ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়া পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের লামডিং ডিভিশনের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার জে এস লাকরা সম্প্রতি আগরতলা-আখাউড়া রেলপথ নির্মাণের কাজ সরেজমিনে কাজের অগ্রতির বিষয়ে খোঁজখবর নিতে এসে তিনি সংবাদিকদের এইসব কথা জানান।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, রেলওয়ে সংযুক্তিকে সমৃদ্ধ করে রেলসেবা উন্নত করাই আমাদের সর্বাধিক অগ্রাধিকার। গত কয়েক বছরে রেলওয়ে ট্রাক এবং অবকাঠামোর উন্নতি করা হয়েছে। এর ফলে বাড়তি ট্রেন সার্ভিসের দিকে দৃষ্টি পড়েছে। আগরতলা-আখাউড়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক রেল সংযোগ প্রকল্প অগ্রগতির পর্যায়ে রয়েছে আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে। এই রেলপথ চালুর পর আগরতলা থেকে ঢাকা হয়ে কলকাতা যেতে সময় ৩১ ঘণ্টা থেকে কমে ১০ ঘণ্টায় দাঁড়াবে। ইন্দো-বাংলা রেলওয়ে লাইন বাংলাদেশের আখাউড়ার সঙ্গে সংযুক্ত হবে নিশ্চিন্তপুরে আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন স্টেশনের মাধ্যমে। তিনি জানান, আগরতলা ও মনিপুররের মধ্যে অত্যাধুনিক ভিস্তাডোম ট্রেন পরিষেবা চালু করা হবে। আগরতলা থেকে মণিপুরের খংসাং পর্যন্ত ট্রেনে লাইন নির্মাণ হয়ে গিয়েছে। খুব দ্রুত ‘জন শতাব্দী এক্সপ্রেস’ ট্রেন পরিষেবা চালু করা হবে। পর্যটকদের আনন্দের জন্য এই ট্রেনে অত্যাধুনিক ভিস্তাডোম›র একটি কোচ রাখা হবে। এই কোচগুলির বিশেষত্ব হচ্ছে যাত্রীরা যাতে বাইরের সুন্দর প্রাকৃতিক দেখতে পারেন তার জন্য কোচগুলির বেশিরভাগ অংশে কাঁচ লাগনো থাকে।
রেলপথ নির্মাণের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান শরৎ শর্মা বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ভারত সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পটি করোনার কারণে একটু পেছালেও আগামী মার্চ নাগাদ শেষ হয়ে যাবে বলে আমার আশাবাদী।
রেলওয়ে লিংক প্রকল্পের পরামর্শক বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে এই রেলপথটি নির্মাণ করা হলেও ঢাকা থেকে এই পথে কলকাতাতেও যাওয়া যাবে। তবে চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহনই মূল উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি। এছাড়াও আগরতলা স্টেশনসহ একাধিক স্টেশনে র্যাম্প, একাধিক লাইন স্থাপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বৈদ্যুতিক ট্রেন পরিষেবা শুরু করার জন্য লাইন স্থাপন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ সাড়ে ১০ কিলোমিটার এই রেলপথটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন দু’দেশের ব্যবসায়ীরা। তাই ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে চট্টগ্রাম থেকে ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহনের জন্য আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে নেয়া হয় এই প্রকল্পটি।
ফরিদ গ্রুপের মালিক ফরিদ আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রেলপথটি নির্মাণ শেষ হলে আমরা কম খরচে ভারতে সিমেন্টসহ সকল প্রকার মালামাল রফতানি করতে পারবো এই রুটে।
২০১৮ সালের এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের সাড়ে ছয় কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশ অংশে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বাকি চার কিলোমিটার পথ ভারতে। ভারত সরকারের অর্থায়নে ভারতের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের কাজ করছে।
নির্মাণাধীন প্রকল্পের সমীক্ষা অনুযায়ী আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের মধ্যে বাংলাদেশের আখাউড়া রেল জংশন স্টেশন থেকে গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে সোজা পূর্বদিকে ত্রিপুরা রাজ্যের নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার। নিশ্চিন্তপুর হবে দুই দেশের সীমান্ত স্টেশন। ২০১৩ সালে দুই দেশই এই রেল প্রকল্প নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন