নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার নির্দেশদাতা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, নয়াপল্টনে শোডাউন আচরণবিধির লঙ্ঘন নয়, তাহলে তফশীল ঘোষণার পর কোন সাহসে পুলিশ বিএনপি’র উচ্ছ্বাসমুখর উপস্থিত নেতাকর্মীদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালিয়েছে? এটা কার নির্দেশে এই পৈশাচিক আক্রমণ চালানো হয়েছে? মানুষ বিশ্বাস করে পুলিশের গুলিতে ক্ষতবিক্ষত করার নির্দেশদাতা ওবায়দুল কাদের। একতরফা নির্বাচনে জয়লাভ করায়ত্ত¡ করতে বিরোধী দলশূণ্য করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের দিয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সহিংসতা ও নাশকতা করা হয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, প্রথমেই পুলিশ বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মিছিলে গাড়ী উঠিয়ে দিয়ে ঘটনার সূত্রপাত করে, এই গাড়ীচাপায় অন্তত: ২০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পুলিশ কিভাবে জনগণের ওপর গাড়ী উঠিয়ে দেয় সেটি নির্বাচন কমিশনের নিকট জানতে চাই। এছাড়াও সুপরিকল্পিতভাবে হেলমেটধারীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে। এই হেলমেটধারী কারা তা জনগণ জানে। যারা আগুন দিয়েছে তারা পুলিশের প্রোটেকশনে এই নাশকতার কাজ করেছে, এরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের ঢাকা মহানগর নেতা, যার সুস্পষ্ট প্রমাণ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশের গাড়িতে ম্যাচের কাঠি নিয়ে আগুন জ্বাালাচ্ছে যে ছেলে, সে গুলশান থানা ছাত্রলীগের নেতা। নাম তার অপু।
নির্বাচন কমিশন নিশ্চুপ কেন প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই নেতা বলেন, গণভবনে আওয়ামী লীগের প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রার্থী সাক্ষাৎকার ও দলীয় সভার আয়োজন করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। অথচ এরকম একটি রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় ও সরকারী অর্থায়নে সম্পূর্ণরূপে নিয়মবহির্ভূত দলীয় কার্যক্রমের বিষয়ে নিশ্চুপ নির্বাচন কমিশন। এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার টু শব্দটিও করেন না। গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নির্বাচনী আচরণবিধির ১৪ (২) ধারার সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। ঐ ধারানুযায়ী রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন না। শেখ হাসিনার জন্য কোন আইনই প্রযোজ্য নয়। তাঁর যেকোন কথাই আইনের সমতুল্য বলে তিনি মনে করেন। গণভবনের আশেপাশের রাস্তায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভিড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, সেখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আক্রমণ চালায়নি কেন? শাসকগোষ্ঠীর চোখের ইঙ্গিতেই পুলিশ নড়াচড়া করে। ভোটারশূণ্য করে রক্তাক্ত পথেই তারা নির্বাচন পার করতে চায়।
নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর এখনও নির্বাচন কমিশন থেকে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়ার কোনো নির্দেশনা না আসায় উদ্বেগ জানান রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গত দশ বছরে আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের হাতে প্রচুর পরিমাণ বৈধ-অবৈধ অস্ত্র দেয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন সময়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্র জমা দান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী হলেও নির্বাচন কমিশন নির্বিকার ভ‚মিকা পালন করছে। এতে প্রমাণিত হয়-নির্বাচন কমিশন বিশেষ দলের পক্ষেই নির্বাচনী মাঠ সমতল করছে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশনের তৎপরতা আইনানুগ নয়। কমিশন স্ববিরোধী বক্তব্য রাখছে। এখনও মামলা, গ্রেফতার, জেলগেইট থেকে পুনরায় গ্রেফতার ও বাড়ীতে বাড়ীতে পুলিশী তল্লাশীর নামে হয়রানী করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। সংবাদ সম্মেলনে খুলনা, কক্সবাজার, বগুড়া, বরগুনা, পাবনাসহ বিভিন্ন জেলায় গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের তালিকা তুলে ধরে তাদের মুক্তির দাবি জানান রিজভী। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ প্রমূখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন