শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সোহরাওয়ার্দীতে লাখো মানুষের ঢল

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

পথে পথে পুলিশের তল্লাশি, গাড়ির সল্পতা, রাতভর বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় তল্লাশি, গ্রেফতার কোন কিছুই বাঁধা হতে পারেন সোহরাওয়ার্দীর ঐতিহাসিক জনসভার। সকল বাঁধা উপেক্ষা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর রাজধানীতে গতকালই ছিল প্রথম জনসভা। গত ৫ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম সরকারের পক্ষ থেকে সভা-সমাবেশে বাঁধা না দেয়ার আশ্বাস ছিল প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এই জনসভা ঘিরে ছিল বাড়তি উৎসাহ। তার প্রমাণও পাওয়া যায় জনসভাস্থল সোহরাওয়ার্দীতে। ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা অনুযায়ি দুপুর ২টায় জনসভা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকাল ১০টায় সোহারওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায় জনসভা মঞ্চের আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। সিরাজগঞ্জ থেকে আসা বিএনপির সমর্থক মানিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকালেই সিরাগঞ্জের নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসেছেন, সোহরাওয়ার্দীতে তারা নাস্তা করেছেন, থাকবেন সমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। একইভাবে রাজধানীর পাশে জেলা টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা। বেলা ১১টার দিকেই মঞ্চের আশপাশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ভরে যায়। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা আগেই জনসভার শুরু করে দেন ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা। শুরুতে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশ করেন সঙ্গীত শিল্পী মনির খান। মনির খানের দেশাত্মবোধক ও দলীয় সঙ্গীতে মেতে উঠে সোহরাওয়ার্দীতে আসা নেতাকর্মীরা। এছাড়াও আরেক জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী বেবী নাজনীনও মাতিয়ে তুলেন। তাদের সঙ্গিত পরিবেশনের পর থেকেই শুরু হয় বক্তৃতার পালা। দুপুর ১২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। হাতে হাতে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড নিয়ে তারা সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হন। স্লোগান দিতে থাকেন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে। আমার নেত্রী আমার মা বন্দি থাকতে দেবো না, জেলের তালা ভাঙবো খালেদা জিয়াকে আনবো, জেলে নিলে আমায় নে আমার মাকে ছেড়ে দে, খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন হবে না হতে দেয়া হবে না। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলে সাড়ে ১২টার দিকেই নেতাকর্মীরা উদ্যানের প্রবেশ পথ মৎসভবন-শাহবাগ সড়কে অবস্থান নেন। তখনো দলে দলে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষে পরিপূর্ণ থাকায় উদ্যানে যেতে ব্যর্থ হন তারা। ফলে সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই একদিকে মৎসভবন, সেগুনবাগিচা, অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, শিশুপার্ক সড়ক হয়ে ওঠে জনসমুদ্র। সমাবেশস্থলের সমসংখ্যক মানুষ উদ্যান এবং সড়কে জায়গা না পেয়ে অবস্থান নেয় রমনা পার্কের ভেতরে। দুপুর ২টায় যখন সমাবেশ শুরু হয় তখন রমনা পার্ক, মৎসভবন, সেগুনবাগিচা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, শিশু পার্ক, শাহবাগ, বিজয়নগর, প্রেসক্লাব এলাকা হয়ে ওঠে লাখ লাখ মানুষের ঐতিহাসিক জনসভা। জনসভায় উপস্থিত রাজধানীর কোতয়ালী থানার বিএনপি নেতা কামাল হোসেন বলেন, নিকট অতীতে অনেক জনসভায় অংশ নিয়েছি এবং সরকারি দলের অনেক জনসভা দেখেছি কিন্তু এতো মানুষের উপস্থিতি কোন জনসভায় চোখে পড়েনি। মানুষের উপস্থিতিই প্রমাণ করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন সম্ভব হবে না।
যদিও সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা ঘিরে রাজধানী জুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা। ছিল অঘোষিত বিধি-নিষেধও। জনসভায় যাতে লোকসমাগম না হয় সেজন্য আগেরদিন রাতেই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে তল্লাশির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনসভার দিন গতকাল ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বসানো হয় পুলিশের তল্লাশি চৌকি। গাবতলি এবং টঙ্গি থেকে ঢাকা অভিমুখে যান প্রবেশে বাধা, বুড়িগঙ্গা নদীতে বন্ধ করে দেয়া হয় নৌকা চলাচল। একাধিক স্থানে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এত কিছুর পরও ঢাকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম জনসভায় লোকসমাগমের কমতি ছিলনা। বাধা উপেক্ষা করেও জনসভায় নেমেছিল লাখো মানুষের ঢল। ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলো থেকেও অসংখ্য মানুষ সভায় যোগ দেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। নেতাকর্মীরা উদ্যানের বাইরে আশপাশে অবস্থান নেন।
জনসভায় যোগ দেয়া নেতাকর্মীরা জানান, জনসভায় আসতে তাদের বাধা দেয়া হয়েছে। রাস্তায় পরিবহন প্রায় বন্ধ করা হয়েছে। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে আসা নেতাকর্মীদের ঢাকার প্রবেশ পথে তল্লাশি করা হয়। অনেক মিছিলে বাঁধা দিয়ে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর ছাড়াও ঢাকার আশেপাশের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল জেলার অসংখ্য নেতাকর্মী গতকালের জনসভায় অংশগ্রহণ করেন। শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমানের নেতৃত্বে তিন শতাধিক নেতাকর্মী গতকালের জনসভায় অংশগ্রহণ করে। রোমান বলেন, আজকে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াক মিথ্যা মামলায় প্রায় নয় মাস ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে। তার মুক্তির দাবিতে এবং তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে জনসভায় অংশ না নিলে কেমন যেন লাগে। নেত্রী ছাড়া সবকিছু শুন্য মনে হয়। আগামীতে যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে শিবচর উপজেলা বিএনপি রাজপথে থাকবে। সরকারের পতন খুব দ্রুততম সময়ে হবে বলে তিনি মনে করেন। দিনাজপুর জেলা যুবদলের সহসভাপতি মো: মেহেদী হাসান সুমন বলেন, আমরা আবারো ৫ জানুয়ারি মার্কা কোনো নির্বাচন দেখতে চাইনা। দলের হাইকমান্ড যে কর্মসূচী দিবেন আমরা তা সর্বাত্মকভাবে সফল করবো ইনশাল্লাহ। ঢাকা-১৭ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কামাল জামান মোল্লা পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে জনসভায় যোগ দেন। পাবনা-১ আসনের ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী ও সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য খায়রুন নাহার খানম মিরু শতাধিক লোক নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার বিএনপি নেতা ও এমপি প্রার্থী মাহমুদুর রহমান সুমনের নেতৃত্বে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী এই জনসভায় যোগ দেন। তিনি জানান, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দলের নেতাকর্মী নিয়ে তিনি জনসভায় যোগ দিয়েছেন। যতদিন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হবে তিনি আড়াইহাজার বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে দলের সকল কর্মসূচি সফল করতে সর্বাত্মক অংশগ্রহণ করবেন। সভায় অন্যদের মধ্যে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, লুৎফর রহমান, ড. মোর্শেদ হাসান খান, ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান সহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Aunoy Ahmed ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৪:৩৪ এএম says : 0
এসব দিয়ে এই দেশে কখন কোন দাবি আদায় হয়নি । তাই দরকার কঠিন আন্দোলন
Total Reply(0)
Shamim Hossain ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৪:৩৮ এএম says : 0
জনগনের ক্ষমতা জনগন আন্দোলনের মাধ্যমে বারবার ফিরিয়ে এনেছে,এবারও আনবে।
Total Reply(0)
Raju Habib ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৪:৪৫ এএম says : 0
আন্দোলনই হতে পারে জাতির একমাএ মুক্তির পথ। জাতি আর অবৈধ ,,,,,,,,,,,,,,,কে চায় না।
Total Reply(0)
বিপ্লব ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৪:৫০ এএম says : 0
তল্লাশী, বাধা ও গ্রেফতারের আতঙ্ক না থাকলে এর কয়েকগুন মানুষ হতো
Total Reply(0)
তপন ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৪:৫০ এএম says : 0
এখন আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই
Total Reply(0)
Nannu chowhan ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:২২ এএম says : 0
Tollashi mamla greptar eto kisu korar poro sarwarddi uddan til dhorar thai hoy nai tarporo ki eai aowami shorkarer tonok norena je,hamla mamla kore jongonner moter bishshashke domano jaina....
Total Reply(0)
Saiful Islam ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫৮ পিএম says : 0
স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাবেশ। যদি আমাদের নেত্রী থাকত তাহলে এই সমাবেশ ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকত।
Total Reply(0)
Kazi Md Anwarul Haque ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫৯ পিএম says : 0
রাজধানির প্রবেশ পথ সরকার নিয়ন্ত্রন না করলে কিধরনের জন সমাবেশ হত কল্পনা করা যায় ?
Total Reply(0)
রবিন মিয়া ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫৯ পিএম says : 0
মানুষ যখন ধর্য্যের সীমা অতিত্রম করে তখন আর ঘরে থাকে না।
Total Reply(0)
Abdul Momin ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ২:০০ পিএম says : 0
চোখে পড়ার মত লোক
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন