পরিবহন শ্রমিক নেতা ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর অপসারণ দাবি করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির মতে, দেশের বিদ্যমান দুর্নীতিগ্রস্থ পরিবহন খাতের সঙ্গে এই দুই মন্ত্রীর ব্যক্তি স্বার্থ সংঘাতমূলক। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত বাংলাদেশে বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনের সময় ইফতেখারুজ্জামান এই মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে পর্যবেক্ষণসমূহ তুলে ধরে এ খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে টিআইবি ১৯ দফা সুপারিশ পেশ করে।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ এস এম জুয়েল ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নিহার রঞ্জন রায়। গবেষক দলের ওপর দুই সদস্য গবেষণা ও পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. মোস্তফা কামাল এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গবেষণাটিতে এনজিও খাতের অনেক ইতিবাচক দিক চিহ্নিত হওয়ার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও সুশাসনের অন্তরায় বেশকিছু চ্যালেঞ্জ লক্ষণীয়। তদারকি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের অনিয়ম-দুর্নীতি, সংশ্লিষ্ট আইনে দুর্বলতা, দুর্বল পরিচালনা পরিষদ গঠন, সমন্বয়-পরিবীক্ষণ-মূল্যায়ন-নিরীক্ষার ঘাটতি, স্থানীয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গের একাংশের অযাচিত হস্তক্ষেপ, এনজিওসমূহের অনুদান নির্ভরতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার কারণে এনজিওগুলোর অভ্যন্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। গবেষণায় দেখা যায়, কিছু ক্ষেত্রে পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে প্রকল্পের দুর্বল দিক বা ঘাটতি যথাযথভাবে উল্লেখ না করে শুধু সাফল্যের দিক অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা হয়। নীতি-নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত পরিচালনা পরিষদের সভায় অনুমোদনের বিধান থাকলেও প্রধান নির্বাহী কর্তৃক এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় অনুমোদন গ্রহণের তথ্য পাওয়া গেছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা দুই ব্যক্তিকে মন্ত্রীর পদ থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা পরিবহন খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চাই।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তার প্রতি টিআইবির পুরোপুরি সমর্থন রয়েছে। ইফতেখরুজ্জামান বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এমন দৃষ্টান্ত খুবই কম যে- একই ব্যক্তি শ্রমিক ইউনিয়ন, মালিক ইউনিয়নের প্রধানের পাশাপাশি মন্ত্রীর দায়িত্বেও থাকেন। এটি দেশে নতুন ঘটনা নয়, দীর্ঘদিন ধরেই এটি চলছে। যার ফলে অরাজকতার জন্য যারা দায়ি তাদের সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নিরাপদ সড়কের জন্য গত কয়েকদিন ধরে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সাংবিধানিক অধিকার চর্চার আন্দোলন। এ আন্দোলনের প্রতি আমরা একাত্মতা প্রকাশ করছি। আমরা মনে করি এটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। এটি কোনো রাজনৈতিক বিষয় না। যেভাবে সরকার সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অবজ্ঞা করেছে, সেটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার অবজ্ঞার শামিল। পরিবহন খাতের সমস্যা সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তব কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, পরিবহন খাতে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাস্তবসম্মত উদ্যোগ আমরা দেখিনি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে মনেকরি এ খাত প্রচÐভাবে স্বার্থের দ্ব¦ন্ধে¦র কাছে জিম্মি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন