সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

২১ আগস্ট বিএনপির হলে পিলখানা হত্যাকান্ডের দায় আ. লীগের

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

২১ অগাস্ট হামলার সময় বিএনপি সরকারে ছিল বলে তার দায় যদি রাষ্ট্রযন্ত্রকে দেওয়া হয়, তাহলে পিলখানা হত্যাকান্ড, হলি আর্টিজান হামলাসহ সব জঙ্গি হামলার দায় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের ওপরই বর্তায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালে সংঘটিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সংঘটিত হত্যাকান্ডের দায়িত্ব যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের হয়। তাহলে বর্তমান সরকারের শাসনামলে পিলখানা বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত হত্যাকান্ড, হলি আর্টিজানে হত্যাকান্ড এবং জঙ্গি হামলায় নিহত বিদেশী কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, এনজিও কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, ইমাম-মোয়াজ্জিন, যাজক, পুরোহিত, ব্লগারসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষের হত্যাকান্ডের দায় ক্ষমতাসীনদের ওপরই বর্তায়। গতকাল (শুক্রবার) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড মামলার রায়ে আদালতের দেওয়া পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বক্তব্যের সঙ্গে ‘হুবহু মিলে গেছে’। এই পর্যবেক্ষণ ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। তিনি বলেন, আদালতের পর্যবেক্ষণ ও ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বক্তব্যের হুবহু প্রতিফলন দেখে দেশের জনগণের মতো আমরাও বিস্মিত হয়েছি। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে-১৯৭১ এর পরাজিত শক্তি এদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাতে থাকে। পরাজিত শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে রোধ করে। জাতির পিতাকে হত্যার পর জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে না গিয়ে বহমান থাকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশুণ্য করার হীন চেষ্টা চালানো হয় বলেও আদালতের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালতের এসব পর্যবেক্ষণ এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বক্তব্য হুবহু এক।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকান্ড, জেলখানায় ৪ জাতীয় নেতার বর্বরোচিত হত্যাকান্ড এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো ঘৃন্য অপরাধকে একসূত্রে গাঁথার যুক্তি সঠিক হলে বিএনপি কিংবাা বিএনপি পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপরাধী বলা হল কোন যুক্তিতে? ১৯৭৪ সালে বিএনপির জন্মও হয়নি এবং ১৫ আগস্ট কিম্বা ৩ নভেম্বরের হত্যাকান্ডের বিচারে কোন আদালতই বিএনপি কিংবাা বিএনপির কোন নেতাকে অভিযুক্ত- এমনকি সম্পৃক্তও করেনি। তিনি বলেন- রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় হামলা হয়েছে- আদালতের এমন পর্যবেক্ষণ যুক্তিগ্রাহ্য কিংবা গ্রহণযোগ্য নয়।
এ মামলার রায়ে তারেক রহমানের সাজা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি, মুফতি হান্নানের বেআইনি দ্বিতীয় জবানবন্দি বাদ দিলে তারেক রহমান ও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিকে এ মামলায় অভিযুক্ত করা যেতো না। যৌক্তিক কারণে এই কথা বলা যায় যে মুফতি হান্নানকে দিয়ে জোর করে জবানবন্দিতে স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়টি যাতে তিনি প্রকাশ্য আদালতে বলতে না পারেন, সেজন্যই অন্য একটি মামলায় দ্রুততার সাথে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে গুরুত্বপ‚র্ণ এ বিষয়টির উল্লেখ না থাকাও বিস্ময়কর ও সন্দেহমূলক।
হুজি নেতা মুফতি হান্নান জবানবন্দি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, তারপরও ওই জবানবন্দির ভিত্তিতে তারেক রহমান এবং অন্যান্য নেতাকে অভিযুক্ত করে শাস্তি দেয়া কতটা মানবিক ও যুক্তিযুক্ত কিংবা আইনসঙ্গত হয়েছে তা উচ্চ আদালত বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করি।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে এস এম এ কিবরিয়া ও আহসান উল্লাহ মাস্টারের হত্যাকান্ডের উল্লেখ থাকলেও বর্তমান সরকারের আমলে সালাহ উদ্দিন আহমেদ, এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, জাকিরসহ গুম হওয়া রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কোন কথা নেই কেন? জনগণ তা জানতে চাইতেই পারে। রায়ের পর্যবেক্ষণে কাক্সিক্ষত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে গত ১০ বছরে হাজারো গুম, খুন, গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে পঙ্গু করা, হাজার হাজার গায়েবী মামলা দিয়ে লাখ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীদের বছরের পর বছর ঘরছাড়া করে রাখা, গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন করার বিষয়ে কোন কথা না থাকা রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই পারে।
এ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যে দলই থাকবেন, বিরোধী দলের প্রতি তাদের উদারনীতি প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক ফায়দা অর্জন করা মোটেই গণতান্ত্রিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ নয়। এ বিষয়টি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে বিরোধী দলের প্রতি সরকার ও সরকারি দলের প্রত্যাশিত আচরণ সম্পর্কে যেসব বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তা বর্তমান সরকারি দলের আচরণের ঠিক বিপরীত। আমরা আশা করব, সরকার আদালতের এসব পর্যবেক্ষণ মান্য করবে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমূখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
সাব্বির ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:২৩ এএম says : 0
কথায় যুক্তি আছে
Total Reply(0)
Nuzi ২ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:৪২ এএম says : 0
Ontore onisto sinta muke attiota.tar se odik valo pokasso sotruta.niote golot takle amota hobe e
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন