শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

প ড়া র টে বি ল

প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

প্রবীণ সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক মোহাম্মদ জুলফিকার অতি যতœ, ধৈর্য্য ও নিষ্ঠার সাথে এ মূল্যবান গ্রন্থটি রচনা করেছেন বলে তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ বাংলা সাহিত্যের একজন খ্যাতনামা লেখক। একসময় তাঁর রচিত জনপ্রিয় ‘আনোয়ারা’ উপন্যাস (১৯১৪ সালে প্রকাশিত) অবিভক্ত বাংলার শিক্ষিত মহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত এ গ্রন্থটির প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ কপি মুদ্রিত হয়েছে। এ থেকে এর জনপ্রিয়তার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ গ্রন্থের জনপ্রিয়তা কিংবদন্তীতুল্য। জনপ্রিয়তার দিক থেকে বাংলা সাহিত্যে মীর মশাররফ হোসেন রচিত ‘বিষাদসিন্ধু’র পরেই ‘আনোয়ারা’র স্থান। দুর্ভাগ্যবশত একসময়ে বিপুল জনপ্রিয়তার অধিকারী অমর কথাশিল্পী নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ বর্তমানে অবহেলিত ও বিস্মৃতপ্রায়। তিনি মোট তেরটি গ্রন্থ রচনা করেন। দেশের কৃতি সন্তানদের অবদানে জাতি উপকৃত ও ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ হয়। তাঁদের স্মরণ ও যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নির্মাণে অনুপ্রেরণা লাভ করে। কিন্তু বর্তমানে সর্বক্ষেত্রে যেন আমরা আমাদের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি বিস্মৃত হয়ে পরানুকরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এটা এক ধরনের আত্মগ্ল­ানি ও আত্মবিস্মৃতির নামান্তর। মোহাম্মদ জুলফিকার এ গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে আমাদেরকে এ হীনন্মন্যতা বোধ থেকে অনেকটাই নি®কৃতি দিয়েছেন।  
প্রথিতযশা লেখক হওয়া সত্ত্বেও নজিবর রহমানের যথার্থ মূল্যায়নে ইতিহাসবিদেরা নিদারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ জীবনী এখনো লেখা হয়নি। ১৯৫৮ সালে সর্বপ্রথম আমি তাঁর জন্মভূমি চর বেলতৈলের প্রবীণ ব্যক্তিদের নিকট থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করি। আমার সংগৃহীত তথ্যাদি নিয়ে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ডক্টর গোলাম সাকলায়েন ঐ সময় বাংলা একাডেমী পত্রিকায় নজিবর রহমান সম্পর্কে গবেষণামূলক মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। আমার সংগৃহিত তথ্যের ভিত্তিতে ঐ সময় আমার রচিত প্রবন্ধও দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় (২২ চৈত্র ১৩৬৫)। পরবর্তীতে আরো অনেকে এক্ষেত্রে মূল্যবান অবদান রেখেছেন। আমি নিজেও অল্পবিস্তর কাজ করেছি।
ইতিহাস রচনার কাজ সহজসাধ্য নয়। আমাদের দেশে সত্যভিত্তিক যথার্থ ইতিহাস রচনার পরিবেশ ও পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধারও নিদারুণ অভাব রয়েছে। মোহাম্মদ জুলফিকার সাধ্যমত তার পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, কোন কোন ক্ষেত্রে তাঁদের গবেষণার ত্রƒটি-বিচ্যুতি উল্লেখপূর্বক নতুন তথ্যাদি সরবরাহে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। তার এ শ্রমসাধ্য কাজ যথেষ্ট প্রশংসাযোগ্য তবে পূর্ণাঙ্গ ও ত্রুটিমুক্ত নয়। তার গ্রন্থে মাঝে মাঝে অন্যদের লেখার উদ্ধৃতি কিছুটা দীর্ঘাকারে এবং ঘন ঘন সন্নিবেশিত হওয়ায় কিছুটা দৃষ্টিকটু হয়েছে। তা সত্ত্বেও তার প্রচেষ্টা, অধ্যবসায় ও আগ্রহ অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তার এ অবদানকে আমি বিশেষ স্মরণীয় ও মূল্যবান বলে উল্লেখ করার পক্ষপাতি। গ্রন্থ রচনার বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি সুদূর রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসে বার বার আমার নিকট থেকে যেসব পরামর্শ-উপদেশ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন, গ্রন্থটির  যথাস্থানে তা উল্লেখ করায় আমি তার নিকট বিশেষ কৃতজ্ঞ।
বিস্মৃত প্রায় বাংলা সাহিত্যের এক অমর কথাশিল্পীর জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে রচিত এ গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের এক বিরাট শূন্যতা বহুলাংশে পূরণ করায় আমি আশ্বস্তবোধ করছি। গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করি।
মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ ঃ জীবন ও সাহিত্যকর্ম। লেখক ঃ মোহাম্মদ জুলফিকার, প্রকাশক ঃ জ্যোতিপ্রকাশ, প্রকাশকাল ঃ বইমেলা ২০১৬, প্রচ্ছদ ঃ মোবারক হোসেন, পৃষ্ঠা ঃ ২৮৬, মূল্য ঃ ৫০০/- টাকা মাত্র।
স অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন