(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
৭. নারীদের প্রতি দয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আর তোমরা নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর, কারণ, নারীদের পাঁজরের বাম হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বাঁকা হাড় হল, উপরি ভাগ। যদি তাকে ঠিক করতে যাও তাহলে তুমি ভেঙ্গে ফেললে আর যদি তুমি তাকে দিয়ে সংসার করতে চাও তাহলে বাঁকা অবস্থাতেই তোমাকে তার সাথে ঘর সংসার করতে হবে। [বুখারি আদাবুল মুফরিদ ; ৩৩৩১, মুসলিম; ১৪৬৮]
৮. কন্যা সন্তানের প্রতি দয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর মাতা-পিতার নাফরমানি করাকে হারাম করেছেন, ভিক্ষা করা ও কন্যা সন্তানদের পুতে হত্যা করাকে হারাম করেছেন।’ [ মুসলিম : ২৪০৮ ]
৯. অমুসলিমদের প্রতি দয়া
সাহাবী আবু বছরা বর্ণনা করেন, ‘‘ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আমি এক রাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেহমান হই। তাঁর ঘরে যে ক’টি বকরি ছিল, সব ক’টির দুধ আমি একাই পান করে ফেলি। ফলে সে রাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ পরিবারের সবাই অভুক্ত অবস্থায় রাত যাপন করেন। তবুও তিনি আমার প্রতি বিন্দুমাত্রও বিরক্ত হন নি।’ [মুসনাদে আহমদ]
১০. শত্রু দের প্রতি দয়া
উহুদ যুদ্ধের সময় শত্রু দের দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও আহত ছিলেন এবং তার চেহারা হতে রক্ত ঝড়ছিলো। এই অবস্থায়ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য দু‘আ করলেন, ‘হে আমার মালিক! আমার লোকদের ক্ষমা কর। তারা জানেনা যে, তারা কী করছে।’ [সহীহ ইবনে হিব্বান : ৯৮৫]
১১. বন্দীর প্রতি দয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যেই মুসলিম তার বন্দীর সাথে খারাপ ব্যবহার করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ [মুসনাদে আহমদ : ৩২]
১২. শ্রমিকের প্রতি দয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা শ্রমিককে তার শরীরের ঘাম শুকানোর পূর্বেই পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।’ [ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৯৮৭]
১৩. জীব জন্তুর প্রতি দয়া
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি উটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি দেখলেন, উটটির পিঠ পেটের সাথে লেগে আছে। তিনি মালিককে বললেন, ‘তোমরা এ সব অবুঝ জীব জানোয়ারের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। ন্যায়সঙ্গতভাবে ইহাতে আরোহণ কর এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে এদেরকে খেতে দাও।’ [আবু দাউদ]
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতি আল্লাহর দয়ার বাস্তব নিদর্শন তিনি। প্রেম এবং করুণার সম্মিলন তাঁর চরিত্রে অপূর্বভাবে বিমূর্ত হয়েছে। তাঁর প্রচারিত নীতি এবং আদর্শ কালো-সাদা, আরব-অনারব, ধনী-গরিব, উচ্চ-নীচ সবাইকে এক কাতারে শামিল করেছে। কালোত্তীর্ণ এ মহামানুষ ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে মহান আল্লাহর গুণাবলির পরিপূর্ণ বিকাশ করে গেছেন। জগতের সব ভুয়া মতবাদ এবং মানবতা বৈরী সব শক্তিকে পর্যুদস্ত করে মানবতার এই মহান বন্ধু চির অমর হয়ে আছেন আমাদের মাঝে। তিনিই আমাদের একমাত্র আদর্শ। তাঁর চেয়ে বড় বন্ধু আর কোনো দিন কেউ হতে পারবে না। যারা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের ওপর ঈমান আনবে, সে প্রিয় নবীর রহমত ও করুণা গ্রহণ করবে। এ রহমত ও করুণার ফলে ওই ব্যক্তি দুনিয়া ও পরকালে সুখ শান্তি লাভ করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন