বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

বিনোদন প্রতিদিন

ধ্রুবতারার মতোই উজ্জ্বল হয়ে থাকতে চান ধ্রুব গুহ

প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : গাইতে গাইতে গায়েন হওয়ার কথা আমরা জানি। তবে গান শুনতে শুনতে পেশাদার গায়ক হওয়া এবং শ্রোতাপ্রিয়তা অর্জন করার ঘটনা খুব কমই ঘটে। তার উপর গানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া। তাই বলে যে গায়ক হওয়া যাবে না, এমন কোনো কথা নেই। জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফেরও সঙ্গীতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। অথচ প্রকৃতি যে তাকে জন্মলগ্ন থেকেই কণ্ঠে সুর দিয়ে রেখেছিলেন, তার কণ্ঠমাধুর্যে লাখ লাখ শ্রোতার মোহিত হওয়ার কথা তো এখন সবার জানা। এ সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে, প্রকৃতি আরেকজন শিল্পীকেও একইভাবে সৃষ্টি করেছে। যিনি গান শুনতে শুনতে এবং আপন মনে গাইতে গাইতে গায়েন হয়েছেন। এই শিল্পীই এখন সঙ্গীতাঙ্গণে ধ্রুব নক্ষত্রের মতো জ্বল জ্বল করছেন। তিনি ধ্রুব গুহ। উল্লেখ করা প্রয়োজন, এ সময়ের সঙ্গীতাঙ্গণে প্রায় নিয়মিতই শিল্পীর আর্বিভাব ঘটছে। তারা অগণিত গান গাইছে। তাদের বেশিরভাগেরই গান শ্রোতাদের কানে ঠিকমতো পৌঁছার আগেই হারিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো শিল্পী উল্কার মতো জ্বলে উঠে ছাই হয়ে ঝরেও পড়ছেন। শুরুতেও ধ্রুব গুহর আগমণকে অনেকে এমনই ভেবেছিলেন। তবে ধ্রুব যে উল্কা হয়ে জ্বলে উঠে ছাই হয়ে ঝরে পড়ার মতো শিল্পী নন, বরং ধ্রুব তারার মতোই উজ্জ্বল হয়ে আজীবন জ্বলবেন, তা তার গানের কথা ও ইন্দ্রজলের মতো আবেশিত কণ্ঠমাধুর্য থেকেই বোঝা যায়। সঙ্গীত জগতে তার আবির্ভাব খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র আড়াই বছর। প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালের শুরুর দিকে। সিডি চয়েস থেকে প্রকাশিত অ্যালবামটির নাম ‘শুধু তোমার জন্য’। আমাদের দেশে প্রথম অ্যালবাম দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করার অনেক নজির রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাতে পেরেছেন, দেখা গেছে তারাই শ্রোতাদের মধ্যে স্থায়ী আসন করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। ধ্রুবর ক্ষেত্রেও যেন এই ধ্রুব সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম অ্যালবামের টাইটেল গান ‘শুধু তোমার জন্য’ গানটি দিয়ে অনেকটা বাজিমাত করেছেন। গানটির অডিও এবং ভিডিও শ্রোতা-দর্শকের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। এর অর্থবোধক কথা এবং অসাধারণ সুর-সঙ্গীত ধ্রুবকে ধ্রুব তারার মতোই উজ্জ্বল করে রেখেছে। ইউটিউবে গানটির ভিডিও দেখা ও শোনার সংখ্যা এখন ৩৩ লাখেরও বেশি। এ ধরনের ঘটনা এ সময়ে আর কোনো সঙ্গীতশিল্পীর ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা যায়নি। তার অর্থ হচ্ছে, ধ্রুবকে শ্রোতা-দর্শক অকুণ্ঠচিত্তে গ্রহণ করেছেন। অবশ্য ধ্রুব অত্যন্ত বাস্তববাদীর মতো আবেগে ভেসে যাননি। ‘ইউটিউবে ভিউয়ার্স সংখ্যা দিয়ে আমি আমার গানের বিচার করি না। তৃপ্তিও পাই না। আমি মনে করি, আমার গান যতক্ষণ না পর্যন্ত একজন রিকশাওয়ালা পর্যন্ত না পৌঁছছে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বার্থক মনে করছি না।’ এমন কথাই বললেন ধ্রুব। আবার এ কথাও বললেন, ‘গানের কথা যদি মানুষের অন্তরে না লাগে এবং স্থায়ী না হয়, চিরসবুজ গানে পরিণত না হয়, তবে এমন গানের মূল্য কি!’ আসলেই তো তাই! যে গান যুগ যুগ ধরে মানুষের অন্তরে লালিত না হয়, এমন গানের কোনো মূল্য থাকে না। এখনও আমরা চিরসবুজ হয়ে থাকা কোনো গান শুনলে নস্টালজিক ও আবেগাপ্লুত হয়ে উঠি। গুণগুণ করে গেয়েও উঠি। এ সময়ে এসে যেসব গান হচ্ছে, সেগুলো সাময়িক মনে দোলা দিলেও মনে আঁচড় কাটে খুবই কম। হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো সাময়িক মিষ্টির স্বাদ দিয়ে মিলিয়ে যায়। ধ্রুব গুহ এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই শুদ্ধ সঙ্গীতের দিকে মনোযোগী হয়েছেন। কথার বাণী এবং তার অর্থবোধক হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করেছেন। গতানুগতিক ধারায় নিজেকে ভাসিয়ে দিতে চান না। উল্কার মতো সাময়িক ঔজ্জ্বল্য ছড়াতে চান না। চান না বলেই গানের শেকড়কে আঁকড়ে ধরেছেন। শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চার দিকে ঝুঁকেছেন। যে গানের কথা ও সুর তার শুদ্ধ সঙ্গীতের সাথে মেলে না, তা সযতনে এড়িয়ে যান। ধার করা সুর ও সঙ্গীতের ধারেকাছেও ঘেঁষেণ না। তার কথা হচ্ছে, যে সংস্কৃতি আমাদের নয় এবং তার সাথে খাপ খায় না, সে সঙ্গীত করার কোনো অর্থ হয় না। আমাদের সংস্কৃতির যে মৌল বিষয় রয়েছে, তার চর্চাই করতে চাই। যত দিন গাইতে পারব, এ থেকে বিচ্যুত হবো না। ধ্রুবর কণ্ঠ কোনো মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টের মতো নয়। যারা ইতোমধ্যে তার গান শুনেছেন, তারা বুঝতে পেরেছেন তার কণ্ঠে নিখাদ সুর রয়েছে। আধুনিক-ক্লাসিক্যালের সংমিশ্রণে একেবারে আলাদা কণ্ঠ তার। এর ফলে সব ধরনের শ্রোতাদের কাছে, তার গাওয়া অল্প কিছু গানই অনেক দিনের খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধ্রুব ইচ্ছে করলে তার স্বল্পদৈর্ঘ্যরে ক্যারিয়ারে একের পর এক অ্যালবাম প্রকাশ করতে পারতেন। তিনি তা করেননি। প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের প্রায় দেড় বছরের মাথায় দ্বিতীয় অ্যালবাম প্রকাশ করেন। ‘যে পাখি ঘর বোঝে না’ অ্যালবামটি প্রকাশিত হয় গত বছরের জুলাই মাসে। বলা বাহুল্য, এই অ্যালবামটির গানগুলোও বেশ শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। এরই মাঝে সিনেমার প্লেব্যাকেও জড়িয়েছেন। জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ন্যানসির সাথে গেইমস রিটার্ন নামে নির্মাণাধীন একটি সিনেমায় গেয়েছেন। আরও অফার আসছে। তবে ধ্রুব তাড়াহুড়ো করতে রাজি নন। দেখে শুনে বুঝে এগুতে চান। এই দেখে বুঝে এগুনোর পথেই তৃতীয় অ্যালবামের কাজ শুরু করেছেন। অ্যালবামের নাম এখনও ঠিক করেননি। ৬টি গানের রেকর্ডিং সম্পন্ন করেছেন। আশা আছে, ঈদে রিলিজ দেবেন। সঙ্গীতবোদ্ধা ও সমঝদার শ্রোতারা আশা করতেই পারেন, ধ্রুব তার গান দিয়ে তাদের মাঝে ধ্রুব তারা হয়েই থাকবেন। সুরের মধ্যেই বসবাস করবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন