বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের সকল নেতাকর্মী এখন সর্বাত্মক আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। বিশেষ করে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশাল সমাবেশের পর সারাদেশের নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। ‘ডু অর ডাই’ এমন মনোভাব নিয়ে দলের চেয়ারপার্সনের মুক্তি এবং সরকারের পতন আন্দোলনে নামতে তারা বদ্ধপরিকর। গ্রেফতারের ভয়ে এখন আর কেউ পালিয়ে বেড়াতে চান না। মরণপণ প্রতিজ্ঞা নিয়ে এবার তারা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে প্রস্তুত। সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
তৃণমূল নেতারা বলেছেন, কেন্দ্র থেকে যখনই আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে তখনই তারা সাহসের সাথে তাতে যোগ দেবেন। এবার আর পিছু হটার কোন সুযোগ নেই। এই ‘অবৈধ স্বৈরাচারী’ সরকারের পতন ছাড়া তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কাজেই এবার আর কেউ পালিয়ে থাকবে না। জেলে যেতে হলে রাজপথে আন্দোলন করে বীরের মতোই জেলে যাবে।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন তাদের এবারের আন্দোলন অবশ্যই সফল হবে। সরকারের অন্যায় -অত্যার, জুলুম -নির্যাতন, গুম-খুন, লুটপাট আর দুর্নীতির কারণে শুধু বিএনপি নয়, সারাদেশের মানুষ আজ অতিষ্ট। তাই দেশের মানুষও এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য মুখিয়ে আছে। এ অবস্থায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট আন্দোলনের ডাক দিলেই মানুষ তাতে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে। আর এই স্বতস্ফূর্ত গণআন্দোলনের মুখে এই অবৈধ স্বৈরাচারী সরকারের অবশ্যই পতন ঘটবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের দলের চেয়ারপার্সনকে ছাড়া ১ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে যে বিশাল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছে এটা অবশ্যই তৃণমূল নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করেছে। শুধু তাই নয় এই জনসভা দেশের সাধারণ নিপিড়িত নির্যাতিত জনগণের মনেও আশা জাগিয়েছে। দেশের জনগণও এবার আমাদের আন্দোলনে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে। কারণ আমারা যেসব দাবিতে আন্দোলন করছি তা দেশের আপামর জনগণের দাবি। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং লুটপাট দুর্নীতিবন্ধের যে আন্দোলন তাতে সারাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করবে। গতকালের বিশাল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ তারই ইঙ্গিত বহন করে।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভাবনা বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নয়াপল্টনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশাল শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পর সারা দেশের নেতাকর্মীরা এখন উজ্জীবিত। তাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। আগামি আন্দোলন সফলের ব্যাপারে সবাই এখন আত্মবিশ্বাসী। দলের চেয়ারপার্সনের মুক্তি এবং সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য সবাই এখন প্রস্তুত। কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অপেক্ষায় আছে নেতাকর্মীরা। এবার সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সাহসের সাথে আন্দোলনের মাঠে থাকবে।
বিএনপির ১ সেপ্টেম্বরের বিশাল জনসভায় প্রতিটি বক্তার কন্ঠে ছিল আত্মবিশ্বাসের সুর। বিসিসি বাংলার প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। জনসভার এই আত্মবিশ্বাসের সুর সারাদেশে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীরাও এখন দৃঢ়চেতা এবং আত্মবিশ্বাসী। এ বিষয়ে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আন্দোলন এবং নির্বাচন দুটোর জন্যই প্রস্তুত। নয়াপল্টনসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জনসভার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্দীপনা অবশ্যই বৃদ্ধি পেয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আন্দোলনের জন্য মুখিয়ে আছে। বিএনপির নেতৃত্বে যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে উঠছে তাতে আমাদের আন্দোলন আরও গতিশীল হবে। কেন্দ্র থেকে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষিত হলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অবশ্যই গতবারের মতো সাহসী ভূমিকা রাখবে এবং তা অবশ্যই সফল করবে। তবে এবার কেন্দ্রের আন্দোলনও জোরালো এবং শক্তিশালী হতে হবে।
ফেনী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন মিস্টার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের চেয়ারপার্সন কারাবন্দি থাকার পরও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জনসভায় যে বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মীর উপস্থিতি তাতে সারাদেশের নির্যাতিত জনগণও এখন উজ্জীবিত এবং আশাবাদি। বিএনপির নেতৃত্বে আগামীদিনে যে আন্দোলন হবে তাতে নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষও স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে। আর এই গণআন্দোলনে অবৈধ স্বৈরাচার সরকারের বিদায় ঘন্টা বাজবে।
বগুড়া জেলা যুবদলের সভাপতি শফিকুল আলম সমাপ্তি ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সফল জনসভার পর আমাদের নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনা অবশ্যই বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীরা এবার ‘ডু অর ডাই’ এই মনোভাব নিয়ে আন্দোলনে মানতে প্রস্তুত। গ্রেফতারের ভয়ে এখন আর কেউ পালিয়ে থাকবে না। গতকালও আমাদের নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। তাই এবার আমাদের মরণপণ আন্দোলনের জন্য মাঠে নামতে হবে। আন্দোলন ছাড়া আমাদের আর কোন পথ খোলা নেই।
বগুড়া জেলার চুনারুঘাট পৌর বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র জাকিরুল ইসলাম বিপুল ইনকিলাবকে বলেন, আন্দোলনের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের এবারের আন্দোলন হবে সর্বাত্মক আন্দোলন। ঘরে বসে থাকা বা পালিয়ে থাকার আর কোন সুযোগ নেই। এবারের আন্দোলন হবে এক স্বতস্ফূর্ত গণআন্দোলন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন