মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে যুগোপযোগী এবং উন্নয়ন করে মাদরাসা শিক্ষার অস্তিত্ব রক্ষায় ১৩ দফা দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কুমিল্লা শাখার নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ৯১ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এই বাংলাদেশে কুরআন-সুন্নাহ ও মুসলিম ঐতিহ্য-কৃষ্টি লালিত সংস্কৃতির সাথে সমন্বয় করে একটি যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রণয়ন করা হবে এটা দেশের আলেম ওলামাদের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ঘঈঞই ঘোষণা দিয়েছে ২০২৩ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই স্কুল ও মাদরাসায় বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে। অথচ এসব পাঠ্য বই মাদরাসা শিক্ষার জাতীয় লক্ষ্য,উদ্দেশ্য ও স্বতন্ত্র বৈষম্য উপেক্ষা করে রচিত হয়েছে।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) সকাল দশটায় কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কেন্দ্রিয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত মানববন্ধনে সংগঠনটির কুমিল্লার নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। মানববন্ধন শেষে নেতৃবৃন্দ কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির নয়টি বইয়ে মধ্যে কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবায়েকেরাম, আহলে বাইত, মুসলিম মনীষী, বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিকদের বাণী-উদ্ধৃতি, নীতি নৈতিকতা সৃষ্টিকারি কোন বিষয় স্থান পায়নি। বরং ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন সব লেখা ও ছবি আপত্তিজনকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। যা মাদরাসা শিক্ষার অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান সরকার মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে আন্তরিক। কিন্তু সরকারের ভেতর বা এসব পাঠ্যবই রচনায় কোন একটি পক্ষ মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর অবদানকে ম্লান করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এই অশুভ পক্ষটি সরকারের সঙ্গে আলেম,ওলামা, পীর মাশায়েখদের দুরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১৩ দফা দাবী উত্থাপন করেন। এসব দাবীর মধ্যে রয়েছে- মাদরাসা শিক্ষার স্বকিয়তা রক্ষায় সরকারের প্রণীত ও জাতীয় সংসদে গৃহীত জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ অনুযায়ী স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম,পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যবই তৈরি করতে হবে।দাবিকৃত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই প্রণয়নের পূর্ব পর্যন্ত প্রচলিত পাঠ্যপুস্তক অনুযায়ী পাঠদান অব্যাহত রাখতে হবে।মাদরাসা শিক্ষার দাখিল পরীক্ষার জন্য মূল বিষয় ঠিক রেখে সমন্বয় সাধন করে ১০০০ নম্বর নির্ধারণ করতে হবে।বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষক-কর্মচারিদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে।সংযুক্ত ইবতেদায়ি প্রধানসহ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ভাতা প্রদান করতে হবে।২০১৮ সালে প্রণীত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে।মহিলা কোটা শিথিল ও সংশোধন করে যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।আরবি প্রভাষকদের উচ্চতর পদে আসীন হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।অধ্যক্ষ-উপাধ্যাক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরবি প্রভাষকদের জন্য পথ উন্মুক্ত করতে হবে।কামিল পাস সহকারী মৌলভিদের উচ্চতর স্কেলের ব্যবস্থা করতে হবে।মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্থাপন করতে হবে।মাদরাসার অনার্স স্তরের শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে হবে।দুই হাজার শিক্ষকের বকেয়াসহ ইনক্রিমেন্ট প্রদান করতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কুমিল্লা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আবদুল মতিন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সফিকুল আমিন পাটোয়ারি, সহসভাপতি মাওলানা আবুল হোসাইন, সাংগঠনিক দম্পাদক মাওলানা আনম মোখলেছুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন- মাওলানা আনম তাজুল ইসলাম, মাওলানা একেএম শামসুদ্দিন মাওলানা মো. জাকির হোসেন, মাওলানা মো. নজরুল ইসলাম, মাওলানা মো. আবদুল কুদ্দুস, মওলানা মো. সফিকুর রহমান, মাওলানা মো. আবদুল হান্নান, মাওলানা মো. তাজুল ইসলাম, মাওলানামো. আমিনুল ইসলাম, মাওলানা মো. ইউনুস ওয়াজেদী, মাওলানা এবিএম এনামুল কবীর, মাওলানা মো. মফিজুল ইসলাম, মাওলানা মো. জিন্নত আলী, মাওলানা আরিফুর রহমান,মাওলানা হুজ্জাতুল ইসলাম, মাওলানা শরীফ মো. বেলাল হোসেন ও মাওলানা আবদুল মুবিন আখন্দসহ মহানগর এবং বিভিন্ন উপজেলার জমিয়াত নেতৃবৃন্দ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন