রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সারাদেশে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস পালন করেছে বিএনপি। দিবসটি উপলক্ষে দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। গতকাল (বুধবার) সকাল ১০টার দিকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ নেতাকর্মীরা শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তারা সেখানে মোনাজাতেও অংশ নেন। এসময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মোহাম্মদ শাহজাহান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, দেওয়ান সালাহউদ্দিন, আফরোজা আব্বাস, নাজিম উদ্দিন আলম, কাজী আবুল বাশারসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার যদি সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রাখতে চায়, একেই সঙ্গে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, জনগণের অধিকারকে ফিরিয়ে দিতে চায়, তাহলে নিশ্চয়ই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি নিয়ে একটি সুচিন্তিত মতামত দিবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এদিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস পালনের অংশ হিসেবে সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে বিশেষ পোস্টার।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ঘটনা এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চারনেতা হত্যাকান্ডের ঘটনার ধারাবাহিকতায় ওই দিনই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ তার অনুসারী সেনা সদস্যদের নিয়ে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করেন। আত্মস্বীকৃত পদোন্নতি নিয়ে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, মেজর জেনারেলের ব্যাজ ধারণ এবং সেনাপ্রধানের পদ দখল করেন। ৬ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ বঙ্গভবনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদকে গ্রেফতার করেন। কথিত মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ মন্ত্রিসভা বাতিল ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দেন। একই দিনে তিনি প্রধান বিচারপতি আবু সা’দাত মোহাম্মদ সায়েমকে দেশের প্রেসিডেন্টের পদে এনে বসান। এভাবে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা ও ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কেটে যায় চারদিন। এক পর্যায়ে ৬ নভেম্বর গভীর রাতে সেনাবাহিনীর সাধারণ সিপাহীগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সেই অভ্যুত্থানে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন আপামর জনতা রাজপথে নেমে আসেন। সিপাহী-জনতার মিলিত সেই বিপ্লবে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। পাল্টা অভ্যুত্থান ঠেকাতে গিয়ে প্রাণ হারান খালেদ মোশাররফ ও তার কতিপয় অনুসারী। পরদিন ৭ নভেম্বর সর্বস্তরের সৈনিক ও জনতা সম্মিলিতভাবে নেমে আসে ঢাকার রাস্তায়, ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। অভূতপূর্ব এক সংহতির নজির সৃষ্টি হয় দেশের রাজনীতিতে। তারপর থেকেই ৭ নভেম্বর পালিত হচ্ছে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের জোটশরিক জাসদ এই দিনটিকে ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান’ দিবস হিসেবে পালন করে। আওয়ামী লীগ পালন করে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানানোর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে দলীয় কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন, খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল, বিপ্লব উদ্যানে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভা করে বিএনপি। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা দোস্ত বিল্ডিংস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, জাতীয় জীবনে ৭ নভেম্বরের গুরুত্ব অপরিসীম। এ দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দিনটিতে আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে নগরীর ২নং গেইটস্থ বিপ্লব বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় বিএনপি নেতা আবদুল গাফফার চৌধুরী, নাজমুল মোস্তফা আমিন, লোকমান আহমদ, রাসেল ইকবাল মিয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, ফজলুল কাদের, ছৈয়দুল আলম চৌধুরী, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, শওকত ওসমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে বিপ্লব উদ্যানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় নগর বিএনপির উপদেষ্টা জাহিদুল করিচ কচি, ঝন্টু বড়–য়া, ইদ্রিস আলী, মহিলা দল নেত্রী মনোয়ারা বেগম মনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে সকালে নগরীর ভূবনমোহন পার্কে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, পায়রা এবং বেলুন উড়িয়ে দিনের কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র ও এমপি জননেতা মিজানুর রহামন মিনু। মিনু বলেন, রাজশাহী থেকে সকল আন্দোলনের সুচনা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু স্বাধণীনতা যুদ্ধ পর্য়ন্ত এই রাজশাহী থেকে সুত্রপাত হয়। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এই আন্দোলনে সকল নেতাকর্মীদের রাজপাথে থাকার আহবান জানান।
খুলনা ব্যুরো জানায়, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গতকাল খুলনা মহানগর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা দিনটিকে দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার দিন উল্লেখ করে বলেছেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে স্বাধীনতার মহান ঘোষক রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউর রহমান বীর উত্তম দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়ন ও উৎপাদনে শীর্ষে পৌছে দিয়েছিলেন।
আলোচনা সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয়। মীর কায়সেদ আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নগর বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপুর পরিচালনায় কর্মসুচিতে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন সাবেক এমপি কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, প্রমুখ। দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন হাফেজ হাফিজুল ইসলাম।
ফুলপুর (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, তারাকান্দায় ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি’র উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও তারাকান্দা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদার, তারাকান্দা উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ- সভাপতি আঃ হেকিম মন্ডল, সাধারন সম্পাদক আব্দুস ছালাম তালুকদার, প্রমুখ।
গোবিন্দগঞ্জ(গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপি আয়োজনে বুধবার বিকালে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজানুল হাবীব রফিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপির সভাপতি জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফারুক আহম্মে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন