ডিএমপির ২২ শর্ত মেনেই সমাবেশ করেছে বিএনপি। এ সমাবেশকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে গণজোয়ার। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ১০ থেকে সোরওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকা লোকেলোকারণ্য হয়ে পড়েছে। গ্রেফতার আতঙ্ক, পথে পথে বাধা উপেক্ষা করে খন্ড খন্ড মিছিল সকাল থেকে সমবেত হতে থাকে রমনাপার্ক, মৎস্য ভবন, সেগুনবাগিচা হাইকোর্ট, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, দুপুর একটার মধ্যে এসব এলাকায় তিল ধরনের ঠাঁই ছিল না। এ সময় ওইসব এলাকা ট্রাফিক জ্যাম জনজীবনকে অতীষ্ঠ করে তোলে। এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। অবশ্য বিএনপি কর্মীরা কোথাও কোথাও ট্রাফিকের ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি, ধানের শীর্ষে ভোট দিন, এ ব্যানারে অধিকাংশ মিছিল সমাবেশ স্থলে এসেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী জেলাসহ ঢাকার আশপাশের জেলা উপজেলা ও পৌরসভা এলাকা থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতাকর্মীরা এ সমবেশে উপস্থিত হতে দেখা গেছে।
বেগম খালেদা জিয়াকে সমাবেশে প্রধান অতিথি ঘোষণার পর সমাবেশ স্থলসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় মিছিল শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। এ সময় বিএনপি কর্মী সমর্থকরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কোঠিন কর্মসূচি দাবি করে শ্লোগান দিতে থাকে।
বিভিন্ন স্থান থেকে আগত কর্মীরা সমর্থক জানান, সকাল থেকে সদরঘাট, লঞ্চ টার্মিনাল, গাবতলী বাস স্টেশন, মহাখালী বাস স্টেশনে, সায়েদাবাদ এলাকায় পুলিশসহ সরকার দলীয় লোকজন মিছিল ও ব্যানার নিয়ে সমাবেশ থেকে বাধা দেয়। নারায়ণগঞ্জ এলাকার যুবদল কর্মী মামুন জানান, আর কত দিন পালিয়ে বেড়াব, বাড়ীঘরে থাকতে পারি না পুলিশি হয়রানীর ভয়ে। এ সমাবেশ বিএনপি নেতাকর্মীদের নামার শক্তি জোগাবে। গাজীপুর সিটি এলাকার বিএনপি কর্মী তাজুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ৭টায় আমরা ৪০ জন একটি বাস রিজার্ভ করে ঢাকা আসতে ছিলাম, পথে পথে বাধা অতিক্রম করে আমরা মাত্র ৩ জন আসতে পেরেছি। বাকীরা আসতে পারেনি। টঙ্গি এলাকার ছাত্রদল নেতা শাহাদাত হোসেন বলেন, সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা গতরাত থেকে আমাদের পাহারা দিচ্ছে আমরা যাতে সামবেশে না যেতে পারি।
খালেদা জিয়ার প্রতি ভালোবাসা :
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আহমদ বলেন, এ গণজোয়ার বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি আমাদের ভালোবাসা। তার আপসহীন নেতৃত্ব বিএনপিকে উজ্জীবিত রেখেছে। মা’এর মতো আমরা তাকে ভালোবাসি। তার অনুপস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যাবে না। ফতুল্লা এলাকার বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিন সরকার বলেন, খালেদা জিয়াকে ঘিরে বিএনপি। তার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। আমার পরিবারের সকলেই তার মুক্তির জন্য দোয়া করছেন। তার প্রতি ভালোবাসার কারণেই আজকে শত বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশে উপস্থিত হয়েছি। ঢাকার হাতিরপুল এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মো: ফারুক বলেন, খালেদা জিয়ার মতো আপসহীন ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সব চেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, তাঁকে জেনে রেখে নির্বাচনে গেলে তা হবে ভুল সিদ্ধান্ত। ঢাকার বাসাবো এলাকার অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী মো. আবুল কাশেম বলেন, মানুষের কাছে জনপ্রিয় হলেন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর প্রতি আন্তরিকতার কারণে আজকে সমাবেশে এসেছি। কারো কথায় নয়।
গ্রেফতার আতঙ্ক ও নাশকতা :
পথে পথে পুলিশ ও সরকারী দলীয় বাহিনীদের বাধা এবং গ্রেফতার আতঙ্ক মাথায় নিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে খন্ড খন্ড হয়ে সমাবেশে এসেও বেশি সময় থাকতে পারেনি অসংখ্য নেতাকর্মী সমর্থক। সমাবেশ শেষ হওয়ার আগেই অনেকে গ্রেফতার আতঙ্ক এবং নাশকতার আশঙ্কায় বাড়ী ফিরে গিয়েছেন। ডেমরা থানা যুবদল নেতা নজীর আহমদ জানান, সরকার দলীয় লোকজন নাশকতার সৃষ্টি করে বিএনপির উপর অভিযোগ এনে গণগ্রেফতার করতে পারে এ আশঙ্কায় আমরা চলে যাচ্ছি।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপি কর্মী আবদুল মতিন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী। তিনি জানান, গত ১০ বছরে তিনি ৯ বার গ্রেফতার হয়েছেন। কোন অভিযোগ নেই। বিএনপি করি এটাই অপরাধ। জামিন নিতে গিয়ে পেনশনের সব টাকা ব্যয় করে এখন পান দোকান দিয়ে জীবন বাঁচাতে চেষ্টা করছি। তারপর ও আতঙ্কে আছি। আমাদের এলাকা থেকে কয়েক হাজার লোক সমাবেশে এসেছে। গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকেই চলে গেছেন আমিও চলে যাচ্ছি। খালেদা জিয়ার সমাবেশ থাকলে সাহস থাকতো।
বিএনপির আইড কার্ড :
পুরান ঢাকার মো. জাহাঙ্গীর আলম। সকাল থেকে বিএনপির আইডি কার্ড, ধানের শীষে ভোট দিন, খালেদা জিয়ার ছবি ছাপা গেঞ্জী বিক্রি করছেন। দুপুর দুইটার সময় তার সাথে দেখা হয় মৎস্য ভবনের সামনে। জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, বিএনপির আইডি কার্ড প্রতিটি ১০ টাকা, গেঞ্জী প্রতিটি ৫০ টাকা, এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪শ’ পিচ বিক্রি হয়েছে। লোক পাঠিয়েছি। আরও আনবে। অনেক লাভ হয়েছে। যারা টাকা দিতে পারবে না তাদের ফ্রি দেবো। আমি নিজেও বিএনপি করি। সমাবেশে আসা হলো, লাভও হলো।
খাবার নেই, পানি নেই। সমাবেশ আশপাশের এলাকায় অধিকাংশ দোকানে, হোটেলে নেই খাবার, নেই চা, বিস্কুট, প্রচন্ড রোধ ও গরম উপেক্ষা করে থাকা যায়, ক্ষুধা আর পিপাসা নিয়ে কতক্ষণ থাকা যাবে। তারপরও মানুষ আসছে, যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন