স্টাফ রিপোর্টার : টেলিভিশন অনুষ্ঠানকে স্টুডিও’র চার দেয়ালের বাইরে নিয়ে এসে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রাচীন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শণ, ভূতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য এবং পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা স্থানগুলোতে গিয়ে ইত্যাদির মূল অনুষ্ঠান ধারণ করা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকেই। তুলে ধরা হচ্ছে সেইসব স্থানের কৃষ্টি, সংস্কৃতিসহ গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য। উদ্দেশ্য নিজেকে জানা ও শেকড়ের অনুসন্ধান। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের ইত্যাদি ধারণ করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে হর্টিকালচার সেন্টারের অভ্যন্তরের আম্রকাননে। আম্রকাননেই আমাদের ইতিহাসের নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়-আমাদের অনেক আন্দোলন, সংগ্রামের সিদ্ধান্তও হয়েছে আমতলাতে। এছাড়া এখন চলছে আমের মৌসুম। আর সেই আমের রাজধানীও হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বরেন্দ্র অঞ্চল গৌড়ের, বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শণ ও প্রতœ সম্পদে সমৃদ্ধ একটি জেলা যা সুলতানী আমলে গৌরবের শিখরে উন্নীত হয়। তাই বাংলা বছরের প্রথম মাসে ইত্যাদির ধারণ স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয় এই চাঁপাইনবাবগঞ্জকে। ইত্যাদি যে স্থানেই ধারণ করা হয় তুলে ধরা হয় সেই স্থানের অনেক তথ্য। যা পরবর্তীতে আর্কাইভে সংগৃহীত হয়। এবারের ইত্যাদিতেও আমাদের এই প্রাচীণ ভূ-ভাগ সম্পর্কে জানা যাবে অনেক অজানা তথ্য। অনুষ্ঠানে প্রায় পঞ্চাশ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিলেন। ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছিল উৎসবের আমেজ। আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ প্রচ- গরমের মধ্যেও আশপাশের রাস্তায় ও বিভিন্ন গাছের ওপর বসে ‘ইত্যাদি’র ধারণ উপভোগ করেন। ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে ধারণস্থানের আম বাগানকে সাজানো হয়েছিল বর্ণিল সাজে। আম বাগানে করা ব্যতিক্রমী দৃষ্টিনন্দন মঞ্চে ইত্যাদির ধারণ অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময়ে দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেছেন ইত্যাদির নান্দনিক সব পর্ব। শেকড় সন্ধানী ইত্যাদিতে সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের খুঁজে এনে তাদের বিভিন্ন কর্মকা- তুলে ধরা হয়। যাতে তাদের এসব কাজ দেখে অন্যেরাও অনুপ্রাণিত হতে পারেন। এবারের পর্বেও রয়েছে তেমনি কয়েকটি হৃদয় ছোঁয়া প্রতিবেদন। তবে অনুষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী শুরুতেই থাকছে অনুষ্ঠান ধারণস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং আম নিয়ে দু’টি তথ্যবহুল প্রতিবেদন। রয়েছে ফজলে রাব্বী রবিন নামে এক যুবকের সর্পপ্রীতির ওপর একটি সচেতনতামূলক প্রতিবেদন। রয়েছে খুলনার ফুলতলা উপজেলার প্রচার বিমুখ, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সেবায় নিবেদিত প্রাণ, শিক্ষানুরাগী মানুষ জনাব কুতুবুদ্দিন আহমেদ এর ওপর একটি শিক্ষামূলক প্রতিবেদন। এবারের বিদেশি প্রতিবেদন করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাশে অবস্থিত অষ্টাদশ শতাব্দীতে বাংলার নবাবদের আবাসস্থল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদে। এই প্রতিবেদনে জানা যাবে নবাবদের নানান বিচিত্র ঘটনা। চাঁপাইনবাবগঞ্জকে নিয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান এর লেখা ও হানিফ সংকেতের সুরে একটি গানের সঙ্গে স্থানীয় প্রায় শতাধিক নৃত্যশিল্পীর অংশগ্রহণে রয়েছে একটি জমজমাট নৃত্য। নৃত্য পরিচালনা করেছেন ল্যাডলী মোহন মৈত্র ও গৌরী চন্দ্র সিতু। গানটির সঙ্গীতায়োজন করেছেন মেহেদী। রয়েছে একটি বক্তব্যধর্মী মিউজিক্যাল ড্রামা। গানটিতে বিভিন্ন অফিসের কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন অভিনেতা প্রাণ রায় ও জয়রাজ। দর্শক পর্বের নিয়ম অনুযায়ী যেই স্থানে ইত্যাদি ধারণ করা হয় সেই স্থানকে ঘিরে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয় এবং সঠিক উত্তর দাতাদের নিয়ে করা হয় ২য় পর্ব। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং এই অঞ্চলের প্রধান ফসল আমকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত দর্শকদের নিয়ে করা হয়েছে ২য় পর্ব। ২য় পর্বের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গম্ভীরা শিল্পী মাহাবুবুল আলম ও ফাইজুর রহমান মানি চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং আমাদের লোকসঙ্গীত নিয়ে গম্ভীরা পরিবেশন করেছেন। তাদের পরিবেশিত গান থেকে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বিজয়ী নির্বাচন করা হয়েছে। নিয়মিত পর্ব হিসেবে এবারও রয়েছে যথারীতি মামা-ভাগ্নে, নানী-নাতি ও চিঠিপত্র বিভাগ। রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষè নাট্যাংশ। শহুরে বাঙালি বনাম গ্রাম্য বাঙালি, হাতের রেখা ও নেতার মর্জি, আইন ও আইনের প্রয়োগ, রোগীর কথায় অবাক ডাক্তার, উভয় সংকট, অন্তর বনাম বাহ্যিক সৌন্দর্য, ফেসবুকের ভালো-খারাপসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। বরাবরের মতো এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। পরিচালকের সহকারী হিসেবে ছিলেন যথারীতি রানা ও মামুন। সব শ্রেণী পেশার মানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির আগামী পর্ব একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে-এ প্রচারিত হবে ২৯ এপ্রিল, শুক্রবার রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদির রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কস্মেটিকস্ লিমিটেড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন