বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা

| প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লম বার্নিকাটের গাড়িতে সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা একই সঙ্গে অনিভিপ্রেত ও দু:খজনক। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বার্নিকাট বাংলাদেশে সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে শিগগিরই স্বদেশে ফিরে যাবেন। ইতোমধ্যে পরবর্তী রাষ্ট্রদূতের নাম ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটকে তার পরিচিত বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধায়ীদের অনেকেই আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানাচ্ছেন। তার সম্মানে ফেয়ারওয়েল ডিনারও দিচ্ছেন কেউ কেউ। গত শনিবার এমনই একটি ফেয়ারওয়েল ডিনারের আয়োজন করেছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বাসভবনে ঘরোয়া এই আয়োজনে বার্নিকাট ছাড়াও অংশ নিয়েছিলেন সস্ত্রীক ড. কামাল হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজউদ্দীন আহমদসহ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। রাত ১১টায় ডিনার শেষে ফিরে যাওয়ার সময় সশস্ত্র দুবৃৃত্তরা বার্নিকাটের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং ধাওয়া করে। হামলায় কারো কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে তার নিরাপত্তা দলের দুটি গাড়ির সামান্য ক্ষতি হয়েছে। হামলাকারীরা বদিউল আলম মজুমদারের বাসভবন লক্ষ্য করেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা করে। এতে বাসভবনের জানালার কাচ ভেঙ্গে যায় এবং তার পুত্র ড. মাহবুব আহত হন। মার্কিন দূতাবাস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মোটর সাইকেল আরোহী একদল সশস্ত্র ব্যক্তি রাষ্ট্রদূতকে বহনকারী গাড়িতে হামলা চালায়। এতে তার, তার গাড়ি চালক ও নিরাপত্তা স্টাফদের কোনো ক্ষতি হয়নি। নিরাপত্তা দলের দুটি গাড়ির সামান্য ক্ষতি হয়েছে। বিবৃতিতে দ্রুত সাড়া প্রদান এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।
বার্নিকাট তার দেশের একজন জেষ্ঠ্য ও সুখ্যাত কূটনীতিক। বিগত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসাবে মনোনয়ন প্রদান করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও তিনি স্বপদে স্বদায়িত্বে বহাল থাকেন। এই সাড়ে তিন বছরে তিনি অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন দক্ষ ও পেশাদার কূটনীতিক হিসাবে বাংলাদেশের বিদেশী কূটনীতিক মহলেও তার যথেষ্ট সম্মান ও মান্যতা রয়েছে। এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সঙ্গতকারণেই কূটনীতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যে কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন, তিনি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নন। রাষ্ট্রদূত সব দেশেই সর্বোচ্চ সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তা লাভের অধিকারী। রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা তার দেশের ওপর হামলার নামান্তর বলে মনে করা হয়। বার্নিকাটের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে তারা কত বড় অন্যায় ও অপরাধ করেছে, এ থেকেই তা অনুধাবন করা যায়। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, স্বাধীনতার পর ভারতীয় দূতাবাসে হামলা চালিয়ে তৎকালীন হাইকমিশনার সমর সেনকে জিম্মী করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল সে সময়ের জাসদ। সে অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা হয়েছিল সিলেটে। সে হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। বার্নিকাটের ওপর হামলা এ ধরনের তৃতীয় ঘটনা, যাতে ভাগ্যচক্রে তারও কোনো ক্ষতি হয়নি। যারাই এটা ঘটাক, তারা গোটা জাতিকে লজ্জায় ডুবিয়েছে। একথা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, বার্নিকাট তার দায়িত্ব পালনকালে সব সময়ই বাংলাদেশের উজ্জ্বল দিকগুলো ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। নেতিবাচক দিকগুলো কূটনৈতিক ভাষায় সহমর্মিতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। সাম্প্রতিককালে খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে তার অভিমতে সরকারী মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। কূটনৈতিক সৌজন্যের বাইরে গিয়ে কেউ কেউ তার সমালোচনা করেন। এর জবাবে তিনি বলেন, তার অভিমত তার ব্যক্তিগত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অভিমতই তাতে প্রতিফলিত। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বক্তব্যেও সেটাই বলে দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায়, তার ওপর হামলার ঘটনাকে সহজভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি। অর্থনৈতিক দিক দিয়েও এক নম্বর। বিশ্বে তার রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব, সেই মোতাবেক বিস্তৃত ও শক্তিশালী। এই প্রেক্ষাপটে তার রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলার প্রতিক্রিয়া তার দিক দিয়ে কি বা কেমন হতে পারে, সেটা অনুমান করা অসাধ্য নয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। বড় রকমের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক অংশীদারও বটে। উভয় ক্ষেত্রে এ ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যান্য দেশেও এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে বৈশ্বিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগে টান পড়তে পারে। এ ঘটনায় বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা যে ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন ও ব্যহত হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। যা হোক, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তার এক ভালো বন্ধু হিসাবে বিবেচনা করে। সেই নিরিখেই বিষয়টি তার দেখা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। সরকারকে এই অবাঞ্ছিত হামলার ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। প্রথমত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ জন্য দু:খ প্রকাশ করা যেতে পারে। বার্নিকাটের সঙ্গে বিশেষভাবে কথাবার্তা বলা যেতে পারে। তাতে পরিস্থিতি নমনীয় হতে পারে। দ্বিতীয়ত, যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন