দীঘ ২৩ বছর পর আবারো চালু হতে যাচ্ছে ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ। ভারতের অর্থায়নে বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এ রেলপথ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার ও ত্রিপুরা রাজ্য সরকার। বিশেষ করে ভারতের অবহেলিত রাজ্য ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয়ে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এ রেললাইন চালু করতে যাচ্ছে ভারত। বাংলাদেশ সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী এ রেললাইনের সংস্কারে যাবতীয় ব্যয় বহন করবে ভারত সরকার।
ফেনী জেলার পিছিয়ে পড়া উত্তরাঞ্চলের জনগোষ্ঠির জেলা সদরের সাথে যাতায়াতের পাশাপাশি ত্রিপুরার বিলোনিয়া হয়ে বাংলাদেশের বিলোনিয়া দিয়ে ফেনী থেকে আসামের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯২৯ সালে এ রেলপথ চালু করে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি।
তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের অর্থায়নে এ রেললাইনের কাজ সম্পন্ন হয়। প্রথমদিকে এ লাইনে মালবাহী ট্রেন চলাচল করলেও ১৯৪৭ সালে ভারত বাংলাদেশ বিভাগের পর দুটি লাইন আলাদা হয়ে যায়। ভারতের অংশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশ অংশে বিলোনিয়া থেকে ফেনী মহকুমা শহরের সাথে যোগাযোগের জন্য একটি ট্রেন চালু করা হয়। সে সময় ফেনীর উত্তরাঞ্চলের মানুষের জেলা শহরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল এ রেলপথ। সকাল ৭টায় ফেনী থেকে বিলোনিয়া আবার ৮টায় বিলোনিয়া হতে ফেনী রুটে চলাচল করতো ট্রেন। আবার বিকাল ৪ টায় ফেনী থেকে রওনা হয়ে ৫টায় ফেনী ফিরে আসতো বিলোনিয়ার ট্রেন।
এদিকে লাইনটি পূর্বে মিটারগেজ থাকলেও নতুন লাইনটি হবে ব্রডগেজ। এটি ভারতের বিলোনিয়া শহরের ১ কিলোমিটার ভিতরে যাবে। সেখান থেকে ট্রেন আসা যাওয়া করবে। এদিকে ভারত সীমান্তে বিলোনিয়া শহর পর্যন্ত লাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছে ত্রিপুরা। যে কোন সময় বাংলাদেশ অংশের কাজ শুরু হতে পারে। এদিকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইনের ২ পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করতে অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরীর কাজ শেষ হয়েছে। ফেনী থেকে বিলোনিয়া পর্যন্ত দুপাশের সকল স্থাপনা নির্মানকারীর তালিকা ও জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ করেছে ত্রিপুরা রেল কর্তৃপক্ষ। তালিকা তৈরীর বিষয়ে ফেনী রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এটি ভারতের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। রেললাইনের দু’পাশের জায়গা চিহ্নিত করার পাশাপাশি নতুন ভূমি অধিগ্রহণ চিহ্নিত করা হয়েছে। রেললাইন বা আশপাশের ভূমিতে গড়ে তোলা প্রতিটি স্থাপনাকে লালরং দিয়ে নাম্বারিং করা হয়েছে।
এদিকে রেললাইনটি চালু করা হলে সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ করতে হবে এ রেলপথের ৮টি স্টেশন। উত্তরদিকে সর্বশেষ স্টেশন হলো বিলোনিয়া আর দক্ষিণে ফেনী শহর। বিলোনিয়া হয়ে পরশুরাম, চিথলিয়া, ফুলগাজী, নতুন মুন্সীরহাট, আনন্দপুর, বন্দুয়া-দৌলতপুর স্টেশনগুলি রয়েছে এইপথে। রেলপথটি চালু হলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের পরশুরামে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিলোনীয়া অংশে স্থলবন্দর রয়েছে।
রেললাইনের উপর নির্মিত অবৈধ স্থাপনায় অবস্থিত পুষ্প কেন্দ্রের স্বত্ত্বাধিকারী মহিউদ্দিন জানান, রেললাইনের লোকজন দোকানে লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে গেছেন এবং দোকান ঘর নির্মান কারী সহ ভাড়াটিয়াদের জাতিয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন। তারা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা যায়, পরশুরাম বাজারের রেললাইনের জায়গা দখল করে বহুতল মার্কেট, সহ ছোট বড় অসংখ্য স্থাপনা নির্মান করা হয়েছে। রেললাইনের জায়গা জোর পূর্বক দখল করে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি হাতিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এছাড়াও কয়েকজন নিজের নামে কোন কাগজ পত্র না থাকলেও লাখ লাখ টাকার বিনিময় বিক্রি করেছেন রেলওয়ের জায়গা।
ফেনী রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) আতিকুল ইসলাম জানান, রেললাইনটি চালুর ব্যাপারে আর্থিক প্রক্রিয়াসহ সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করছে ত্রিপুরা সরকার। ইতিমধ্যে তারা অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছে। এছাড়া রেলওয়ের জায়গা যারা বৈধভাবে ইজারা নিয়ে স্থাপনা গড়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। আবার নতুন ভূমি অধিগ্রহণেও জমির মালিকদের আর্থিক সুবিধা দেয়া হবে। ফেনী থেকে ভারতের বিলোনিয়া পর্যন্ত মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য হবে ৩০কি.মি.। ফেনী বিলোনিয়া রেলপথ পুননির্মাণের কাজ শীঘ্রই চালু হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন