শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

চুল-দাড়িতে খেযাব : শরীয়তের বিধান

গবেষণা প্রবন্ধ

| প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
আলোচ্য বিষয়-বিধানটি বোঝা যেমন সহজ হয়ে যায় তেমনি কার ক্ষেত্রে কোনটি প্রয়োগ করা হবে, তাও স্পষ্ট হয়ে উঠে। নতুবা সুবিধা-অসুবিধা, সুস্থ্য-অবস্থা ও রোগাবস্থা এবং কার বেলায় প্রয়োজন রয়েছে ও কার বেলায় প্রয়োজন নেই- তেমন পার্থক্যজ্ঞান এড়িয়ে একটা বিষয়কে কেবল গণহারে বৈধ বলা অথবা একতরফা অবৈধ বলতে গিয়ে দু’পক্ষই যেন অঘোষিত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে যাচ্ছি- এমন অবস্থার জন্ম হয়।
উপসংহার : মোটকথা সারসংক্ষেপ হিসাবে বলা যায় যে :
চুল দাঁড়িতে খেযাব ব্যবহার প্রশ্নে যেসব রঙ ব্যবহার করা হয়। তা ‘আসওয়াদে খালিস’ বা মিশমিশে কালো যেমন হতে পারে তেমনি ‘সাধারণ কালো’র কাছাকাছি ‘কাতাম’/ ‘ওসমা’ তথা ব্রাউন কালো বা হাল্কা কালো বা অধিক ও গাঢ় লালের কারণে দেখতে কালোর কাছাকাছি মনে হওয়া ; লাল, হলুদ, সবুজ ইত্যাদি যে কোন রঙ হতে পারে।
হাদীসের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা কেবল ‘মিশমিশে কালো’র ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অপরাপর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
হাদীসের নিষেধাজ্ঞা প্রতারণা-প্রবঞ্চনার ক্ষেত্রে এবং যেক্ষেত্রে বৃদ্ধাবস্থা ও যৌবনাবস্থা সংশয়ের দরুন বোঝা মুশকিল হয় সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু যদি তেমন সংশয় না হয়, বরং কালো খেযাব ব্যবহারের পরেও বয়সের ছাপ এমনিতেই চেহারা দৃষ্টে বা অন্যান্য অঙ্গ/অবয়ব দৃষ্টে বোঝা যায় ; তাহলে সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা লংঘিত হয় না। যদিও হাদীসের ব্যাপক অর্থ বিবেচনায় এবং গবেষণা বিতর্ক হতেও বেঁচে থাকার বিবেচনায়, তা ব্যবহার না করাই উত্তম বলে বিবেচিত হবে।
রোগ-ব্যাধি, দূষিত খাদ্যদ্রব্য পানাহারের দরুন বা দূষিত আবহওয়া ও পারিপার্শিক পরিস্থিতির দরুন যদি অসময়ে বা অল্প বয়সেই সাদা হয়ে যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে এবং রোগ-ব্যাধির ক্ষেত্রে ‘ব্যতিক্রম বৈধ’ বিবেচনায় কালো খেযাব ব্যবহার অবৈধ বলা হবে না।
দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি একজন মানুষের অন্যতম বিশেষ প্রয়োজন ও আবশ্যকীয় ব্যাপার। এটিকে হাল্কা করে দেখার অবকাশ নেই। যে কারণে, কোন স্বামী নিজ স্ত্রীর সন্তোষ ও আকর্ষণের নিমিত্তে বা বিশেষ বিবেচনায় কালো খেযাব ব্যবহার করলে, সেটিকে অবৈধ বলা হবে না।
হাল্কা কালো, বাদামী, ধুসর-কালো বা বøাক-ব্রাউন রঙ যা মিশমিশে কালো নয় এবং তা ব্যবহারে সংশ্লিষ্টকে যুবকরূপে দেখায় না বা বোঝা যায় না ; তেমন খেযাব ব্যবহারের অবৈধতা হাদীসে নেই। বরং বিভিন্ন হাদীসের ‘কাতাম’ ও ‘ওসমা’ শব্দ দ্বারা এমন কালো খেযাব ব্যবহারের বৈধতা ও উৎসাহ প্রমাণিত হয়।
লাল রঙ, মেহেদী রঙ, হাল্কা বা গাঢ় যাই হোক, হলদে রঙ ও সবুজ রঙ ইত্যাদি ব্যবহারের বৈধতা সরাসরি বহু হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়। সুতরাং এসব খেযাব ব্যবহারে কোনো বাধা নেই ; বরং উত্তম।
উল্লেখ্য, খেযাব সংশ্লিষ্ট রঙ বলতে এমন রঙ যা স্বাভাবিক উদ্ভিদজাত যেমন মেহেদী ইত্যাদি কিংবা এমন তৈল জাতীয় রঙ যাতে পানি ভেদ করতে পারে। কিন্তু খেযাব যদি এমন পেইন্ট জাতীয় রঙ দ্বারা হয় যা পানি ভেদ করতে পারে না যেমন নেইল পলিশ ইত্যাদি। তাহলে তেমন কোন প্রকার খেযাব ব্যবহার করা আদৌ জায়েয নেই। কেননা, তাতে পানি ভেদ করতে না পারায় সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীর উযূ, গোসল ইত্যাদি সহীহ-শুদ্ধ হয় না। এমনকি জানাযার গোসলও শুদ্ধ হয় না। মোটকথা, চুল-দাঁড়িতে কালো খেযাব ব্যবহারের মূল ও সাধারণ বিধান মাকরূহ তাহরীমী যেমন সঠিক তেমনি প্রয়োজন ও বৈধতার ব্যতিক্রমী বিধানও শরীয়তসম্মত।
উল্লেখ্য, উক্ত দীর্ঘ আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আলোচিত ২নং প্রশ্নের জবাবে ‘আহসানুল ফাতাওয়া’ সূত্রে ‘মাকরূহে তাহরীমী’ লেখা বিষয়টিও সঠিক। তবে তা সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় ; কেবল তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা উপরে আলোচিত কোন কারণ বা সমস্যা ছাড়াই ‘কালো খেযাব’ ব্যবহার করেন ; অথবা আলোচিত প্রতারণার লক্ষ্যে তা ব্যবহার করেন।
যে সব ইমাম ও খতীব মহোদয় ইমামত ও খেতাবতের দায়িত্ব পালন করেন। উক্ত বিস্তারিত আলোচনার নিরীখে, যেক্ষেত্রে তাঁদের কারও আলোচিত বৈধতাজ্ঞাপক কোন কারণ বা সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে আইনত তাঁরাও খেযাব ব্যবহার করতে পারেন। তবে সাধারণত আমাদের সমাজের মুসুল্লিদের মাঝে উক্তরূপ বৈধ-অবৈধ ক্ষেত্রের পার্থক্যজ্ঞান না থাকায় ; তারা সব বিধানকে একাকার করে ফেলে এবং সকলের সমালোচনায় প্রবৃত্ত হয়। তাই, তেমন সমালোচনা হতে বেঁচে থাকার জন্য এবং অধিক তাকওয়া ও নৈতিক দায়িত্ববোধ রক্ষাকল্পে ইমাম ও খতীব মহোদয়দের ‘কালো খেযাব’ ব্যবহার না করাই শ্রেয়ঃ বলে বিবেচিত হবে। তার পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে (বিশেষত কমিটি/কর্তৃপক্ষের) যে, আইন-বিধান প্রয়োগধর্মী হয়ে থাকে ও নৈতিকতা বিবেকধর্মী হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোন ইমাম বা খতীব সংশ্লিষ্ট বৈধ কোন প্রয়োজনে যদি ‘কালো খেযাব’ ব্যবহার করেন তা হলে এই ওজুহাতে তাঁকে পদচ্যুত করতে পারবেন না।
মহান আল্লাহ সকল ক্ষেত্রে আমাদেরকে ভারসাম্য রক্ষা করে চলার তাওফীক দিন। আমীন !

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন