রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মিছিল- স্লোগানে মুখর নয়াপল্টন

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। হামলা, মামলা, গ্রেফতারের কারণে এলাকা ছাড়া লাখ লাখ নেতাকর্মী। তারপরও দল ও শীর্ষ নেতাদের ডাকে সভা-সমাবেশে আসতেন গ্রেফতার আতঙ্ক মাথায় রেখে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অংশ নিতেন ঝটিকা মিছিলসহ অন্যান্য কর্মসূচিতে। গ্রেফতার আতঙ্ক না থাকলে, একটু সুযোগ পেলে সেই নেতাকর্মীরাই কি হয় তা দেখা গেছে গত দুই দিনেই। রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা ও মনোনয়ন ফরম বিতরণের সময় নির্ধারণের পরপরই যেন বদলে গেছে সব চিত্রই। খাঁচার ভেতর বন্দি থাকার পর ছাড়া পেলে যেমনটি হয় একই রকম দৃশ্য দেখা গেছে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকায়। দলে দলে নেতাকর্মীরা ছুটে আসছেন নয়াপল্টনে। ব্যান্ড পার্টি, হাতি, মোটার সাইকেল শোভাযাত্রা, গাড়িবহর, মিছিলসহ একেক নেতা আসছেন একেকভাবে। সাথে থাকছেন শত শত নেতাকর্মী-সমর্থক। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের সাথে সাথে শ্লোগান দিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের নামে। মুক্তি চাচ্ছেন খালেদা জিয়ার। দলে দলে ছুটে আসা লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে নয়াপল্টন সড়ক ও আশপাশের এলাকা হয়ে ওঠে জনসমুদ্র। মানুষের ভিড় নয়াপল্টন-ফকিরাপুল-নাইটিঙ্গেল মোড় ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে এর আশাপাশে। তখনও কেন্দ্রীয় কার্যালয়মুখী মিছিল নিয়ে ছুটছেন রাজধানী ও সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীরা। যেন সব সড়ক গতকাল মিশেছিল নয়াপল্টনের সাথে।
মনোনয়ন ফরম বিতরণের প্রথম দিনে গত সোমবার নয়াপল্টন এলাকায় দীর্ঘদিন পর দেখা যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের স্বত:স্ফূর্ত উপস্থিতি। সেটি যেন ছিল প্রাথমিক প্রস্তুতি। গতকাল মঙ্গলবার সেই নয়াপল্টনেই দেখা গেল বিএনপি নেতাকর্মীদের বাঁধভাঙা জোয়ার। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ি সকাল ১০টা থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণের সময় নির্ধারণ করা হলেও এর দুই ঘণ্টা আগেই সকাল ৮টা থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ভিড় করতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। হাতে হাতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত পোস্টার। মাথায় বাঁধা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কাপড়। কণ্ঠে গগণ বিদারী শ্লোগান। রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের সাথে আসা নেতাকর্মীরা গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে তুলছেন গোটা এলাকা। যেন প্রতিযোগিতা হচ্ছে কোন প্রার্থীর চেয়ে কার শ্লোগান বেশি উচ্চকিত হয়।
ছাত্রদল নেতা মুক্তার হোসেন বলেন, ভয়-ভীতি, গ্রেফতার আতঙ্ক না থাকায় এখন নির্বিঘ্নে নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে আসছেন। ন্যূনতম সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে বিএনপি নেতাকর্মী ও দেশের সাধারণ মানুষ ধানের শীষের পক্ষে রায় দেবে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির প্রতি সমর্থন জানাবে।
প্রথম দিন দেরি হলেও দ্বিতীয় দিনে গতকাল সকাল ১০টায় মনোনয়ন বিতরণ শুরু করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ততক্ষণে মনোনয়ন ফরম কিনতে আসা নেতাকর্মীদের ভিড় দলীয় কার্যালয়, কার্যালয়ের সামনে থেকে ছাড়িয়ে যায় একদিকে ফকিরাপুল অন্যদিকে নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে বিজয়নগর-কাকরাইল পর্যন্ত। তখনো মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয় মুখী হাজার হাজার নেতাকর্মীরা। লাখো নেতাকর্মীরা ভিড়ে গোটা এলাকা হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। ফকিরাপুল-কাকরাইল সড়কের কোথাও ছিল না কোন তিল ধারণের ঠাঁই। সড়কের এপাশ থেকে ওপাশে যেতে হলেও বেগ পেতে হয়েছে যথেষ্ট। আর কেন্দ্রীয় কার্যালয় পার হতে চাওয়া ছিল অকল্পনীয়। আশপাশের অলিগলিতেও একই অবস্থা। নেতারা কর্মী সমর্থকদের বিশাল বহর নিয়ে মনোনয়ন ফরম তুলতে আসেন নয়াপল্টনে। অনেকে ব্যান্ড পার্টি, হাতি, মোটর সাইকেল বহর নিয়েও হাজির হন দলীয় কার্যালয়ে। মনোনয়ন ফরম তোলার পর পল্টন ও আশপাশের এলাকা দিয়ে মিছিল করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত দেখা যায় একই চিত্র। দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু। বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-৬ আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিসাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার। শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি বেগম জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে জেল খানায় রাখা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন সর্ব ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের অধিনে কিছু আছে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এরপরেও আমরা নির্বাচনে গেছি একটি ভালো পরিবেশ আসবে বলে প্রত্যাশা করি। আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবো নির্বাচনে থাকা কিন্তু সরকার যদি সেই পরিবেশ তৈরি করতে না পারে বা কোনো কারণে যদি নির্বাচন পন্ড হয়ে যায় তাহলে তার দায় ভার সরকারের। কাজী আবুল বাশার বলেন, আমরা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয়া সম্ভব হবে কিনা সেটা নির্ভর করবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আচরণ এবং আমাদের দলের হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তের উপর। ঢাকা-১৩ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনতে আসা বিএনপির সহ-শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এবং মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে শোডাউন দিয়েছেন। হেলেন জেরিন খান গণমাধ্যমকে বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে। আমি দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছি। আশা করি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে বিবেচনা করবেন।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
শাহাদাত হোসেন ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২২ এএম says : 1
স্বৈরাচারের পতন এখন সময়ের দাবি মাএ।।।
Total Reply(0)
Tawhid Araf Tazim ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২৩ এএম says : 1
কেউ মানুক আর না মানুক একজন নিরপেক্ষ মানুষ হিসেবেই বলছি বি এন পি বর্তমানে স্মরণকালের অন্যতম জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে প্রপারভাবে ভোটে জয়লাভ করা প্রায় অসম্ভব ।
Total Reply(0)
Noor Ul Islam ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২৩ এএম says : 1
এই জনসমুদ্র যেদিকে ছুটবে সেদিকেই পরিবর্তন আসতে বাধ্য।তবে,এদেরকে দিকনির্দেশনা দেয়ার মত নেতার বড় অভাব বিএনপিতে।
Total Reply(0)
Mohammad Muhib ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২৪ এএম says : 1
সৈরাচার নিপাত যাক, গনতন্ত্র মুক্তি পাক, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
Total Reply(0)
Md Nazmul Hasan ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২৪ এএম says : 1
জিয়ার সৈনিক,, এক হও লড়াই করো
Total Reply(0)
Rashed Ahmed Suhag ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২৫ এএম says : 1
সব জিয়ার সৈনিক
Total Reply(0)
Sadukur Rahaman Somon ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:২০ এএম says : 0
We want free and fair election
Total Reply(0)
Abdullah Ali ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:২৭ এএম says : 0
মানুষকে ক্ষমতার জোরে বেশি দিন দাবিয়ে রাখা যায়না , এটাই তার প্রমান।
Total Reply(0)
জয়নুল আবেদীন ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:৪৭ এএম says : 0
এই গণজোয়ার যদি নির্বাচনের সময় দেখাতে পারেন তাহলে কাজে আসবে না হলে কোন লাভ নেই।
Total Reply(0)
পাবেল ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:৫১ এএম says : 0
দলে দলে ছুটে আসা লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে নয়াপল্টন সড়ক ও আশপাশের এলাকা হয়ে ওঠে জনসমুদ্র। মানুষের ভিড় নয়াপল্টন-ফকিরাপুল-নাইটিঙ্গেল মোড় ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে এর আশাপাশে। ............... কিন্তু আন্দোলনের সময় আর কাউকে পাওয়া যায় না।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:৩৩ পিএম says : 0
মনে হয় না দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে! ভোটের ক্ষেত্রে জনগণ আরো সচেতন হোক...
Total Reply(0)
Rayhan Rishad ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৫:০৮ পিএম says : 0
আমার ঘরে বসে থাকা চুড়ী পরে থাকার সামিল। আমি তরুণ, ময়দান আমার। গঠনতন্ত্র আমার অধিকার।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন