মেরামতের কারণে অর্থাৎ কাজের নিম্নমানের ফলে রাস্তাঘাট, সড়ক সময়মতো টিকছে না। বর্ষার ঠিক পূর্বে সংস্কার করা হয়েছে, এমন রাস্তাও ভেঙে খানাখন্দে একাকার হয়ে যাচ্ছে দুই-চার মাস যেতে না যেতেই।
এক্ষেত্রে কাজের মান যথাযথ তদারকির ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব ও কর্তাদের দায়সারা ভাব দায়ী বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদগণ। এবার বর্ষা শেষ না হতেই চট্টগ্রাম নগরী, শহরতলী ও জেলার অনেকগুলো সড়ক, রাস্তাঘাট ব্যাপকভাবে খানাখন্দে একাকার হয়ে গেছে। এরফলে চট্টগ্রাম বন্দর ও খাতুনগঞ্জ থেকে আমদানি-রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। পরিবহন মালিকরা বলছেন, খানাখন্দ গর্তে ভরা অনেক সড়কে ট্রাক মিনিট্রাক কাভার্ডভ্যান চালাতে গিয়ে গাড়ির যন্ত্রপাতি দ্রুত অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এই অজুহাতে পরিবহন ভাড়াও বিনানোটিশে বেড়ে গেছে। বাড়তি পরিবহন খরচ ব্যবসায়ীরা পুষিয়ে নিচ্ছেন পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে ভোক্তা সাধারণকেই।
মহানগরী ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়ক বিপজ্জনক ফাটল, ভাঙন ও খানাখন্দ ভরে আছে। বর্ষার আগেই অতিবৃষ্টি, বন্যা, পানিবদ্ধতা, জোয়ার ও পাহাড়ি ঢলের কারণে চট্টগ্রামের সড়ক-মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক এবং স্থানীয় রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার উপক্রম। ভাঙাচোরা সড়ক রাস্তাঘাটে যানজট লেগেই আছে। যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগের মাত্রাও সীমাহীন। সড়কের দুর্দশার অজুহাতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা যথেচ্ছ হারে বেশি ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে বাস-মিনিবাস, কোস্টার, কোচ, সিএনজি অটোরিকশা, রাইডার, টেম্পু, লেগুনা যাত্রীদের কাছ থেকে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে ক্ষুব্ধ যাত্রীগণ বর্ধিত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে জেলা প্রশাসনকে দাবিনামা পেশ এবং পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের কারণে মহানগরীর প্রায় ১৬০ কিলোমিটার সড়ক কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক রাস্তাঘাট সংস্কারের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনেক সড়কের উপরিভাগে পিচ ঢালাই ইট-কংকর উঠে গেছে। গর্ত, ফাটল ও খানাখন্দের কারণে মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক সড়কের ওপর কাদা-পানি জমেছে। এ অবস্থায় নগরীর সড়ক রাস্তাঘাট সংস্কারে শিগগিরই পদক্ষেপ নেয়া হবে। মহানগরীর মোট ১১শ’ ৭৪ কিমি সড়কের মধ্যে এরআগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৩শ’ কিমি সড়কের পুরোপুরি সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। বর্ষা শেষ না হতেই নগরীর বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও রাস্তাঘাট সংস্কার কাজে একাধিক প্রকল্প অনুমোদন পাবে এমনটি আশা করছে চসিক।
সাম্প্রতিক কয়েক দফায় বন্যা পাহাড়ি ঢলে জেলার ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, মীরসরাই, সীতাকুন্ড, হাটহাজারী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়ায় অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট এবং আঞ্চলিক মহাসড়কের অনেক জায়গায় ভাঙন ও গর্তে একাকার হয়ে গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন