মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চাঙ্গা মুন্সিগঞ্জ বিএনপি

ফারুক হোসাইন/মো. মঞ্জুর মোর্শেদ | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী হিসেবে মনে করা হলেও নিজ জেলা মুন্সিগঞ্জেই (শ্রীনগর-সিরাজদিখান) কোন অবস্থান নেই বিকল্পধারা চেয়ারম্যান ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং তার ছেলে মাহি বি. চৌধুরীর। বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের ঘাড়ে ভর না করে এককভাবে নির্বাচন করলে প্রতিটি নির্বাচনেই তারা জামানত হারাবেন বলে মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। বৃহৎ স্বার্থে তাদেরকে নিয়ে বিএনপি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা স্বাগত জানিয়েছিল। তবে সরকারের সাথে আতাত করে এবং ছেলের পাতা ফাঁদে বিভ্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত বিকল্পধারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে না আসায় খুশীই হয়েছেন তারা। উজ্জীবিত ও চাঙ্গা ভাব বিরাজ করছে মুন্সিগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। অন্যদিকে বিকল্পধারার এই অবস্থানকে অতীত বিবেচনায় স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছেন তারা। বাবা-ছেলে ঐক্যে না থাকায় আল্লাহ ঐক্যফ্রন্টকে বাঁচিয়ে দিয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সিগঞ্জ-১ (শ্রীনগর-সিরাজদিখান) আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মীর সরাফত আলী সপু বলেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী কিংবা মাহি বি. চৌধুরী কি করলেন? কোন দিকে গেলেন এগুলো মুন্সিগঞ্জের মানুষ কিছু মনে করে না। সেখানে ব্যক্তি কোন ফ্যাক্টর না। তারা ব্যক্তি হিসেবে তেমন কোন প্রভাবও তৈরি করতে পারেননি এলাকায়। গত ১২ বছর ধরে তারা এলাকায় কোন নেতাকর্মীর সাথে যোগাযোগ রাখেন না। নিজের দলের জেলা ও উপজেলা কমিটি নাই। তিনি বলেন, যদি তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আসতো তাহলে বিএনপির ওপর ভর করেই তাদেরকে নির্বাচিত হতে হতো। কারণ ১৯৭৯’র পর থেকে ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত সব সময় বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ হলো বিএনপির ঘাটি। এখানে কাউকে বিজয়ী হতে হলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আর্দর্শের অনুসারি এবং ধানের শীষের প্রার্থী হতে হবে। এর বাইরে গিয়ে কোন সুষ্ঠু নির্বাচনেই বিজয়ী হওয়ার সুযোগ নাই। তিনি বলেন, মাহি নিজেও বাবার পরিচয়ে পরিচিত হয়েছে। তার নিজস্ব কোন কারিসমা নাই, এমন কোন উল্লেখযোগ্য কাজ করেনি যে মুন্সিগঞ্জবাসী তাকে মনে রাখবে। বিএনপি নেতারা জানান, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ডেকে এনে দলের প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব, উপ-প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই দলই তাকে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বারোপ করেছে। বানিয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অভিভাবক প্রেসিডেন্ট। তবে যে দল তাকে প্রেসিডেন্টের মতো সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে এবং তার ছেলে মাহি বি. চৌধুরীকে এমপি বানিয়েছে সেই দল থেকে বের হয়ে তিনি ছেলেকে নিয়ে গড়েছেন ভিন্ন রাজনৈতিক দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ।
সেই থেকে তাদেরকে মুন্সিগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিএনপি তাদের অতীত সে ভুল শোধরানোর একটা সুযোগ করে দিয়েছিল জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কিন্তু সরকারের সাথে আতাত করে এবং ছেলের ফাঁদে পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে এই ঐক্য থেকে বেরিয়ে যান তিনি। তার এই অবস্থান স্পষ্ট হওয়ার পর থেকেই নিজ জেলা মুন্সীগঞ্জে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বি চৌধুরীর নিজ নির্বাচনী এলাকা মুন্সীগঞ্জ -১ এ (শ্রীনগর-সিরাজদিখান) বিষয়টি নিয়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র আলোচনা চলছে। বিশেষ করে তার ছেলে বিকল্পধারা ধারার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীর বত্তব্য, কথাবার্তা, আচরণ, ব্যক্তিগত জীবন-যাপন আলোচনার মূল বিন্দুতে।
যদিও বড় বড় কথা বললেও নিজ নির্বাচনী এলাকায় তাদের কারো অবস্থান নাই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা জানান, গত ১ যুগ নিজ নির্বাচনী এলাকা শ্রীনগরের জনগণের সাথে কোন যোগাযোগ না থাকায় মাহী বি. চৌধুরীর এখানে কোন গ্রহন যোগ্যতা নেই। শ্রীনগর-সিরাজদিখানসহ মুন্সিগঞ্জেই বিকল্পধারার কোন কমিটিও নেই।
শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, মুন্সিগঞ্জ বিশেষ করে শ্রীনগর-সিরাজদিখান উপজেলায় বিকল্পধারার পিতা-পুত্রের কোন অবস্থান নেই। তারা নিজ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করলেও বিজয়ী হতে পারবেন না। এখানে মাহি বি. চৌধুরী যদি নির্বাচন করেন তাহলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
বিকল্পধারার নেতাদের নিজ এলাকাঘুরে জানা যায়, বিএনপিধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে বি. চৌধুরী পাঁচবার এমপি, মন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট এবং তার ছেলে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু দলছুট হওয়ার পর থেকেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন তারা। মুন্সিগঞ্জ বিএনপি নেতারা মনে করেন যেদিন তারা বাবা-ছেলে বিএনপি ছেড়েছেন সেদিনই তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। আর বাবার পরিচয়ে পরিচিত মাহি বি. চৌধুরী তো জনবিচ্ছিন্ন।
মুন্সিগঞ্জের কেন্দ্রীয় নেতা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, বি. চৌধুরী যেদিন বিএনপি ছেড়েছেন সেদিনই তার রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। মুন্সিগঞ্জবাসী তাকে এবং তার ছেলেকে বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তিনি আরও জানান, মুন্সিগঞ্জে তাদের কোন অবস্থান নাই। কারণ তিনি মন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় সেখানে একটি রাস্তারও কাজ করেননি, তেমন কোন উল্লেখযোগ্য জনহিতকর কাজও করেননি। তারা বাবা-ছেলে সুন্দর সুন্দর কথা বলেন কিন্তু কাজে ঠিক তার বিপরীত।
শ্রীনগরের রাজনীতিবিদরা জানান, মাহী বি চৌধুরীর সাথে এলাকার কোন সর্ম্পক নেই। এলাকায় আসেন না দীর্ঘ দিন যাবৎ। মাঝে মধ্যে আসলেও কারো সাথে যোগাযোগ হয় না। কাজেই নিজ এলাকায় নিজ দলীয় নেতা কর্মী সৃষ্টি করতে পারেননি। তার বাবা জনগণের মধ্যে বিএনপি নেতা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। পিতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাননি পুত্র মাহী বি চৌধুরী। রাজনৈতিক গুনাবলী ও তার মধ্যে নেই।
শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাখাওয়াৎ হোসেন বলেন , বি.চৌধুরী বিএনপি থেকে বের হয়ে বিকল্পধারা গঠন করলেও তার নিজ নির্বাচনী এলাকা শ্রীনগর এবং সিরাজদিখানে বিকল্পধারার কোন কমিটি এবং সাংগঠনিক কার্য়ক্রম নেই। মাহী আগামীতে নির্বাচন করলে নিশ্চিত পরাজীত হবেন এবং জামানত হারাবেন। তিনি জানান, বিকল্প ধারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে না আসায় বিএনপি নেতা কর্মীরা খুশি। তারা মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ধীরেন বলেন, মাহি বি. চৌধুরী সব সময় সুবিধাবাদী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মাহি হয়তো সরকারের সাথে আতাত করে আওয়ামী লীগ জোটে গিয়ে নির্বাচন করার কোন পরিকল্পনা করে থাকে তাহলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যে হঠাৎ করে আবির্ভূত হওয়া এই নেতাকে ছাড় দেবেন সেটা তিনি মনে করেন না। কারণ শ্রীনগর-সিরাজদিখান এলাকায় বিগত এক যুগ যাবত কোন নেতাকর্মীর সাথে তাদের যোগাযোগ নাই। এমনকি মাহি বি. চৌধুরীর নিজ দল বিকল্পধারার কোন কমিটিও নেই মুন্সিগঞ্জ জেলা জুড়ে। ফলে জাতীয় পর্যায়ে পিতা-পুত্র নিজেদেরকে অনেক বড় নেতা মনে করলেও ভোটের মাঠে তারা মাইনাস জিরো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
স্বপন ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৫৭ এএম says : 0
নামে নেতা বলেই তো বড় বড় কথা বলে।মাহী কে বলি আমি ছোট নেতা আমার এলাকায় আসেন আমাকে কত লোক ভাল বাসে।
Total Reply(0)
Tajul Islam ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ২:৪৩ এএম says : 0
sara deshe changa hote hobe
Total Reply(0)
আজিম ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ২:১৭ পিএম says : 0
কাগুজে বাঘ কে নিয়ে অনেকের এত মাতা-মাতি অতিরঞ্জিত; এত সময় নষ্ট কেন ওদের নিয়ে।
Total Reply(0)
Rafeeq Islam ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:০৩ পিএম says : 1
খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবাইকে ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Shahadat Ripon ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:০৪ পিএম says : 0
স্বাগতম। প্লান বি এর কি হবে?
Total Reply(0)
MD Azizul Hoque Chowdhury ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:০৫ পিএম says : 0
ছেড়া কাতায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্নের মত স্বপ্ন দেখেছিল এই বাপবেটা,এখন নিজ দল থেকেও বহিস্কার হলেন,নিজের ঘরে আশ্রয় হলনা।
Total Reply(0)
প্রিতম ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:০৭ পিএম says : 0
তারা বাবা-ছেলে সুন্দর সুন্দর কথা বলেন কিন্তু কাজে ঠিক তার বিপরীত।
Total Reply(0)
Md Kiron ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:৪০ পিএম says : 0
বি এন পি ছাড়ার পর ওদেরকে আমরা মুন্সীগঞ্জবাসী চিনি না। এই বাপ বেটা হলো ....। আমাদের কাছে ওদের কোন মূল্য নেই।
Total Reply(0)
Ziaul Hossain Chowdhury Rocky ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:৪০ পিএম says : 0
বিকল্প ধার এরা যখন করল, তখন থেকেই এদের নির্বাচনে জামানত হারান শুরু হয়।
Total Reply(0)
আবু তালহা ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:৪০ পিএম says : 0
কথাই আছেনা খালি কলসির আওয়াজ বড়।
Total Reply(0)
২০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:২৮ এএম says : 0
বিএনপি সঠিক সিদ্দান্ত নিয়েছে, তাদের কে না আনায় আমরা খুশি হইছি
Total Reply(0)
দেশটা আমার ২০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৪০ পিএম says : 0
আমি আমার ভোট দেয়ার অধিকার চাই- নিরাপদ রাজনীতি চাই - নিরাপদ দেশ চাই I আমরা বিক্রামপুরবাসী বাপ-বাটাকে চিনি না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন