বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার শপথ নিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। আইনি লড়াইয়ে সম্ভব না হলে আন্দোলনের মধ্যেমে আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তারা মুক্ত করবেন। এরপর তাকে নিয়ে, তার নেতৃত্বেই নির্বাচনে যাবেন তারা। দলের সিনিয়র এবং তৃণমূলের নেতারা গতকাল (শনিবার) বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নয়াপল্টনের সমাবেশে এসে এমন কথাই বলছেন। বেশ কিছুদিন পর ঢাকায় আবারো জনসভা করলো বিএনপি। নয়া পল্টন এলাকার আশেপাশে ফকিরাপুল মোড় থেকে নাইটিঙ্গেল, আরামবাগ, শান্তিনগর পর্যন্ত এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। নেতাকর্মীদের পদভারে পরিপূর্ণ ছিল এসব এলাকা। সমাবেশে আসা সাধারণ নেতাকর্মীদের মুখে ছিল দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির স্লোগান । হাতে ছিল মুক্তির দাবি সম্বলিত প্লেকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন। তারা বলছেন, নির্বাচনের আগে অবশ্যই বিএনপির চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে নির্বাচনে যাওয়ার মানে হবে গুম, খুন ও নিখোঁজ হওয়া নেতাকর্মীদের সাথে বেইমানি। বেগম জিয়ার মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে অবিলম্বে কঠোর কর্মসূচীর জন্য বিএনপির হাইকমান্ডের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এদিকে বিএনপির সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ দলীয় ফেসবুক পেইজে লাইভ ও অন্যান্য মাধ্যমে লন্ডনে সরাসরি দেখেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জানা যায়, বেলা দুইটায় গতকাল জনসভা শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড এবং আশেপাশের অনেক জেলা-উপজেলা হতে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হতে থাকেন। তাদের হাতে ছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার আর ফেস্টুন। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন আগত হাজারো নেতাকর্মী। তারা দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিসহ নানা দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে সভাস্থল মুখরিত করে তোলেন। জনসভা মঞ্চে বাজানো হয় দেশাত্মবোধক গান। মঞ্চের সামনে বসার জন্য কার্পেটের ব্যবস্থা করা হয়। এতে কখনো বসে, কখনো দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই; মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই বলে স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর ছাড়াও ঢাকার আশেপাশের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী জেলার অসংখ্য নেতাকর্মী গতকালের সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমানের নেতৃত্বে দুই শতাধিক নেতাকর্মী গতকালের জনসভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। জানতে চাইলে রোমান বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে দেশনেত্রী বেগম খালেদাকে সবচেয়ে বেশি মনে পরছে। নেত্রী ছাড়া সবকিছু শুন্য মনে হয়। তারপরও মনোবল হারাইনি। আগামীদিনে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন সংগ্রামে শিবচর উপজেলা বিএনপি রাজপথে থাকবে। প্রয়োজনে যে কোনোদিন ঘোষণার মাধ্যমে স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা আসবে। এতে সবার আংশগ্রহণ কামনা করছি। কারণ আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া জাতীয় নির্বাচন চাইনা।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জনসভা উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর বিজয়নগর, কাকরাইল, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, নাইটেঙ্গেল মোড়, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, মতিঝিল-আরামবাগ পর্যন্ত হাজারো দলীয় নেতাকর্মীর ঢল নামে। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, কৃষকদল সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা জনসভায় অংশ নেন। ছাত্রদলের সহসভাপতি আলমগীর হাসান সোহানের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী জনসভায় আসেন। সোহান বলেন, আজকের জনসভা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আগামী দিনে বিএনপি যে কোনো কর্মসূচী দিলে তা সফল করা হবে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজীব আহসান চৌধুরী পাপ্পুও একই মন্তব্য করেন।
প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদাল আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানের নেতৃত্বেও পেশাজীবীরা বিএনপির এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গতকালের জনসভায় জনতার ঢল নেমেছিল। অসংখ্য নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণই প্রমাণ করে এই অবৈধ সরকারের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। তারা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে ফের একতরফা নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু সে নির্বাচন দেশের মাটিতে আর হবে না, হতে দেয়া হবেনা। এবার চারদিকে তাদের পতনের আওয়াজ উঠেছে। এতো হামলা-মামলা, গুম-খুনের পরও বিএনপির সমাবেশে যেভাবে লোকসমাগম হয়েছে তা রীতিমতো সরকারের মাথা ব্যাথার কারণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন