শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

তলিয়ে গেছে বিদ্যালয়ের মাঠসহ গ্রামের রাস্তাঘাট, তবুও শত ভাগ উপস্থিতি

প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ আনিস উর রহমান স্বপন, ধামরাই (ঢাকা) থেকে

ঢাকার ধামরাইয়ে একেবারেই নিবৃত পল্লীতে বিদ্যালয়ের মাঠসহ গ্রামের সব রাস্তাঘাট বর্ষার পানিতে তালিয়ে গেছে। তবুও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি রয়েছে মিড ডে মিল চালু থাকায়। কোনো দরিদ্র মা-বাবার কোনো শিশু শিক্ষার্থী দুপুরের খাবারের জন্য ক্লান্ত বা পড়ালেখায় মনোযোগ হারিয়ে না ফেলে বা ঝরে না পড়ে তার জন্য উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কুল্লা ইউনিয়নের পাল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল (দুপুরের খাবার) প্রকল্প চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবং জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় গত ৭ মে প্রাথমিক পর্যায়ে এ মিড-ডে মিলের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শরিফুল ইসলাম। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল নিভৃত পল্লী কুল্লা ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম পাল্লী। পাঁচ বছর আগেও তেমন কোনো রাস্তাঘাট ছিল না। বর্ষা মাস এলেই যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। এ বছরও বর্ষার পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠসহ গ্রামের সব রাস্তাঘাট তালিয়ে গেছে। বিদ্যালয়ে আসার একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা। কোনো শিক্ষার্থী যদি অনুপস্থিত থাকে তাহলে অন্য শিক্ষার্থীরা নৌকা নিয়ে চলে তার বাড়িতে। এ গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থাও তেমন উন্নত নয়। গ্রামের পাশেই রয়েছে ছিন্নমূল মানুষের একটি ঠিকানা গুচ্ছগ্রাম। শিক্ষা বিস্তারের জন্য ১৯৪০ সালে ওই পাল্লী গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ২০১৩ সালের আগেও টিনশেডের জরাজীর্ণ ঘরে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করতে হতো। বর্তমানে এখানে আধুনিক দুটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ২১০ জন। শিক্ষক আছে ৭ জন। আধুনিকতার সুচারু দুটি ভবন আর পরিপাটি ক্লাস রুম ও অফিস রুম দেখে মুগ্ধ হতেই হবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য টেলিভিশন এবং বিদ্যালয়ের সানে জিরাফ, সিংহসহ নানা পশুপাখির প্রতিকৃতিও রয়েছে। এখন যেন কোনো কিছুরই কমতি নেই। উপজেলা সদর থেকে দূরত্ব যাই হোক না কেন যাতায়াতের জন্য কোনো কর্তা বাবুরা যেতেই চায়নি ওই বিদ্যালয়ে। তবুও বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শরিফুল ইসলাম এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যালয়টিকেই বেছে নিয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আফরোজা সুলতানা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শরিফুল ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকার ধণাঢ্য ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা নিয়ে বিদ্যালয়েই খিচুড়ি রান্না করে উপজেলার মধ্যে প্রথম এ মিড-ডে মিল চালু করেছে। প্রতিদিনই দুপুরে রান্না করে শিক্ষার্থীদের খাওয়ানো হচ্ছে। হাত দিয়ে খাওয়া নয়, সবার জন্য চামচ দিয়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আফরোজা সুলতানা বলেন, আমি ১৩ বছর ধরে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান তেমন উন্নত না হলেও মানুষের ঐকান্তিক ভালোবাসা এবং আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে এ মিড-ডে মিল চালু করতে পেরেছি। আমার শত কষ্ট হলেও এ মিড-ডে মিল ব্যবস্থা অব্যাহত রাখব এবং এলাকার সবার ভালোবাসা পেয়ে আমি শিক্ষার্থীদের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। এলাকাবাসী মনে করেন, শিশুদের জন্য দুপুরের খাবার চালু করায় কোনো শিশুকে খাবারের জন্য বাড়ি যেতে হবে না বা না খেয়েও থাকতে হচ্ছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন