শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার আওয়াজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১১:৩০ এএম, ৭ নভেম্বর, ২০১৮

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপের আগের দিন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে লাখো জনতার বুলুন্দ আওয়াজ ‘শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে’। জনতার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বক্তারাও একই দাবি করে বলেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ৭ দফা দাবি মানতেই হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। ইসি যদি আজ্ঞাবহ হয়ে পাতানো নির্বাচনের অপচেষ্টা করে তাদেরও প্রতিহত করা হবে। গণভবনে ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সংলাপে দাবি না মানলে ৮ নভেম্বর রাজশাহী অভিমুখে রোডমার্চ ও পরের দিন জনসভা করা হবে। পরবর্তিতে বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহেও সভা করা হবে। পাড়ায় মহল্লায় ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ালে আন্দোলনেই অবৈধ সরকারের পতন অনিবার্য। ‘আইন-আদালতের বদলে এক ব্যাক্তির ইচ্ছায় দেশ চলছে’ অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, দেশে কোনো রাজতন্ত্র নেই, দেশ কোনো মহারাজা-মহারানির নয়, ১৬ কোটি মানুষ রাষ্ট্রের মালিক। অথচ আইন সবার জন্য সময় প্রয়োগ হচ্ছে না। বাংলাদেশের ইতিহাস হলো জনগণ কোনো বাঁধা মানে না। অতএব ৭ দফা মানতেই হবে; নইলে অবৈধ সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে। নির্বাচনের নামে প্রতারণা করে ক্ষমতায় আসার অপরাধে সরকারের নীতি নির্ধারকদের বিচার হবে। ‘সরকারের কথার এক পয়সাও দাম নেই’ মন্তব্য করে বক্তারা আরো বলেন, সমঝোতা, সংলাপ এবং শান্তির নামে কোনো নাটক চলবে না।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই মহাসমাবেশের আয়োজন করে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ফ্রন্টের প্রধান নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ছাড়াও সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিএনপি, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, ঐক্য প্রক্রিয়া, গণফোরাম ও ২০ দলীয় জোটের অর্ধশতাধিক নেতা ।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমাবেশের আয়োজন করলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ কার্যত: গণসমাবেশে পরিণত হয়। বক্তারা অভিযোগ করেন আগের রাতে বহু নেতার বাসায় পুলিশ তল্লাসী ও ব্যপক ধরপাকড় হয়। সমাবেশে মানুষের ঢল ঠেকাতে রাজধানী ঢাকা প্রবেশ পথ আবদুল্লাপুর, গাবতলী, চিটাগাং রোড, বুড়িগংগা সেতুতে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়। তল্লাসী করে সমাবেশে আসা যাত্রীদের নামিয়ে দেয়ার ঘটনা বলেও অভিযোগ করেন একাধিক বক্তা। তারপরও রাজধানীর সব পথ যেন মিশে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে। ঐতিহাসিক উদ্যানে তিল ধরণের ঠাঁই ছিল না। আগত জনতার মধ্যে দেখা গেছে উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা। আশপাশের মৎস ভবন, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, রমনা উদ্যান, টিএসসিতে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে মানুষ। এ যেন অন্যরকম দৃশ্য। মানুষ আর মানুষ। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই মানুষ। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে মানুষ ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বক্তৃতা শোনেন। মাঝে মাঝে উৎফুল্য জনতা নানা শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে তোলেন সমাবেশ স্থল। বেগম জিয়ার মুক্তি, ৭ দফা দাবি মেনে নেয়ার দাবি, গণগ্রেফতার বন্ধসহ নানা ধরণের শ্লোগান দেয়া হয়। ‘আমার মা জেলে কেন অবৈধ সরকার জবাব দাও’ শ্লোগানও দেয়া হয়। এমনকি বক্তারাও ‘বেগম জিয়ার মুক্তি চাই’ শ্লোগান দেন। সমাবেশ উপলক্ষ্যে মূলত: সকাল ১০টা থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে উদ্যানে আসতে শুরু করে মানুষ। দুপুরের পর উদ্যানের চারদিক থেকে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো নানা বয়সের মানুষ প্রবেশ করতে থাকে। প্রচুর মহিলাও সমাবেশে হাজির হন। পোষ্টার, ব্যানার, শহীদ জিয়া, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত গেঞ্জি, ক্যাপ পরেও হাজার হাজার মানুষ হাজির হন। সমাবেশ উপলক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নানা স্পটে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বহু সদস্যকে দাঁড়িয়ে থেকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের অনেককেই দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মনোযোগ সহকারে বক্তৃতা শুনতে দেখা যায়। তবে মাঠের বাইরে মাইক না থাকায় হাজার হাজার মানুষ বক্তাদের বক্তৃতা শোনা থেকে বঞ্ছিত হয়।
‘বর্তমান সরকার অনির্বাচিত এবং দেশে কোনো আইন ঠিক ভাবে চলছে না’ অভিযোগ করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, এদেশ কোন মহারাজা, মহারানীর নয়, এদেশের মালিক জনগণ। দেশে যা হচ্ছে তা মেনে নেয়া যায় না। যাকে তাকে যেভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকে বন্দি রেখে দেশে গণতন্ত্র থাকে না। বেগম জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি দিতে হবে। আইন সবার জন্য সমান। সরকারি দলের জন্য এক আর বিরোধী দলের জন্য অন্য আইন হতে পারে না। স্বাধীন বাংলাদেশে এটা চলতে পারে না। অনির্বাচিত সরকার এটা করতে পারে না। কাউকে বেআইনীভাবে গ্রেফতার করা অপরাধ। তারা সেই অপরাধ করছে। এই অপরাধের জন্য তাদের বিচার করা হবে। বাংলাদেশের এই সংবিধান প্রণেতা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তারা বলেছিল এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। আদালতে বলেছিল শিগগির আরেকটি নির্বাচন দেয়া হবে। একে একে পাঁচ বছর চলে গেল। তারা ক্ষমতায় থেকে জুলুম-নির্যাতন এবং লুটপাট করছেই। সরকারের কথার এক পয়সার দাম নেই। সমাবেশে আসতে নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাস্তা বন্ধ করে, বাস বন্ধ করে জনগণকে নিষ্ক্রিয় করা যাবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, ঐক্যবদ্ধ থাকবো। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। স্বাধীনতা মানে জনগণ ক্ষমতার মালিক। ক্ষমতার মালিক জনগণ যখন মহল্লায় মহল্লায় দাঁড়িয়ে যাবে তখন সরকার পালানোর পথ পাবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে পথে নামলে বিজয় অনিবার্য।
‘সংলাপ সফল না হলে লংমার্চ, জনসভা, পদযাত্রার মতো কর্মসূচি দেয়া হবে’ হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার সংলাপের নামে প্রহসন, প্রতারণা করছে। এই তথাকথিত প্রহসনের সংলাপে বলা হলো গ্রেফতার করা হবে না, মামলা তুলে নেয়া হবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। প্রতিদিন গ্রেফতার হচ্ছে এবং তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আর খবর পাওয়া যায় না। গণভবনে একটি ছোট সংলাপ আছে। আমরা যেতে রাজী হয়েছি, কারণ আমরা সংলাপে বিশ্বাস করি, শান্তিতে বিশ্বাস করি, সমঝোতায় বিশ্বাস করি। আমরা চাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই জনগণের সমস্যার সমাধান হোক, জনগণ মুক্তি পাক। কিন্তু এটা নিয়ে নাটক করলে চলবে না। আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে, নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। আমরা আশা করবো সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে এই দাবিগুলো মেনে নেবেন। সর্বপ্রথম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তারপরই বাকী সব হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে যে মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে তার সবগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। ব্যারিস্টার মঈনুলসহ সকল রাজনৈতিক বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। এই সরকার যদি সংলাপে দাবি মেনে না নেয় তাহলে ফ্রন্ট ৮ নভেম্বর রোড মার্চ করে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। ৯ নভেম্বর রাজশাহীতে জনসভা করবে। এরপর খুলনা, ময়মনসিংহ, বরিশালে জনসভা হবে। নির্বাচন কমিশন তফসিল না পেছালে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা হবে। জাতীয় ঐক্য গঠিত হওয়ায় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে ঐক্যফ্রন্টের এই মুখপাত্র বলেন, কারাগারে যাওয়ার আগে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন আমি কারাগারে যেতে ভয় পায় না, তোমরা গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে, জাতীয় নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানাবে ঐক্যবদ্ধ হবে। আজকে পরম করুনাময় আল্লাহ তাআলার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আজকে দেশের বরেণ্য জাতীয় নেতৃবৃন্দ একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাচ্ছেন, দেশের জনগণের মুক্তি চাচ্ছেন। আমাদের উপর অনেক অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন করেছে। আমাদের ভাই, বন্ধুদের হত্যা, গুম, খুন, গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনো চলছেই। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে ৪ হাজার ৩৭১টি মামলা হয়েছে, আসামী করা হয়েছে ২৫ লাখ নেতাকর্মীকে। সাইবার কর্মীদের তুলে নেয়া হয়েছে আর খোঁজ পাওয়া যায় না। এভাবে সারাদেশ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিন্তু খোঁজ পাওয়া যায় না। আমরা আর গ্রেফতার হতে চাই না, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করতে চাই, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, সাত দফা সফল করতে চাই।
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, সরকারকে বলবো এই সমাবেশের লাখো জনতার স্লোগান শুনুন। সবাই খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। দেশের গণতন্ত্রের মুক্তি চায়। আমাদের আজকের এ লড়াই গণতন্ত্র মুক্তির লড়াই। এ লড়াইয়ে জিততে হবে। দেশের জনগণ জেগেছে। আমাদের ৭ দফা দাবি মেনে নিন। এ দাবি দেশের ১৬ কোটি মানুষের। এ দাবি না মানলে খবর আছে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না। আমি মুক্তি চাই শেখ হাসিনার। তার কখন মুক্তি হবে? সে জনগণের সাথে যা করেছে তার থেকে কীভাবে মুক্তি পাবে তারা? খালেদা জিয়া কারাগারে গিয়ে তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক হয়েছেন। তাই তার মুক্তি আমি হাসিনার কাছে চাই না। খালেদা জিয়াকে বন্দি করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে বন্দি করা হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বন্দি রাখতে পারবে না। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি একজন ডাক্তার ও মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে আমি এখানে কেন? এখানে আসার কারণ হল- সরকারের চোখে ছানি পড়েছে। তাদের উচ্চ রক্তচাপ শুরু হয়েছে। এই সরকার মাদকের নাম করে সাড়ে ৪শ জনকে হত্যা করেছে। এমন একটা অবস্থায় কিছুদিন আগে ১৬/১৮ বছরের কিশোর-কিশোরীরা রাস্তায় নেমে এসে বলেছে রাষ্ট্রের মেরামত প্রয়োজন। সে ছবি তোলার জন্য আলোকচিত্রী শহীদুল আলম কারাগারে। এখন ঐক্যফ্রন্টের করণীয় নির্ধারন করতে হবে। নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা পহেলা নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বলেছি বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। অর্থাৎ শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন নয়। এরপর সংসদ ভেঙে দিতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এ নির্বাচন কমিশন পুন:র্গঠন করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে। গায়েবি মামলা বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার করা বন্ধ করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দাকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি দেশের জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এর পেছনে ঐক্যবদ্ধ। আমরা সংলাপে গিয়ে কোন সমাধান পাইনি। সেই সংলাপ কোন কাজের সংলাপ হয়নি। সংলাপে আমাদের কোন ফাঁদে ফেলা যাবে না, ধোঁকা দেয়া যাবে না। আগামী দিনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সমাধান দেন, তা না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায় করা হবে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ১০ বছর এই সরকার আমাদের শাসন করেছে। উন্নয়নের কথা বলে দুর্নীতির অনেক উন্নয়ন করেছে। এই সরকারের কোন জবাবদিহিতা ছিল না। সেজন্য লাগামহীনভাবে দুর্নীতি করেছে। এই কারণে তারা সরকার থাকতে চায়, নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু এবার সেটা সম্ভব হবে না। দেশের চলমান সঙ্কট নিরসনের জন্য আমরা অনেক ধৈর্য্য ধরেছি। সংঘাত বাদ দিয়ে সংলাপের পথ বেছে নিয়েছি। আমরা আশা করেছিলাম সমঝোতার মাধ্যমে সঙ্কটের সমাধান হবে। সেই সংলাপে তারা সাড়া দিয়েছেন, কিন্তু এখনো কোন কিছু পাই নাই। এই সঙ্কট সমঝোতার মাধ্যমে না হলে মাঠে নামা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকবে না। নেতাকর্মীরা যদি রাস্তায় নামে তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সরকারের পতন হবে। সেই দিনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সংলাপকে পরস্পরবিরোধী উল্লেখ করে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, একদিকে সংলাপ অন্যদিকে গণগ্রেফতার, নির্যাতন, আবার তফসিল ঘোষণা এই পরস্পর বিরোধী অবস্থান থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। হয় সমঝোতা করবেন, সংলাপ করবেন গ্রেফতার করবেন না এবং তফসিল ঘোষণা করবেন না। যদি সত্যিকার আন্তরিক হন তাহলে তার প্রতিফলন হবে। আর যদি তা না করেন, সংলাপের নামে প্রহসন, তামাশা এবং মানুষের সাথে প্রতারণা করার ফন্দি করে থাকেন তাহলে এগুলো বাদ দিতে হবে। নাহলে মানুষ আপনাদের রুখে দাঁড়াবে।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ’৫৪ যুক্তফ্রন্ট গঠনের ৬৪ বছর পর আমরা একই কারণে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি। গণতন্ত্র, আইনের শাসন সুনিশ্চিত করতে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। প্যারোলের কথা হচ্ছে, প্যারোল কেন? নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। খালেদা জিয়াসহ সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। তাদের মুক্তি না দিলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না। নির্বাচন কমিশন পুনগর্ঠন করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ সদস্যরা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচন করবে আর আমরা এই অবস্থায় নির্বাচন করবো তা হবে না। মির্জা আব্বাস বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার পুলিশকে ব্যবহার করছে। অভিযানের নামে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে, ঘরে থাকতে দিচ্ছে না। কিন্তু তারপরও কোন কাজ হচ্ছে না। অত্যাচার, অনাচার, খুন, চুড়ি, ডাকাতি সবকিছুই পূর্ণ করেছে সরকার। ষোল কলা পূর্ণ হয়েছে এখন এদের থামাতে হবে। এই খুন, দখল, লুটতরাজ বন্ধ করেন, রাতের অন্ধকারে বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে জুলম-অত্যাচার করলে জনগণ মেনে নেবে না। প্রলয় আসছে চোখ বন্ধ করে রাখলে মনে করবেন না প্রলয় থেমে যাবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সময় আসছে আপনাদের কবরে যেতে হবে প্যারোলে। উনি প্রচার করেন খালেদা জিয়া যদি প্যারোলে মুক্তি চান, তাহলে তিনি তার প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন। ওবায়দুল কাদের সাহেব বেগম খালেদা জিয়াকে অনুকম্পা করে এমন কোনো মায়ের সন্তান এই বাংলাদেশ জন্মগ্রহণ করেনি। খালেদা জিয়া মুক্ত হবে আইনি প্রক্রিয়ায়। খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের মা, আপসহীন নেত্রী। তাকে প্যারোলে মুক্তি নিতে হবে? সময় আসছে আপনাদের কবরে যেতে হবে প্যারোলে। বিএনপি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেখেন এই মঞ্চে যারা আছেন তারা সবাই রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। তারা এ দেশ স্বাধীন করেছেন। এখানে কোনো প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা নেই। আপনার তোফায়েল সাহেব বলেছেন, জিয়াউর রহমানের নাম শুনেননি। কারণ তিনি তো প্রবাসে ছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান রণাঙ্গনে ছিলেন। এখানে একজন মুক্তিযোদ্ধাও বলবেন না জিয়াউর রহমানের নাম শোনেননি। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা শোনেননি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার দল বিএনপি। একাত্তরের যুদ্ধ হয়েছিল গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য। সেদিন যারা বিরোধিতা করেছে তাদের আপনারা স্বাধীনতাবিরোধী বলেন, আমরাও বলি। আজ যারা গণতন্ত্রের বিরোধিতা করে তারাও স্বাধীনতাবিরোধী। এই মঞ্চের সবাই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, সবাই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। ৭ দফা দাবি পূরণ না হলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন নয়। আমরা আমাদের দাবি আদায় করবো। কারও কাছে ভিক্ষা নয়। গণফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। এক ভয়াবহ স্বৈরাচারী শাসন চলছে। বলা যায় দেশে এখন হিরক রাজার শাসন চলছে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। হিরক রাজার সময়ের মতো স্লোগান দিতে হবে, দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, গণফোরামের মোসতাক আহমেদ ও জেএসডির স্বপনের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, নাগরিক ঐক্যের এস এম আকরাম হোসেন, কামাল হোসেন পাটোয়ারি, বিকল্প ধারার অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন ব্যাপারী, বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, আমান উল্লাহ আমান, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, জেএসডির আব্দুল মালেক রতন, বেগম তানিয়া রব, এম এ গোফরান, খেলাফত মজলিসের ড. আহমদ আব্দুল কাদের, এলডিপির ড. রেদোয়ান আহমেদ, ইসলামি ঐক্যজোটের এম এ রকিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমি প্রমূখ। এছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, ঐক্যফ্রন্ট নেতা গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ঐক্যফ্রন্ট নেতা আ ব ম মোস্তফা আমিন, আবু সৈয়দ, বিএনপির ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, এড. আহমেদ আজম খান, আবুল খায়ের ভূইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, শরাফত আলী সপু, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, তাইফুল ইসলাম টিপু, ২০ দলের নেতাদের মধ্যে লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফি, মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে ন্যাপ নেত্রী রিতা রহমান, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিদ, রফিকুল ইসলাম পথিক, মিলু চৌধুরী, হাবিবুর রহমান, আ ফ ম শফিউল্লাহ প্রমূখ।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
মোল্লা হাসান ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৪:৪৬ এএম says : 0
ইনশাআল্লাহ
Total Reply(0)
সাব্বির ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৪:৫৩ এএম says : 0
আমরা সাধারণ জনগণও এটাই চাই
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:১৫ এএম says : 0
জাতি যখন জাগিয়াছেন, পাক হানাদার তখন ভাগিয়াছে।
Total Reply(0)
Abidur ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:৪০ এএম says : 0
kar odena vote kamaler odne vote hole ..................
Total Reply(0)
Abu talib ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৮ পিএম says : 0
Yes
Total Reply(0)
পাবেল ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ২:০১ পিএম says : 0
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি দেশের জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
Total Reply(0)
জাহিদ ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ২:০২ পিএম says : 0
আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, সাত দফা সফল করতে চাই।
Total Reply(0)
মারিয়া ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ২:০৪ পিএম says : 0
ক্ষমতার মালিক জনগণ যখন মহল্লায় মহল্লায় দাঁড়িয়ে যাবে তখন সরকার পালানোর পথ পাবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে পথে নামলে বিজয় অনিবার্য।
Total Reply(0)
চঞ্চল মাহমুদ ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ২:০৪ পিএম says : 0
বেগম জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি দিতে হবে। আইন সবার জন্য সমান। সরকারি দলের জন্য এক আর বিরোধী দলের জন্য অন্য আইন হতে পারে না। স্বাধীন বাংলাদেশে এটা চলতে পারে না। অনির্বাচিত সরকার এটা করতে পারে না। কাউকে বেআইনীভাবে গ্রেফতার করা অপরাধ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন