রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণা ছিলেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে অসামান্য অবদানের জন্য যে নারীর ত্যাগ, অবদান ও প্রেরণার কাছে ঋণী তিনি হলেন তারই স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা। বঙ্গবন্ধু তার জীবন ও যৌবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন জনগণের সেবায়, দেশের কল্যাণে। এই সময়কালে বেশিরভাগ সময় বঙ্গবন্ধুকে কাটাতে হয়েছে জেলে। আর সেই সময়গুলোতে কান্ডারির মতো হাল ধরেছিলেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নেপথ্যচারিণী ও প্রেরণাদায়িনী মহীয়সী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনিও শহীদ হন পরিবারের সবার সঙ্গে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি ছিলেন জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত, দায়িত্ববান ধৈর্যশীল। বঙ্গবন্ধুর জীবনে তার প্রভাব অপরিসীম। বঙ্গবন্ধুর নিজের কথা থেকেই তা জানা যায়। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী লেখার পেছনেও মূল প্রেরণা ও উৎসাহ ছিল বেগম ফজিলাতুন্নেছার। এ সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধু আত্মজীবনীতে বলেন, ‘আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বলল, ‘বসেই তো আছো, লেখো তোমার জীবনের কাহিনি।’ বললাম, ‘লিখতে যে পারি না; আর এমন কী করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলো জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।’
‘...আমার স্ত্রী যার ডাকনাম রেণু- আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কটা আমাকে দিয়েছিল। রেণু আরও একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম।’
বেগম ফজিলাতুন্নেছা একদিকে যেমন শক্ত হাতে সংসার ও সন্তানদের সামলিয়েছেন, তেমনি নিজের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়াকে অতিক্রম করে স্বামীর সংগ্রামের সহযোদ্ধা হিসেবে ছায়াসঙ্গীর মতো জুগিয়েছেন সাহস ও উদ্দীপনা।
১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করে, সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে। কারাবন্দি করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। দুঃসময়েও সব দিক লক্ষ রেখে শান্ত মনে নিজেই সামলাতে পারতেন সবকিছু। ছেলেমেয়ে নিয়ে বহু কষ্ট আর অভাব-অনটনের মধ্যেও তিনি সংসার চালিয়ে যেতে সমর্থ হন। স্ত্রীর এই ত্যাগের কথা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু একটি ঘটনা প্রসঙ্গে তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘রেণু খুব কষ্ট করত, কিন্তু কিছুই বলত না। নিজে কষ্ট করে আমার জন্য টাকা-পয়সা জোগাড় করে রাখত যাতে আমার কষ্ট না হয়।’
বঙ্গবন্ধু জেলে থাকাকালীস সে সময়ের ছাত্র নেতাদেরও পরামর্শ দিতেন এই মহীয়সী নারী। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের নেপথ্যে প্রেরণাদাত্রী হিসেবে ফজিলাতুন্নেছার অনন্য ভূমিকা রয়েছে। ঘটনাটি ছিল এ রকম- এই ভাষণ দিতে যাওয়ার আগে শেখ মুজিব কী বলবেন সে বিষয়ে অনেকে তাকে পরামর্শ, উপদেশ, চিরকুট পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ফজিলাতুন্নেছা তাকে সভায় যাওয়ার আগে ঘরে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় একাকী থাকতে দেন। সে সময় তিনি তাকে বলেছিলেন, ‘মনে রেখো, তোমার সামনে আছে জনতা এবং পেছনে বুলেট। তোমার মন যা চাইছে তুমি শুধু সেটাই আজ করবে।’
নিভৃতচারী, ত্যাগী এ নারীকে জনগণ ‘বঙ্গমাতা’ হিসেবে সম্মানিত করেছে। বঙ্গবন্ধুর আজন্ম জীবনসঙ্গী বেগম ফজিলাতুন্নেছা ১৯৭৫-র ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে মারা যান।####

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন