জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের প্রতিযোগিতায় রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব শীঘ্রই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। চার্জশীটে ৬জনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে বলে তদন্তকারি সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চার্জশিটে জাবালে নূর পরিবহনের ঘাতক বাসের চালক মাসুম বিল্লাহ, তার সহকারী এনায়েত হোসেন, বাসটির মালিক শাহাদাত হোসেন, পাল্লা দেয়া অপর বাসের চালক জুবায়ের সুমন, সহকারী আসাদ এবং মালিক জাহাঙ্গীর আলমকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত না হওয়ায় আসামিরা সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযুক্ত হচ্ছেন না। তাদের বিরুদ্ধে ৩০৪, ২৭৯ ও ৩৪ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে। কোনো কাজের কারণে কারো মৃত্যু হতে পারে কিংবা মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে এমন গুরুতর আঘাত করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ৩০৪ ধারায় অভিযুক্ত হন। এছাড়া বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অপরাধে চার্জশিটে ২৭৯ ধারা যুক্ত হচ্ছে। আর কমন ইন্টেনশনের কারণে তাদের সবাইকে ৩৪ ধারায়ও অভিযুক্ত করা হবে। অভিযুক্ত হতে যাওয়া ছয়জনের মধ্যে এক চালকের সহকারী কাজী আসাদ ও মালিক জাহাঙ্গীর আলম এখনো পলাতক রয়েছেন। এ মামলায় দুই চালক মাসুম ও জোবায়ের ও এক বাসের মালিক শাহাদাত হোসেন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি উত্তর বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, মামলাটির তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই এ মামলায় চার্জশিট দাখিল করতে পারবো বলে আশা করছি।
আদালতে বাস চালক-মালিকের জবানবন্দি ও তদন্তের ভিত্তিতে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘাতক চালক মাসুম গত এক বছর ধরে জাবালে নূর পরিবহনের বাস চালাচ্ছেন। এর জন্য প্রতিদিন গাড়ির মালিককে ৭০০ টাকা করে দিতেন তিনি। ঘটনার দিন ২৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় আগারগাঁও থেকে বাস নিয়ে (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৯২৯৭) নতুন বাজারের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। অধিক যাত্রী আগে ভাগে ওঠাতে পারলে বেশি টাকা পাওয়া যাবে এমন আশায় জাবালে নূরের অপর বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৭৫৮০) সঙ্গে ইসিবি চত্বর থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এর ফলে ফ্লাইওভারের উপরের দু’পাশের রেলিংয়েও কয়েকবার বাস দু’টির ঘষা লাগে। অপর বাসটি ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়িয়ে থাকায় বাম পাশ দিয়ে বেপরোয়াভাবে ফুটপাতে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীর গায়ের ওপর বাস তুলে দেন চালক মাসুম।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। একই ঘটনায় আহত হয় আরও ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় দিয়া খানম মীমের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন ফকির ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে করে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন