আর কত ব্যর্থতার গল্প! মাত্র একমাসের ব্যবধানে ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় ব্যর্থতার স্বাদ নিলো বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। গত মাসে সাফ সুজুকি কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়ার পর এবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনালেই থেমে গেল লাল-সবুজরা। গতকাল কক্সবাজারের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের শেষ চারের দ্বিতীয় ম্যাচে ফিলিস্তিন ২-০ গোলে স্বাগতিক বাংলাদেশকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা পেল। বিজয়ী দলের হয়ে মোহাম্মদ বালাহ ও সামেহ মাহেরবা একটি করে গোল করেন। এই জয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে তাজিকিস্তানের মুখোমুখী হবে ফিলিস্তিন। আগামীকাল ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এই ফাইনাল। ম্যাচ শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।
১০ অক্টোবর বাংলাদেশের ফুটবলে একটি কালো দিনই হয়ে রইলো। দু’বছর আগে এ দিনেই ভুটানের থিম্পুতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরেছিল লাল-সবুজরা। এরপর প্রায় দেড় বছর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নির্বাসনে বাংলাদেশ জাতীয় দল। ভুটানের ওই হার দেশের ফুটবলকে লজ্জায় ডোবানোর দু’বছর পর ফের একই দিনে আরেকটি হার। তবে এই হারটি লজ্জার না হলেও স্বপ্নভঙ্গের। খেলোয়াড়সহ দেশের ফুটবলপ্রেমীদের আশা ছিল এবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে খেলবে স্বাগতিকরা। কিন্তু না, স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। এখন বাংলাদেশ দল দর্শক হয়ে গ্যালারিতে বসে তাজিকিস্তান-ফিলিস্তিনের মধ্যকার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ দেখবে।
ঝড় তিতলির কারণে কাল সাগর ছিল উত্তাল। নিম্নচাপও ছিল। সমুদ্র উপকূলে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেতের মধ্যে সকাল থেকেই কক্সবাজারে ছিল গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যেই জেলা স্টেডিয়ামে দর্শকদের ভিড় ছিল নজরকাড়া। খেলা শুরু হওয়ার প্রায় দু’ঘন্টা আগেই পরিপূর্ণ হয়ে যায় ১০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসমপন্ন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামের গ্যালারি। ম্যাচের পুরোটা সময়ই বাংলাদেশ দলকে সমর্থন যুগিয়েছেন দর্শকরা। কিন্তু দর্শকদের প্রত্যাশার কোন মূল্যই দিতে পারলেন না জাতীয় দলের ফুটবলাররা। দলের চার সদস্য কক্সবাজারের সন্তান ফরোয়ার্ড সবুজ, মিডফিল্ডার ইব্রাহিম, ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরা ও গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোদের ‘সেরাটা দিয়েই জয় তুলে আনার’ স্বপ্নও বাস্তবে রূপ নিলো না।
তবে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে খারাপ খেলেনি জামাল ভূঁইয়া বাহিনী। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৯৩ ধাপ এগিয়ে থাকলেও মাঠে ফিলিস্তিনের খেলায় সেই পার্থক্যের ছিটেফোটও ছিল না। বল দখলের লড়াই ছিল প্রায় সমানে সমান- ফিলিস্তিন ৫১ ও বাংলাদেশ ৪৯। পুরো ম্যাচে দারুন লড়াই করেছে লাল-সবুজরা। ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতাই ডুবিয়েছে স্বাগতিক দলকে। বেশ ক’টি গোলের সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি জীবন-সুফিলরা। ম্যাচের ৮০ মিনিটে বিপলুর পরিবর্তে বাংলাদেশ কোচ মাঠে নামান কক্সবাজারের সন্তান তৌহিদুল আলম সবুজকে। ম্যাচে দুই স্ট্রাইকার ব্যবহার করেও গোল পায়নি বাংলাদেশ।
কাল ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ করে খেলে দু’দল। তবে শুরুতেই এগিয়ে যায় ফিলিস্তিন। ম্যাচের ৮ মিনিটে দলটির পক্ষে প্রথম গোল করেন মোহাম্মদ বালাহ। এসময় ডানপ্রান্ত থেকে মুসাবাক বাতাত ক্রস করলে বক্সে অনেকটা অরক্ষিত জায়গায় দাঁড়িয়ে হেডে গোল করেন মোহাম্মদ বালাহ (১-০)। বাংলাদেশ ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ ঠিমমতো পাহারায় রাখতে পারেননি বালাহকে। গোলরক্ষক আশরাফুল আলম রানাও পজিশন মতো ছিলেন না। তবে গোল হজমের পর বাংলাদেশই আক্রমণ করেছে বেশি। প্রথমার্ধেই সমতা আনার একাধিক সুযোগও পায় স্বাগতিকরা। সুফিল ও জীবন সবচেয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। ২১ মিনিটে ফিলিস্তিন ডিফেন্ডারদের ভুলে বক্সে বল পান সুফিল। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান সুফিল। কিন্তু সেই বল জালে না ফেলে গোলরক্ষকের গায়ে মারেন সুফিল।
পিছিয়ে থেকে বিরতিতে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আক্রমণের ধারায় ছিল লাল-সবুজরা। এই অর্ধেও বেশ ক’টি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে তারা। কিন্তু ফিনিশারের অভাবে গোল পায়নি স্বাগতিকরা। লোকাল বয় সবুজকে নামিয়ে যেমন কাজ হয়নি তেমনি ইমন বাবুর পরিবর্তে রবিউলকেও নামিয়ে সুফল পাননি কোচ জেমি ডে। উল্টো ম্যাচের যোগকরা সময়ে দ্বিতীয় গোল হজম করে বাংলাদেশ। শেষ দিকে একের পর এক আক্রমন করে অলআউট খেলেও যখন গোল পাচ্ছিলো না লাল-সবুজরা তখন পাল্টা আক্রমন থেকে দ্বিতীয় গোল করেন ফিলিস্তিনের সামেহ মাহেরবার (২-০)। এতেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয় জেমি ডে’র শিষ্যদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন