রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আকুতি

নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন অসহায় বাবা

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে : | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

দালালের মাধ্যমে সউদী আরবে পাচারের পর মেয়ের ওপর নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন অসহায় বাবা। সাংবাদিকদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি তার আদরের সন্তানকে জীবিত ফিরে পেতে আকুল আবেদন করেছেন সকলের কাছে। একই সাথে পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানানো হয়েছে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে।
গতকাল সকাল ১১ টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সদর উপজেলার মাগুরা কর্মকার পাড়ার বাসিন্দা নূর ইসলাম মিন্টু অশ্রুসিক্ত কন্ঠে জানান, তার আদরের মেয়ে জান্নাতিকে (২২) হাসপাতালে ৪০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে নার্সের চাকুরি দেওয়ার নাম করে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে সউদী আরবের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় আন্তর্জাতিক নারী পাচার সিন্ডিকেডের সদস্য প্রতিবেশী নাছিমা খাতুন ও তার সহযোগি খুলনা শহরের টুটপাড়ার কামরুজ্জামান ওরফে সোহাগ বাবু। ঢাকার কলাবাগানের তানিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে জান্নাতিকে সউদী আরবে নিয়ে যাওয়ার পরপরই সেখানকার দালাল ফরহাদের মাধ্যমে সমুদ্র বন্দর ‘দাম্মাম খাবজি’ এর নিকটবর্তী দুম্বা খাটালের মালিক ‘হায়ান ম্যাডাম অরফা’ এর কাছে চার লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। এর আগে প্রকৃত জন্মসনদ বাদ দিয়ে তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপুর কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জন্মসনদ সংগ্রহ করে পাসপোর্ট তৈরিতে ব্যবহার করেন নাছিমা ও সোহাগ বাবু। প্রথম দিন থেকেই জান্নাতিকে ১০ থেকে ১১ জন পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়। অপারগতা প্রকাশ করায় সারা দিনে মাত্র একটি রুটি ও পানি খাইয়ে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। সে যাতে বাড়িতে যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেওয়া হয়। সম্প্রতি বাড়িওয়ালীর মোবাইল ফোনের ইমোতে জান্নাতি তার উপর নির্যাতনের কাহিনী পরিবারের সদস্যদের জানায়। এখানে শুধু সে নয়, বাংলাদেশি আরো বেশ কয়েকজন নারীকে সেখানে একইভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে জান্নাতি তাদের জানিয়েছে।
বহু পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হতে আপত্তি করায় ইতোমধ্যেই মেয়ের দুটি স্তন, উরু, পা ও হাত গরম ইস্ত্রি দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ডান চোখটি ঘুষি মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু ’পাচারকারি গ্রেফতার হওয়ার পর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। তাদেরকে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে মেয়েকে যে কোন সময় মেরে ফেলা হবে বলে তাকে জানানো হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
শরীরের দগদগে ক্ষত নিয়ে প্রতিদিন যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া মেয়েকে জীবন্ত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনতে গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সউদী আরবস্থ বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রি, প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, মানবাধিকার সংগঠন ও বিচার বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে । এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক অনুপ কুমার দাস জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন