গত ৬ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মহাসমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্য, শৃঙ্খলা, দৃঢ়তা, উদারতা, বিচক্ষণতা রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহলকে বিস্মিত করেছে। এই সামবেশে এমন কিছু ব্যক্তি ছিলেন যারা কিছুদিন আগেও বিএনপি রাজনীতির কঠোর সমালোচক ছিলেন, বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন।
অথচ এই সমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের অত্যন্ত সহজ ও আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের অনেকের বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নাম শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীরা তা নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করেনি। এমনকি সরকারী গণমাধ্যমগুলোতে এ বিষয়টি নিয়ে নানাভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি, সন্দেহ, দুরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করা হলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা সেই ফাঁদে পা দেয়নি। বরং ড. কামাল হোসেন, আসম আবদুর রব, কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ ঐক্যফন্টের নেতৃবৃন্দ যখন সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করছিল তখন তারা শ্লোগানে শ্লোগানে সমর্থন করে তাদের উৎসাহ দিয়েছে। বিশেষ করে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মুখে বেগম খালেদা জিয়ার নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে বিএনপির নেতাকর্মীরা গগণ বিদারী শ্লোগানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রকম্পিত করে তুলছিল। তাদের সেই গগণ বিদারী শ্লোগান, চিৎকার শুনে মনে হচ্ছিল তারা যেন সমাবেশের পাশেই পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বরাভয় দিতে চেষ্টা করেছে।
এমনিতেই বিএনপির সমাবেশ লাইভ প্রচারের ক্ষেত্রে সরকারী অলিখিত নানা বিধি নিষেধ থাকে। অন্যদিকে ফজর ওয়াক্ত থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে পুলিশ কড়া চেকপোস্ট বসায়, রাজধানীমুখী গাড়িগুলো অনেক স্থানেই প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়েছে। রাজধানীর ভেতরেও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে যানজট সৃষ্টি করা হয়েছে। গত ১ মাসে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৪হাজার ১০৮টি গায়েবি মামলায় ৩ লাখ ৫৮ হাজার ২৫জনকে আসামী করা হয়েছে। এরমধ্যে এজহারভুক্ত ৮৪ হাজার ৭ শত ৮৩জন এবং অজ্ঞাত ২ লাখ ৭৩ হাজার ২৪২জন। এদের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ৫ সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের।
৬ নভেম্বর গায়েবি এসব মামলায় বিভিন্ন স্থানে ও সমাবেশস্থলের আশপাশ থেকে অনেক বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সমাবেশে বিএনপি নেতারাই অভিযোগ করেছে। এই ঝুঁকি নিয়েও লাখ লাখ বিএনপি নেতাকর্মী সমাবেশে এসেছে। সমাবেশ সহরোওয়ার্দী উদ্যানের সীমানা ছাড়িয়ে শাহাবাগ, টিএসসি, মৎসভবন এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এই উপস্থিতির ৯৮ শতাংশই বিএনপি নেতাকর্মী। সমাবেশে উপস্থিত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বিএনপি নেতাকর্মীদের এই বিপুল উপস্থিতিতে অভিভূত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে এই সমাবেশ দেখে যাবার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বুধবার সংলাপের শুরুতে ৬ তারিখে সফল সমাবেশ করায় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের প্রশংসা করেন।
৬ নভেম্বরের এই সমাবেশ নানা কারণে বাংলাদেশের রাজনীতি ও আগামী রাজনীতির পথপরিক্রমায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের মতে, ‘খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপি নির্বাচন যাবে না’- লাখ লাখ নেতাদের স্বাভাবিক আবেগকে উস্কে দিয়ে বিএনপিকে বাইরে রেখে বা বিএনপি ভেঙে আংশিক বিএনপি নেতাদের নিয়ে সরকারের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পরিকল্পনা কিম্বা ঐক্যফ্রন্ট খালেদা জিয়া, তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে মাইনাস টু থিয়োরির অংশ- বলে প্রচার করে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির সকল পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। এই সমাবেশ প্রমাণ করেছে, বিএনপি নেতাকর্মীরা ঐক্যফ্রন্ট ও এর নেতৃবৃন্দকে গ্রহণ করেছে। তারা এই ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চায়, তারেক রহামনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চায়। এই ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমেই আজ বিএনপি নেতাকর্মীরা বাংলাদেশে দুঃশাসনের অবসান ও গণতন্ত্রে মুক্তি নিশ্চিত করতে চায়। ঐক্যফ্রন্টের পেছনে বিএনপি নেতাকর্মীদের এই যুথবদ্ধতা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ও ভোটারদেরও ঐক্যবদ্ধ করতে আস্থা স্থাপন করতে সহায়তা করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন