দেশের প্রায়ই স্টেডিয়ামের পাশে রয়েছে আউটার স্টেডিয়াম। ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবলসহ হরেক খেলাধুলায় প্রাণচঞ্চল থাকে আউটার স্টেডিয়াম। এখন চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়াম ‘সরব’ তবে খেলাধুলায় নয়, ‘অন্য কাজে’। খেলার জগতের মাঠ আজ ব্যবহৃত হচ্ছে মেলার নামে ভিন্ন এক জগতে। তাও আবার মেলায় ক্রেতা দর্শক চাহিদা বলতে তেমন কিছুই নেই। তাই খেলোয়াড়দের হাতে নেই এখন খেলার জায়গাটি। চট্টগ্রামবাসীর মাঝে এ নিয়ে বিরূপ সমালোচনা হচ্ছে- নতুন খেলোয়াড় গড়ে উঠবে কী করে?
অথচ চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়াম থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার, ফুটবলার এবং অ্যাথলেট। তাছাড়া স্টার যুব ক্রিকেট, নির্মান স্কুল ক্রিকেট, প্রথম বিভাগ ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল লীগসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতো এখানেই। কিশোর ও ক্রীড়ামোদীদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো এ মাঠ। মাঠের চারিদিকে হাজার হাজার দর্শক উপভোগ করতো এসব খেলা। আজ সেই ক্রীড়া ঐতিহ্যের ধারক চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়াম যেন মূল কাজ বাদ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যিক কাজের ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে আউটার স্টেডিয়াম মাঠজুড়ে চলছে তাঁতবস্ত্র ও জামদানি মেলা। আউটার স্টেডিয়ামের নিয়ন্ত্রক সংস্থা চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস)। এ সংস্থার কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ভাড়ায় এই মেলার জন্য মাঠ নিয়েছে বাংলাদেশ জামদানি ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপার্টস অ্যাসোসিয়েশন। এরমধ্যে ৭ লাখ টাকা জমা দেয়া হয়েছে সিজেকেএসএর অনুকূলে। মেলাটি চলবে প্রায় এক মাসব্যাপী। মেলায় ঘুরে দেখা গেছে, অনেক স্টল তৈরি করা হলেও সবগুলো স্টলে বসেনি দোকান। গুটিকয়েক মানুষ করছে ঘোরাঘুরি। বিক্রেতারা বলছেন, তেমন নেই বেচাকেনা। একপাশে চড়কিসহ সার্কাসের আয়োজন থাকলেও নেই কোন দর্শক।
এ মাঠটি বছরের বেশিরভাগ সময় থাকে মেলার দখলে। ঈদবস্ত্র মেলা, বৃক্ষ মেলা, গাড়ি মেলাসহ আরো মেলা এখানে দীর্ঘদিন চলে। মেলা শুরুর কয়েকদিন আগে মেলার অবকাঠামো তৈরি করতে সময় লাগে। আর মেলা শেষ হওয়ার পর এসব অবকাঠামো সরাতে লাগে আরো কয়েকদিন। তাছাড়া একটা মেলা মানে মাঠে ইচ্ছামতো খোঁড়াখুঁড়ি, ইট বিছিয়ে তৈরি করা হয় ফ্লোর। ফলে মাঠ খেলার অযোগ্য হয়ে পড়ে। মেলা শেষ হওয়ার পর বাকি যে সময়টুকু থাকে তখন এ আউটার স্টেডিয়ামের চেহারা পাল্টে যায়। পরিণত হয় ট্রাক-মিনিট্রাক স্ট্যান্ড ও বখাটে-ভবঘুরেদের দখলে। ট্রাক স্ট্যান্ড কাদের নিয়ন্ত্রণে কেউ কিছু বলতে পারছে না। তবে একশ্রেণির ব্যক্তির পকেট ভরছে অনেকে তা মনে করছেন। বলতে গেলে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা আউটার স্টেডিয়ামে অনেক সময়ই অসামাজিক কার্যকলাপের দৃশ্য পথচারীদের চোখে পড়ে। এলাকাবাসীকে হতে হয় বিব্রত।
এ আউটার স্টেডিয়ামের একপাশে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আওতায় আন্তর্জাতিকমানের সুইমিং পুলের চলছে নির্মাণ কাজ। এটি প্রায় শেষের পথে। এ সুইমিং পুল নির্মাণ করতে গিয়ে মাঠটি কিছুটা সংকুচিত হয়ে যায়। তার উপর বাকি যেটুকু জায়গা রয়েছে সেখানে খেলার বদলে চলছে মেলা, কখনো অঘোষিত ট্রাক স্ট্যান্ড তা চট্টগ্রাম ক্রীড়ামোদীরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন একাডেমীর ছাত্ররা এ আউটার স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতো। নিজেদের খরচে তারা অনুশীলন মাঠের উপযোগী করে তুলেছিল। ক্রিকেটের উইকেট ও নেট সেখানে স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু এখন তার কোন নিশানা পর্যন্ত নেই। আউটার স্টেডিয়াম রক্ষার জন্য অনেক আন্দোলন, মানববন্ধন ও লেখালেখি হয়েছে। এতকিছুর পরও খেলাধুলার কাজে এটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কিন্তু থেমে থাকছে না মেলার আয়োজন। এই মাঠে যে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে অনুমতি নিতে হয় সিজেকেএস’র কাছ থেকে। অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবহার করা যায় এটি। যেখানে খেলাধুলার জন্য চট্টগ্রামে মাঠের চরম অভাব সে জায়গায় আউটার স্টেডিয়াম থেকে খেলাধুলা নির্বাসিত কেন?
ক্রীড়ামোদীরা বলছেন, ‘এ মাঠের অতীতের অনেক স্মৃতি এখনো আমাদের চোখে ভাসে। বিভিন্ন খেলা দেখতে আমরা হাজির হতাম এখানে। বিশেষ করে ক্রিকেট খেলা দেখতে সকালে এসে দুপুরে হোটেলে খেয়ে আবার মাঠে হাজির হতাম খেলা দেখার জন্য। কিন্তু এ মাঠ একেবারেই অবহেলিত। খেলার বদলে মেলার আয়োজনে এ মাঠটি ধানি জমিতে হয়েছে পরিণত। এটি আমাদের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছুই নয়।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন