কুমিল্লায় হঠাৎ বেড়ে গেছে ধর্ষণের ঘটনা। ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাদ যাচ্ছেনা শিশু ও বৃদ্ধারাও। স¤প্রতি শুধু ধর্ষণ নয়, ধর্ষণ শেষে বা ব্যর্থ হয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা, হত্যার প্রবণতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি রেহাই পাচ্ছেন না বাকপ্রতিবন্ধী বা পাগলও। অপসংস্কৃতি, আকাশ সংস্কৃতি, অশ্লীলতা, ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা কারণে দিনে দিনে সামাজিক অবক্ষয় আর অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি অশ্লীলতার আগ্রাসনে মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের অভাব ও সামাজিক অবক্ষয়ে ধর্ষণের ঘটনা কুমিল্লায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত ২৯৫ দিনে ২৪২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার ২৪২ জনের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে গত জানুয়ারি মাসে ২৯, ফেব্রæয়ারিতে ১৫, মার্চে ২৯, এপ্রিলে ৩১, মে মাসে ২০, জুনে ২০, জুলাইয়ে ২৩, আগস্টে ২৬, সেপ্টেম্বরে ৩২ জন ও অক্টোবরের ২২ তারিখ পর্যন্ত ১৭ জনের ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. শারমিন সুলতানা জানান, ধর্ষণের শিকার বেশির ভাগ নারীর বয়স ১৭ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। তাদের বেশির ভাগ প্রেমিকের হাতে ধর্ষিত হয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, নারী নির্যাতন রোধে দেশে অনেক আইন প্রণয়ন হয়েছে। কিন্তু, আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না। বরং দিন দিন নির্যাতনের ধরন পাল্টাচ্ছে, বাড়ছে ভয়াবহতাও। কুমিল্লার সমাজসেবক অধ্যক্ষ আমীর আলী চৌধুরী জানান, ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। ধর্ষকদের দ্রæত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে ধর্ষণ প্রবণতা কমে আসবে।
এদিকে, কুমিল্লায় আত্মহত্যার ঘটনাও বেড়েছে। মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ সূত্র আরো জানায়, গত ১০ মাসে নানা কারণে ৩৩২ জন আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে ফাঁসিতে ১৩৮ ও বিষপানে ১৯৪ জন মারা গেছে। জানুয়ারিতে ৬১, ফেব্রæয়ারিতে ৬৩, মার্চে ৬৬, এপ্রিলে ৬৪, মে মাসে ৭৯, জুনে ৭০, জুলাইয়ে ৭২, আগস্টে ৭২, সেপ্টেম্বরে ৬২ জন ও অক্টোবরের ২২ তারিখ পর্যন্ত ৪৯ জন আত্মহননকারীর ময়নাতদন্ত করা হয়। একই সময়ে কুমিল্লায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে ৩৭ জন, যাদের মধ্যে ২৫ জন মাদক কারবারে জড়িত বলে অভিযোগ ছিল। তা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা, রেল দুর্ঘটনায় ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় মারা গেছে ২৪৮ জন। সব মিলিয়ে জেলায় গত ১০ মাসে ৬৫৮ জন নিহত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফরেনসিক বিভাগ।
আত্মহত্যার নেপথ্য কারণের মধ্যে রয়েছে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, যৌতুকের জন্য নির্যাতনসহ নানা ঘটনা। এসব কারণের সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিশেষ মুহূর্তের গোপন ছবি ইন্টারনেটে প্রকাশ করা নারীর আত্মহননের নতুন কারণ হিসেবে সামনে চলে আসছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন