রবিউল কমল
স্কলাসটিক অ্যাপটিচ্যুড টেস্ট এবং স্কলাসটিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট সংক্ষেপে পরিচিত স্যাট নামে। আমেরিকার কলেজগুলোতে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার জন্য স্যাট স্কোর থাকা প্রয়োজন। আমেরিকার অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কলেজ বোর্ড স্যাটের সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে। ১৯০১ সাল থেকে চলে আসা এ পরীক্ষার নাম ও পরীক্ষার পদ্ধতি বেশ কয়েকবারই পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে প্রবর্তিত নিয়ম অনুযায়ী স্যাট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় তিন ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। ঢাকায় আমেরিকান সেন্টারের স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজার আরেফিন জাহান বলেন, ‘বিদেশে প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেগুলো অর্থনৈতিকভাবে ছাত্রদের সহায়তা করে থাকে। এ সহায়তাটুকু যেকোনো ছাত্র সহজেই পেতে পারে। তার জন্য তাকে স্যাট-১-এর পাশাপাশি স্যাট-২ পরীক্ষাটি দিতে হবে।’ স্নাতক পর্যায়ে বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য যাদের প্রথম পছন্দ যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডা। স্যাট (ঝঅঞ) তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য কতখানি তৈরি, এই পরীক্ষার মাধ্যমে তা যাচাই করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের সঙ্গে স্যাট স্কোর জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। তবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি বাধ্যতামূলক নয়, সেসব ক্ষেত্রেও শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার জন্য স্যাট পরীক্ষার স্কোর বেশ কাজে দেয়।
পরীক্ষা পদ্ধতি : ঈৎরঃরপধষ ৎবধফরহম, সধঃয ও ৎিরঃরহম এই তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের স্যাট পরীক্ষাকে। প্রতি অংশে ৮০০ করে মোট ২৪০০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া হয়। ঈৎরঃরপধষ ৎবধফরহম-এ মূলত শব্দজ্ঞান, ছোট-বড় বিভিন্ন ঢ়ধংংধমব পড়ে অনুধাবন করার ও তার ওপর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। সধঃয অংশের প্রশ্নগুলোর মধ্যে রয়েছে পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতি-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানজনিত প্রশ্ন। ৎিরঃরহম অংশে থাকে বাক্য ও প্যারাগ্রাফ উন্নতিকরণ সম্পর্কিত প্রশ্ন, যেখানে একাধিক সম্ভাব্য উত্তরের মধ্য থেকে সঠিক উত্তরটি খুঁজে বের করতে হয়। এছাড়া এ অংশে নির্ধারিত বিষয়ের ওপর একটি রচনা লিখতে হবে, যার জন্য সময় বরাদ্দ মাত্র ২৫ মিনিট। স্যাট পরীক্ষায় সর্বনিম্ন স্কোর ৬০০ এবং সর্বোচ্চ স্কোর ২৪০০। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদনের জন্য কোনো নূন্যতম স্কোরকে আবশ্যক হিসেবে উল্লেখ করা হয় না, তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্কোর ২০০০ থেকে ২৪০০-এর মধ্যে হয়ে থাকে।
ক্রিটিক্যাল রিডিং : এর পরীক্ষা নেয়া হয় মৌখিকভাবে। তিনটি বিভাগে রিডিংয়ের পরীক্ষাগুলো নেয়া হয়। এরমধ্যে ২৫ মিনিট করে দুটো বিভাগ এবং একটি বিভাগের জন্য ২০ মিনিট সময়সীমা নির্ধারিত। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নগুলোর মধ্যে বাক্য সমাপ্তিকরণ, ছোট ও বড় প্যাসেজ সম্পর্কে প্রশ্ন থাকে। বাক্য সমাপ্তিকরণে সাধারণত ছাত্রদের শব্দজ্ঞান, বাক্যগঠন, বোঝার ক্ষমতা এবং সঠিক শব্দ দ্বারা বাক্যগঠন সম্পর্কিত প্রশ্নও থাকে। পরীক্ষায় দেয়া প্রশ্নগুলো পর্যায়ক্রমে সহজ থেকে কঠিন হতে থাকে।
গণিত : এ বিভাগটি পরিচিত ক্যালকুলেশন সেকশন নামে। তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে এটিকে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগের বেশিরভাগ অংশজুড়ে রয়েছে সঠিক উত্তর খুঁজে বের করার পদ্ধতি। এখানেও দুটো বিভাগ ২৫ মিনিট করে এবং তৃতীয় বিভাগের জন্য ২০ মিনিট সময় নির্ধারিত। পরীক্ষার্থীরা গণিত পরীক্ষার সময় গ্রাফিং ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবেন।
লেখা : এ বিভাগে সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা প্রশ্নগুলোর মধ্যে পাবেন শব্দ এবং প্যারাগ্রাফ উন্নতিকরণ প্রশ্ন। ভুল কিছু প্রশ্ন দেয়া থাকবে, যার ঠিক উত্তরটি দেয়ার মাধ্যমে আপনার সাধারণ জ্ঞানের ভা-ার যাচাই করা হবে। এছাড়া ২৫ মিনিটের মধ্যে রচনা লিখতে হবে। সামাজিক এবং আপনার এত বছরের শিক্ষাজীবন থেকে অর্জিত অথবা দেখাশোনার অভিজ্ঞতা থেকেও রচনাগুলো লেখা যাবে। তবে লিখতে হবে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। প্রতিটি রচনার জন্য ১-৬-এর ভেতর স্কোর দেয়া হবে। কোনো রচনা না লেখা হলে, বিষয়-বহির্ভূত রচনা, ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় লেখা হলে লেখা না হলে সেই রচনায় ০ স্কোর দেয়া হবে।
কোথায়, কীভাবে পরীক্ষা : স্যাট পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রথমেই স্যাটের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (িি.িপড়ষষবমবনড়ধৎফ.ড়ৎম) গিয়ে অনলাইনে নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। পরীক্ষা দেয়ার কমপক্ষে এক মাস আগে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা জরুরি। বাংলাদেশে পরীক্ষা দেয়ার জন্য খরচ পড়বে ৯২ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা। এছাড়া রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজন হবে পাসপোর্ট এবং পিপি ছবির ডিজিটাল কপি।
প্রস্তুতি : শুরুতেই স্যাট-বিষয়ক বইগুলো থেকে একটি প্র্যাকটিস টেস্ট দিয়ে নেয়া ভালো। এরপর প্রাথমিক স্কোর বুঝে পরবর্তী প্রস্তুতির পরিকল্পনা নেয়া দরকার। স্যাটে ভালো স্কোর করার জন্য কোচিংয়ে দৌড়াতেই হবে এমনটি নয়। চাইলে ঘরে বসেও অফিশিয়াল স্যাট স্টাডি গাইড, ব্যারন’স, প্রিন্সটন রিভিউ, কাপলান, গ্রুবার’স, ম্যাকগ্র-হিল ইত্যাদি বইয়ের সাহায্য নিয়ে স্যাট পরীক্ষার জন্য নিজেকে তৈরি করা যায়।
বছরের যে সময়ে স্যাট দেওয়া যাবে
আমেরিকায় বছরের সাতটি সময়ে স্যাট পরীক্ষা দেয়ার সময় নির্ধারণ করা আছে। অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, মার্চ অথবা এপ্রিল, মে ও জুন। নভেম্বর, ডিসেম্বর, মে ও জুনের পরীক্ষা নেয়া হয় মাসের প্রথম শনিবারে। আমেরিকান সেন্টার থেকে জেনে নেয়া যাবে পরীক্ষার তারিখ।
তথ্যসূত্র : স্যাটের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট (িি.িপড়ষষবমবনড়ধৎফ.ড়ৎম)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন